
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) একটি মাছ বাজারের টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করেছে মাত্র। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। আজ (২৯ এপ্রিল) থেকে ফরম বিক্রি শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু এর আগেই চট্টগ্রামের বৃহৎ এই মাছ বাজারটি (চাক্তাই নতুন ফিশারি ঘাট) দখলে নিয়েছেন বিএনপির দুই নেতা। মাছ বাজারের দুই পাশে ঝুলিয়ে দিয়েছেন তাদের ছবি সংবলিত সাইনবোর্ড। বিএনপির আলোচিত এই দুই নেতা হচ্ছেন- চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সধারণ সম্পাদক ইয়াছিন চৌধুরী আছু ও মহানগর বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ নবাব খান। শুধু সাইনবোর্ড লাগিয়ে কাজ শেষ করেননি। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে চসিকের একটি স্মারক নম্বরও। তারা যে সাইনবোর্ড ঝুলিয়েছেন সেখানে দুজনের ছবি ছাড়াও সবার ওপরে দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের ছবিও।
মাছবাজারে সাইনবোর্ড টানানো দুই বিএনপি নেতা ডা. শাহাদাতের অনুসারী বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। মাছবাজার দখলের এই ঘটনায় ঘাটের সাধারণ মৎস্যজীবীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। দখল-বেদখলে জীবিকা হারানোর আশঙ্কা করছেন অনেকেই। তবে আলোচ্য দুই বিএনপি নেতা দাবি করেছেন মেয়রের মৌখিক নির্দেশেই তারা সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে টাকা আদায় শুরু করেছেন।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ এপ্রিল দুইটি দৈনিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন তাদের আওতাধীন পাঁচটি ফেরি ও ফিশারি ঘাট বাংলা ১৪৩২ সনের অবশিষ্ট সময়ের জন্য ইজারা দিতে দরপত্র আহ্বান করে। ফেরি ঘাটগুলো হচ্ছে-সল্টগোলা ঘাট, ফিশারি ঘাট, চাক্তাই খালের পাশে পান ঘাট থেকে গইজ্জের ঘাট, পতেঙ্গা চাইনিজ ঘাট ও চাক্তাই লবণ ঘাট। এসব ফেরি ঘাটের ফরম সংগ্রহ করার জন্য তারিখ নির্ধারণ করা হয় ২৯ এপ্রিল (আজ মঙ্গলবার)। দরপত্র দাখিলের তারিখ নির্ধারণ করা হয় ৩০ এপ্রিল। সরেজমিন দেখা গেছে, একটি সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছে ফিশারি প্রবেশের মুখে এবং আরেকটি টাঙানো হয়েছে ফিশারি ঘাটের পেছনের অংশে যেখানে মাছের ট্রলার নোঙর করে। চট্টগ্রামের বড় মাছ বাজার এটি। সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে-চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন কর্তৃক ইজারাকৃত। এস্টেট শাখা রাজস্ব বিভাগ। স্মারক নম্বর : ৪৬.১১.১৬০০.০০৩. ১৮.০০২.২৫। চাক্তাই ঘাট, (নতুন মাছ বাজার) চাক্তাই, বাকলিয়া, চট্টগ্রাম। সাইনবোর্ডের এক পাশে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সধারণ সম্পাদক ইয়াছিন চৌধুরী আছু ও অপরপাশে মহানগর বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ নবাব খানের ছবি রয়েছে। একাধিক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন- পান দোকান থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে গণহারে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে ফেরিঘাটের ইজারা নিয়ে নানা অনিয়ম চলে আসছে। গত বছরও নির্দিষ্ট সময়ে টেন্ডার দিতে পারেনি ঘাটগুলো। প্রতিবছর চৈত্রসংক্রান্তির আগেই চসিক মালিকানাধীন ফেরিঘাট পত্রিকার মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এক বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়। গত বছরও রাজস্ব বিভাগ ইজারা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করেছিল। কিন্তু ২০২৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট বিভাগের রিট পিটিশন ১৫১৬৩/২৩ নম্বর মামলার আদেশ মোতাবেক ইজারা কার্যক্রম স্থগিত করে চসিক কর্তৃপক্ষ। তবে অভিযোগ উঠেছে, এটি চসিকেরই কৌশল। অভিযোগকারীরা বলছেন, মামলাটি হয়েছে চসিকের রাজস্ব বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং পুরোনো ইজারাদারের আঁতাতের মাধ্যমে। ইজারা না দিয়ে খাসকালেকশনে রাজস্ব আদায় করা হলে চসিকের অগোচরে কোটি টাকার রাজস্ব হাতিয়ে নিতে পারবে।
সাবেক মহানগর বিএনপির উপদেষ্টা ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ নবাব খান যুগান্তরকে বলেন, ছাত্র-আন্দোলনে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এর ১৫-২০ দিন পর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আমাকে আর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর বিএনপির যুগ্ম সধারণ সম্পাদক ইয়াছিন চৌধুরী আছুকে টাকা আদায়ের দায়িত্ব দেন। আমরা ঠিকাদার নই। সাইনবোর্ডে ঠিকাদার উল্লেখ করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ঠিকাদার উল্লেখ করা আমাদের ভুল হয়েছে।’
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতাধীন পাঁচটি ফেরিঘাটে বাংলা ১৪৩২ সনের অবশিষ্ট সময়ের জন্য দরপত্র আহ্বান করে। এসব ফেরিঘাটের ফরম সংগ্রহ করার জন্য তারিখ নির্ধারণ করা হয় ২৯ এপ্রিল (আজ মঙ্গলবার)। দরপত্র দাখিলের তারিখ নির্ধারণ করা হয় ৩০ এপ্রিল। টেন্ডার প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি। ঠিকাদার সেজে কেউ সাইনবোর্ড তোলার বিষয়টি আমার জানা নেই।