Image description
এক সপ্তাহের মধ্যে গঠনতন্ত্র প্রস্তুতের নির্দেশনা । মে থেকে শুরু হবে স্থানীয় পর্যায়ের কমিটি গঠন । রাজপথে কর্মসূচি বৃদ্ধির পরিকল্পনা ।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজনীতির মাঠে শুরু হয়েছে নতুন মেরুকরণ । আওয়ামী লীগের নেতা- কর্মীদের অনুপস্থিতিতে রাজনীতির মাঠ দখলে নিয়েছেন বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা - কর্মীরা । এমন পরিস্থিতিতে রাজনীতির মাঠে বড় দলগুলোকে টেক্কা দেওয়ার উপায় খুঁজছে জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের প্রায় সাত মাস পর গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশ করে তরুণদের নতুন দল এনসিপি । ‘ নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ' আনার ঘোষণা দিয়ে আলোচনায় আসা দলটি আত্মপ্রকাশের দুই মাস পেরিয়ে গেলেও পূর্ণাঙ্গ গঠনতন্ত্র প্রস্তুত করতে পারেনি । এ ছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে কমিটি গঠনে ব্যর্থতা , জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে স্থবিরতা, কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক সমন্বয়কদের কারও কারও বিরুদ্ধে নানাবিধ অভিযোগ ওঠায় রাজনীতির মাঠে অনেকটাই কোণঠাসা এনসিপি । ‘ দ্রুত ’ নির্বাচনের দাবি নিয়ে মাঠে সরব বিএনপি । জামায়াতে ইসলামীও গত আট মাসে ভোটের মাঠ অনেকটাই গুছিয়ে ফেলেছে ।

অন্যদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও সংবিধান প্রণয়নের জন্য একটি গণপরিষদ নির্বাচন; আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ, গণহত্যার বিচার এবং নির্বাচনের আগে পরিপূর্ণ সংস্কারের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি ‘ সেকেন্ড রিপাবলিক ’ প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছে এনসিপি । এমন বিপরীত অবস্থান রাজনীতির মাঠে বিএনপি ও এনসিপিকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে ।

এনসিপির নেতা-কর্মীরা বলছেন, গত কয়েক মাসে কেন্দ্র থেকে স্থানীয় পর্যায় পর্যন্ত বিএনপি ও এনসিপির নেতা - কর্মীদের মধ্যে ' প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ” অবস্থান সৃষ্টি হয়েছে । রাজধানীর মিরপুর , লক্ষ্মীপুর , বরিশাল , গাজীপুরসহ বিভিন্ন জেলায় উভয় দলের নেতা - কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে । নোয়াখালীর হাতিয়ায় বিএনপির নেতা - কর্মীদের হামলার মুখে পড়েন এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ । নেতা-কর্মীদের অভিযোগ , বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব স্থানীয় পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে , ফলে এনসিপির কর্মীদের ওপর হামলা ও হুমকির ঘটনা ঘটছে । এনসিপির একাধিক শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন , বিএনপির সঙ্গে রাজনীতির মাঠে ‘ টেক্কা ' দিতে দ্রুত সময়ের মধ্যে কেন্দ্র থেকে স্থানীয় পর্যায় পর্যন্ত কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে দলটি । নানাবিধ ব্যস্ততায় দল গঠনের পর কমিটিগুলো গঠন করতে না পারায় সাংগঠনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা তৈরি হয়েছে ।

দলের গঠনতন্ত্র প্রসঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার আজকের পত্রিকাকে বলেন,“ আমাদের প্রথমে চিন্তা ছিল একটি অন্তর্বর্তী গঠনতন্ত্র তৈরির, তবে এখন আমরা একটি পূর্ণাঙ্গ গঠনতন্ত্র তৈরি করছি । ' তিনি আরও বলেন, ‘ আমাদের মাইগ্রেশন পলিসিটা ঠিক করতে সময় লেগেছে । যাঁরা জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে আসছেন ; কিংবা যাঁরা নতুন আসবেন তাঁদের কীভাবে দলে সমন্বয় করা হবে , যাঁরা আগে থেকেই কাজ করছেন এবং নতুন সংগঠকদের মধ্যে সমন্বয় কীভাবে হবে — তা নিয়েই মূলত আলোচনা ছিল । এটা একটা জায়গায় এসে পৌঁছেছে । এখন স্থানীয় কমিটিগুলো হবে ।'

