
নেত্রকোনা সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন মো. অপু শাজী। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষ আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের ভর্তি পরীক্ষায় কলা, আইন, সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ৪র্থ স্থান অর্জন করেছেন। এই সেকেন্ড টাইমার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ভর্তির সুযোগ পেয়েছিলেন। পরীক্ষায় নিজের সাফল্যের গল্প নিয়ে মুখোমুখি হয়েছেন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের। তার কথাগুলো শুনেছেন—আমান উল্যাহ আলভী।
ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতিতে আপনার অনুপ্রেরণা কি ছিল?
ছোট বেলা থেকেই আমি ছিলাম জ্ঞানপিপাসু। আমি তৃষ্ণার্ত ছিলাম নিজেকে জ্ঞান, প্রজ্ঞা, দক্ষতা, যোগ্যতা এবং চিন্তাশক্তিতে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রাখতে। নিজের ক্যারিয়ার গঠন করা, সমাজে অবদান রাখা, আমার পরিবারকে গর্বিত করার আকাঙ্ক্ষা ছিল আমার মধ্যে। বড় ভাই যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছিল তাই এটা আমাকে উদ্বুদ্ধ করে নিজেকে উচ্চশিক্ষার মঞ্চে প্রবেশ করানোর৷ আমার আব্বা বলেছিল, ‘আমি চাই আমার ছেলে আইন বিভাগে পড়বে।’ এই বাক্যটি আমাকে টপ করার জন্যে প্রতিনিয়ত তাড়া করতো।
প্রস্তুতিকালীন সময়ে কীভাবে পড়ালেখা করতেন?
রেগুলার পড়াশোনা এবং গুরুত্বপূর্ণ টপিকস মার্ক করার বিষয়ে আমি অধিকতর মনোযোগী ছিলাম। প্রশ্নব্যাংক অ্যানালাইসিস করে গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলোর উপর ভালো দখল নিয়ে আসি। দুর্বল টপিকগুলো বারবার রিভিশন দিতাম অ্যাকুরেসি বাড়ানোর জন্যে প্রতিদিন অফলাইন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতাম। উক্ত প্রশ্ন থেকে না পারা প্রশ্নগুলো দাগিয়ে রেখে বারবার চোখ বুলিয়ে আয়ত্ত করতাম। প্রতিদিন ছোট ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করে তা পূরণ করার মাধ্যমে নিজেকে প্রস্তুত করি আমি।
প্রস্তুতি সময়ে অনেক সময় হতাশায় কাজ করে পড়া নিয়ে, এই সময়গুলোতে কীভাবে নিজেকে সামলে উঠতেন?
প্রস্তুতিকালীন সময়ে যখন খুব বেশি হতাশা কাজ করতো তখন নামাজ পড়তাম। আল্লাহ তা’আলার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতাম। পরিবারের সাথে বিষয়টা শেয়ার করতাম। তখন আমার বড় ভাই বলেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না পেলেই জীবন শেষ হয়ে যায় না। শেষ থেকে আবার শুরু হয়। তুমি তোমার চেষ্টা চালিয়ে যাও। এতে আমি সাহস পেতাম। এছাড়াও পরিবারের সাথে ভালো সময় দিতাম, বিকেলে কোথাও ঘুরতে যেতাম, ইতিবাচক বন্ধুদের সাথে মতবিনিময় করতাম।
পরীক্ষার হলে কীভাবে কৌশল অবলম্বন করে পরীক্ষা দিয়েছেন?
পরীক্ষা হলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হলো সময়। ওই স্বল্প সময়কে যে সম্পূর্ণ ইউটিলাইজ করতে পারবে সে এগিয়ে থাকবে। পরীক্ষার হলে আমি সবসময় জানা বিষয়গুলো কম সময় দাগিয়ে ফেলতাম। ফলে হাতে সময় থাকতো আমার তাই প্রশ্নটা ৩-৪ বার পরীক্ষা হলে পড়তে পারতাম। এর ফলে কনফিউশন প্রশ্নগুলোর উত্তর প্রায়শ মাথায় এসে পড়তো।
রাবিতে সুযোগ না হলে পরিকল্পনা কি ছিল?
আমার বাবা আমাকে একটা কথা বলেছিল, ‘আমি চাই আমার ছেলে আইন বিভাগে পড়াশোনা করে জজ হবে।’ দেশের আইনশৃঙ্খলায় ভূমিকা রাখে। তখন থেকেই আমার একমাত্র স্বপ্ন ছিল আইন। আমার জন্য আর কোনো পথ খোলা ছিল না। আর এ কয়েকটা শব্দ মিলনই আমাকে আইন বিষয়ে পড়ার জন্যে তাড়া করতে থাকে।
রাবি ছাড়াও কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছেন কি না?
আমি একজন সেকেন্ড টাইমার। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ‘বি’ ইউনিটে ১৪ তম স্থান অর্জন করে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হই। এছাড়াও বিইউপি, রাবি, চবি, জাবিতে পড়ার সুযোগ হয়েছিল। ভালো পজিশনও ছিল কিন্তু আইন আসেনি। ফার্স্ট টাইমে আব্বার স্বপ্ন পূরণ করতে ব্যর্থ হই। তাই আবার আইন বিষয়ে অধ্যয়নের লক্ষ্যে সেকেন্ড টাইমারের খাতায় নাম লেখাই। আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ তাআলার অশেষ রহমতে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ‘ডি’ ইউনিটে ২৮৩ তম এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ‘এ’ ইউনিটে ৪র্থ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি।
পরবর্তীতে যারা পরীক্ষা দিয়ে তাদের জন্য যদি কিছু বলতেন।
জুনিয়র যারা আছো, তোমাদেরকে বলব পরিশ্রম ও লেগে থাকো। স্বপ্ন পূরণ না হওয়া পর্যন্ত হাল ছেড়ো না। স্বপ্ন দেখতে জানলে—পৃথিবীর কোনো বাঁধাই আপনাকে থামাতে পারবে না, স্বপ্ন দেখতে জানলে ভেতরে জেগে ওঠে এক অদম্য জেদ,যে জেদ স্বপ্নকে টেনে আনে বাস্তবতায়। যতদিন না সেই জেদ ভেতরে জাগাতে পারবে, ততদিন সফলতা থাকবে বহুদূরে। আমি সেকেন্ড টাইমার—তবু চবিতে ২৮৩তম, রাবিতে ৪র্থ, শুধু কারণ—আমি বড় স্বপ্ন দেখতে শিখেছিলাম।
বড় স্বপ্ন না দেখাটা, সত্যি বলতে—এক ধরনের অপরাধ,কারণ যে স্বপ্ন দেখে না, সে জিততেও জানে না। তাই বলি, স্বপ্ন দেখো, জেদ জাগাও, কারণ স্বপ্নই তো তোমার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। হাল ছেড়ো না, লেগে থাকো। সকলের জন্যে শুভকামনা।