
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষ হয় গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর। এরপর থেকে শুরু হয়েছে গণনা, যা এখনো (শুক্রবার রাত ১১টা পর্যন্ত) চলছে।
ওএমআর মেশিন নিয়ে কয়েকটি প্যানেল আপত্তি তোলায় ভোট গণনা হচ্ছে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে। যেটিকে বলা হচ্ছে হাতে গণনা। প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনিরুজ্জামান সন্ধ্যার পর সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আজ (শুক্রবার) রাতেই গণনা শেষ হতে পারে। তবে সময় নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।
রাত নয়টার একটু আগে ২১টি হল সংসদের ভোট গণনা শেষে কেন্দ্রীয় সংসদের ভোট গণনা শুরু হয়েছে।
ভোট গণনায় এতো দীর্ঘ সময় লাগায় স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, ভোট কীভাবে গণনা হচ্ছে এবং কেন এত সময় লাগছে। প্রক্রিয়াটি বোঝার জন্য রাতে কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মৃধা মো. শিবলী নোমান ও জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন এর সঙ্গে।
জাকসু নির্বাচনের মোট ভোটার ১১ হাজার ৭৪৩ জন। এর মধ্যে ভোট পড়েছে ৬৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ। অর্থ্যাৎ, প্রায় ৭ হাজার ৯৪৭ জন ভোট দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় সংসদে মোট পদ ২৫টি, প্রার্থী ১৭৭ জন। বোঝার সুবিধার্থে শুধু কেন্দ্রীয় সংসদের ভোট গণনার পদ্ধতি দেখা যাক।
কেন্দ্রীয় সংসদে তিন পৃষ্ঠার ব্যালট পেপারে ২৫টি পদ ও প্রার্থীর নাম থাকে। প্রতিটি ব্যালট পেপার হাতে নিয়ে কর্মকর্তারা একটি নির্দিষ্ট পদের (যেমন-ভিপি, জিএস বা এজিএস) ভোট আলাদা করে ফেলেন।
টালির মাধ্যমে গণনা
এটিই গণনার মূল অংশ। প্রতিটি পদের জন্য আলাদা করে গণনা শুরু হয়। ধরা যাক, সহ-সভাপতি (ভিপি) পদের ভোট গণনা করা হচ্ছে। গণনাকারী একটি ব্যালট পেপার হাতে নিলেন এবং দেখলেন ‘ক’ নামের প্রার্থীকে ভোট দেওয়া হয়েছে। তখন তিনি ‘ক’ প্রার্থীর নামের পাশে একটি টালি চিহ্ন দেন। গণনাকারী পরের ব্যালটেও যদি দেখেন ‘ক’ নামের প্রার্থী ভোট পেয়েছেন, তাহলে নামের পাশে আরেকবার টালি চিহ্ন দেবেন। এভাবে চারটি সোজা দাগ (টালি চিহ্ন) হয়ে গেলে পঞ্চমটিতে একটি আড়াআড়ি দাগ টেনে দেন। তখন সেটি পঞ্চম ভোট হিসেবে ধরা হয়।
যেমন:
‘ক’ প্রার্থীর ভোট: |||| |||| |
এই টালির অর্থ হলো (৫+৫) + ১ = মোট ১১ ভোট।
এমন পদ্ধতিতে প্রতিটি প্রার্থীর জন্য ভোট গণনা করা হয়। গণনা শেষে প্রতিটি প্রার্থীর মোট টালির সংখ্যা যোগ করে মোট ভোট সংখ্যা বের করা হয়।
ফল ঘোষণা
এভাবে সবগুলো পদের ভোট আলাদাভাবে গণনা শেষ হলে, প্রতিটি পদের জন্য সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়। যিনি সবচেয়ে বেশি ভোট পান, তিনিই সেই পদের জন্য বিজয়ী হন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের মতে, এই পদ্ধতি স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে। কারণ প্রতিটি প্রার্থীর প্রতিনিধিরা সরাসরি এই গণনা পর্যবেক্ষণ করতে পারেন।
কেন সময় লাগছে
যে পদ্ধতিতে ভোট গণনা হচ্ছে সেটি খুবই সময়সাপেক্ষ। বিকেলে এই পদ্ধতিতে ভোট গণনা নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নওয়াব ফয়জুন্নেসা হল কেন্দ্রের রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক সুলতানা আক্তার। তিনি বলেন, হল সংসদে একটিমাত্র ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোট হচ্ছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সংসদের ব্যালট তিন পৃষ্ঠার। অর্থাৎ, প্রদত্ত ভোট যদি প্রায় ৮ হাজার হয়, তাহলে শুধু কেন্দ্রীয় সংসদে ২৪ হাজার কাউন্ট (গণনা) করতে হবে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে।
অধ্যাপক সুলতানা আক্তার বলেন, ‘তিন দিনেও তো এটা সম্ভব হবে না। এই পদ্ধতির আমরা পরিবর্তন চাই।’
লোকবল বৃদ্ধি
শুক্রবার সারাদিনেও ভোট গণনা শেষ না হওয়ায় নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করেন শিবির সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের জিএস প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম, বাগছাস সমর্থিত ‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আব্দুর রশিদ জিতু।
পরে নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনিরুজ্জামান বলেন, ‘ফল ঘোষণার সময় নির্দিষ্টভাবে বলা যাচ্ছে না। আজ (শুক্রবার) পুরো রাতও লেগে যেতে পারে। আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। যারা ভোট গণনা করছেন তাদের সংখ্যা সীমিত, চেষ্টা করছি সংখ্যাটা বাড়িয়ে আজ রাতের মধ্যে ফল দেওয়ার।’
অধ্যাপক মনিরুজ্জামান ওই সময় আরও বলেন, ‘ভোট গণনা শেষ হতে আরও বিরানব্বই ঘণ্টা লাগবে। আমরা ভোট গণনার জন্য লোকবল বাড়ানোর চেষ্টা করছি।’