Image description
নিম্নস্তরে ক্ষোভের ধরন: ‘জুলাই আন্দোলনে যেসব পুলিশ সদস্য সহকর্মীদের জীবন । পুলিশের স্থাপনা ও সম্পদ রক্ষার চেষ্টা করেছেন, তারা পদকের জন্য বিবেচিত হননি’ ।

তিন দিনব্যাপী পুলিশ সপ্তাহ শুরু হচ্ছে আজ। পুলিশ সপ্তাহে নিয়মমাফিক পুলিশের বিগত বছরের কর্মকাণ্ডের ভালো-মন্দ দিক পর্যালোচনার বিষয়টি প্রাধান্য পাওয়ার কথা থাকলেও পদকের ভারে সেটি গৌণ হয়ে যায়।

এবার ৬২ জনকে বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল (বিপিএম) ও প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল (পিপিএম) পদক দেওয়া হবে। তবে পদক প্রদানের আগেই এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে। পদকের জন্য তালিকা তৈরিতে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী ধারাবাহিকতা বজায় রাখার অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। এতে পুলিশের ভেতরে কারও কারও মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তাদের মতে, ছাত্র-জনতার অন্দোলনের সময় যেসব পুলিশ সদস্য তাদের সহকর্মীদের জীবন এবং পুলিশের স্থাপনা ও সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে হতাহত হয়েছেন, তাদের কেউই পদকের জন্য বিবেচিত হননি।

অপরদিকে ৬-৭ আগস্ট যেসব কর্মকর্তা ভয়ে রাজারবাগে যাননি, তাদেরও পদক দেওয়া হয়েছে। রাজারবাগ থেকে যিনি পালিয়ে এসেছেন, তাকেও পদকের জন্য বিবেচনা করা হয়েছে। বন্যার সময় কুমিল্লায় ত্রাণ বিতরণকালে মঞ্চে উঠতে দেওয়া, রংপুরের সুধী সমাবেশে গালাগাল করা এবং ব্যর্থতার দায়ে যাদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, তারাও পাচ্ছেন পদক।

ব্রিটিশ আমলে (১৯৩২ সাল) চালু হওয়া পুলিশের বিপিএম ও পিপিএম পদক এখনো চালু আছে। ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের পদক দেওয়ার রীতির ব্যত্যয় শুরু হয় ২০১০ সাল থেকে। সাব-অর্ডিনেট অফিসারদের কাজকে নিজের কৃতিত্ব হিসাবে দেখিয়ে অনেক কর্মকর্তা এই পদক বাগিয়ে নেন। এবারও পদকের তালিকা তৈরিতে সেরকমই হচ্ছে বলে জানা গেছে। পদকের জন্য যে ৬২ জনকে বিবেচনা করা হয়েছে, তাদের মধ্যে ২১ জনই সুপিরিয়র কর্মকর্তা। ফ্যাসিবাদের দোসর হিসাবে অতীতে যারা শেখ হাসিনার কাছ থেকে পদক নিয়েছেন, তারা এবার প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকেও পদক নিতে যাচ্ছেন। বিরোধী দলকে দমন করে অতীতে আনেকই বিপিএম-পিপিএম পদক পান। বিএনপি নেতা জয়নুল আবদিন ফারুকের ওপর হামলার পুরস্কার হিসাবে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ পদক পেয়েছিলেন।

জানা যায়, ১৯৫২ থেকে শুরু করে ২০০৯ সাল পর্যন্ত অনেক আইজিপি পদে দায়িত্ব পালনকারীদের মধ্যে কেবল আশরাফুল হুদা ও আনোয়ারুল ইকবাল ছাড়া কোনো আইজিপি বিপিএম বা পিপিএম পদক নেননি। পাকিস্তান আমলেও সুপিরিয়র অফিসাররা এসব পদক নিতেন না। আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী হিসাবে তৎকালীন আইজপি হাসান মাহমুদ খন্দকার, একেএম শহিদুল হক, বেনজীর আহমেদসহ অনেক ঊর্ধ্বতন অফিসার এসব পদক নিয়েছেন। এই ধারাবাহিকতায় এবারও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পদক দেওয়া হচ্ছে। জানা যায়, এবার পদক দেওয়া হচ্ছে সাবেক আইজিপি ময়নুল হক, র‌্যাব মহাপরিচালক একেএম শহিদুর রহমান এবং সাবেক ডিএমপি কমিশনার মাইনুল হাসানসহ একাধিক অতিরিক্ত অইজিপিকেও। বাংলাদেশে বিপিএম বা পিপিএম পদকের জন্য লিখিত আবেদন করতে হয়। যদিও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এ ধরনের পদকের জন্য আবেদন করতে হয় না। যথাযথ কর্তৃপক্ষ নিজ উদ্যোগেই পদকপ্রাপ্তদের তালিকা তৈরি করে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৫ বছরে প্রায় দুই হাজার পুলিশ সদস্যকে বিপিএম ও পিপিএম পদক দেওয়া হয়। এর মধ্যে ২০২৪ সালে সর্বোচ্চ সংখ্যক পদক দেওয়া হয়। ওই বছরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভূমিকা রাখার পুরস্কারস্বরূপ ৪০০ পুলিশ সদস্যকে এ পদক দেওয়া হয়। এছাড়া ২০২৩ সালে ১১৫, ২০২১ সালে ১১৫, ২০২০ সালে ১১৮, ২০১৮ সালে ১৮২, ২০১৭ সালে ১৩২, ২০১৬ সালে ১০২, ২০১৫ সালে ৭৬, ২০১৪ সালে ১০৪ এবং ২০১৩ সালে ৬৭ জন পুলিশ সদস্যকে বিপিএম ও পিপিএম পদক দেওয়া হয়।

জানতে চাইলে পুলিশের আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, ‘আমরা সাধারণত আবেদনের ভিত্তিতেই পদক তালিকা তৈরি করি। তবে দুটি ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আছে। পুলিশের গুলশান বিভাগের একজন সদস্য ছুরিকাঘাতে আহত হয়েও ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করেছেন। সাহসিকতাপূর্ণ কাজের জন্য তাকে এবার পদক দেওয়া হচ্ছে।’