সাংগঠনিক স্থবিরতা কাটাতে ইতিমধ্যে চারটি সাধারণ সভা করেছে এনসিপি । এসব সভায় দলীয় কার্যক্রমের গতিশীলতা বৃদ্ধি , কমিটি গঠনপ্রক্রিয়া , নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সুরাহার উপায় , আওয়ামী লিগের বিচার ও সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের ছক , দল ও নেতাদের আর্থিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়েছেন দলটির নেতা - কর্মীরা । তাঁরা জানান , দলের তৃতীয় সাধারণ সভায় সদস্যদের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষা এবং সদস্যদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগের তদন্তের জন্য ১২ সদস্যের একটি ‘ শৃঙ্খলা কমিটি ' গঠন করা হয়েছে । চতুর্থ সভায় সাংগঠনিক গতিশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি ' পলিটিক্যাল কাউন্সিল ' গঠন এবং এই কাউন্সিল কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে একটি ‘ নির্বাহী কাউন্সিল ' গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ।

একই সঙ্গে , দলের গঠনতন্ত্র প্রণয়নে ছয় সদস্যের সমন্বয়ে একটি ‘ গঠনতন্ত্র প্রণয়ন টিম ' গঠন করা হয়েছে । দলের নেতারা জানান , ইতিমধ্যে স্থানীয় পর্যায়ে সাংগঠনিক কাঠামো গঠনের লক্ষ্যে প্রক্রিয়া চলমান আছে । স্থানীয় পর্যায়ের নেতৃত্বে আসতে পারেন , এমন নেতা ও সংগঠকদের যাচাই - বাছাই করা হচ্ছে । আগ্রহী অনেকের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনাও চলছে । মে মাস থেকেই স্থানীয় পর্যায়ে কমিটি গঠনের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু হবে । দলকে বিভিন্ন সেক্টরে ছড়িয়ে দিতে এবং ব্যাপক জনসম্পৃক্ততা তৈরির লক্ষ্যে দলের একাধিক ‘ উইং ” তৈরির পরিকল্পনাও বাস্তবায়নের পথে ।

ইতিমধ্যে দলটি ‘ যুব ’, ‘নারী’ ও ‘ শ্রমিক ’ উইং তৈরির কাজ শেষ করেছে । ‘আইনজীবী’, প্রকৌশলী’, ‘ এনসিপি ডায়াস্পোরা অ্যালায়েন্স '-এর গঠনের লক্ষ্যে প্রস্তুতি কমিটি গঠিত হয়েছে । আগামী মাসের শুরু থেকে ‘ সদস্য সংগ্রহ সপ্তাহ ' ঘোষণার পরিকল্পনা রয়েছে এনসিপির । দলের যুগ্ম সদস্যসচিব সালেহ উদ্দিন সিফাত আজকের পত্রিকাকে বলেন , স্থানীয় কমিটি করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে । কমিটি কীভাবে হবে , বয়স , সদস্যসংখ্যা কেমন হবে , সে ব্যাপারে ইতিমধ্যে সিদ্ধান্ত হয়েছে । গঠনতান্ত্রিক কোনো জটিলতা আপাতত আর নেই । তিনি আরও বলেন , ‘ আমরা নবীন - প্রবীণ সবার সমন্বয়ে স্থানীয় কমিটিগুলো করতে চাই । আমাদের অঞ্চল ভাগ করে দিয়েছি , কেন্দ্ৰীয় নেতারা সাংগঠনিক সফর করে স্থানীয় কমিটিগুলো করার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করবেন । '