
চীনের তৈরি পাকিস্তান বিমানবাহিনীর জেসি-১০ (JC-10) প্লেন ফ্রান্সের তৈরি ভারতের বিমানবাহিনীর রাফায়েল (Rafael) প্লেন ঘায়েল করেছে খবরটি চাউর হওয়া মাত্র জেসি-১০ (JC-10) নির্মাতা চেংদু কর্পোরেশনের স্টক ২০ শতাংশ বেড়েছে। বিমান ভূপাতিতের খবর যদি সত্যি হয়, তবে ইতিহাসে এই প্রথম কোন চীনা যুদ্ধবিমান ইউরোপীয় বিমানকে ভূপাতিত করলো। চীনের জন্যে সেটা শ্লাঘার বিষয় এবং জেসি-১০ বিমানের প্রযুক্তির উচ্চমান প্রমাণ করে।
তবে, তার অর্থ এই নয় যে, রাফায়েল কম কোয়ালিটির প্লেন। শুধুমাত্র, প্লেন দিয়েই যুদ্ধ জেতা যায় না। যুদ্ধজয় ও ডগফাইটে যুদ্ধবিমানের কোয়ালিটির অতিরিক্ত যেটা লাগে সেটা হচ্ছে, এরিয়াল স্ট্র্যাটেজি এবং পাইলটের যথাযথ প্রশিক্ষনজনিত দক্ষতা। সমরকৌশল জনিত অন্যান্য ফ্যাক্টরের (ধরুন, এরিয়াল ডিফেনস ইকো সিস্টেমের কার্যকারীতা) অবদান তো আছেই। কথা সেটা নয়—কথা হচ্ছে, পাক বিমানবাহিনীর সাফল্যে আপনারা যারা মস্তিতে মত্ত, আপনারা কি টের পাচ্ছেন যে, বাংলাদেশের কপাল পুড়ছে? শুনুন তবে—
বাংলাদেশ বিমানবাহিনী অনেকদন ধরেই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির চীনা যুদ্ধবিমান কেনার ইচ্ছে প্রকাশ করলেও, শেখা হাসিনার ওপর ভারতের নিয়ন্ত্রনের কারণে নিজস্ব প্রতিরক্ষার হার্ডওয়ারের প্রযুক্তির গোপনীয়তা রক্ষার্থে চীন বাংলাদেশকে অত্যাধিক প্রযুক্তির বিমান বিক্রি করতে রাজি হয়নি। হাসিনার পতন পর ইউনুস সরকারের আমলে বাংলাদেশ এক স্কোয়াড্রন (১৬টি) জেসি-১০ (JC-10) বিমান কেনার আগ্রহ দেখায়। গত ভিজিটে অফিশিয়াল আলোচনায় মুহাম্মদ ইউনুস স্বয়ং বিমান ক্রয়ের বিষয়ে আলোচনা করলেও চিনা কর্মকর্তারা খুব একটা আগ্রহ প্রকাশ করেননি বলেই খবর প্রকাশিত হয়।
উল্টো, চীনারা জানায়, বাংলাদেশের উচিৎ তুলনামূলক কম এডভান্সড চৈনিক বিমান কেনা। অজুহাত হিশেবে, বাংলাদেশের আর্থিক অসংতির কথা বলা হয়, যদিও বাংলাদেশের জিডিপি পাকিস্তানের চেয়ে বেশী, চীনারা যে তথ্য ভাল করেই জানে। সোজা কথায়, চীনারা বাংলাদেশের কাছে জেসি-১০ (JC-10) বিমান বিক্রয়ে আগ্রহী নয়। বাংলাদেশী বিমান বাহিনীর ওপর ভারতের নিয়ন্ত্রণের কারণে উন্নত চৈনিক প্রযুক্তির পাচারের সম্ভাবনার কথা বিবেচনা করেই চীনের এই শীতল মনোভাব। বাংলাদেশ যদিও চীনের কাছ থেকে জেসি-১০ (JC-10) কেনার জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, ডিফেন্স ফোরামগুলোতে কথাটি এখনও শোনায় যায়।
এখন, জেসি-১০ (JC-10)-এর রাফায়েল বধ কাহিনী সত্যি হলে, চীন তার সামরিক প্রযুক্তির গুণমান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছে। আর সেটা হলে আপনি নিশ্চিত থাকুন যে, চীন তার এই প্রযুক্তি বাংলাদেশের মতো ঝুঁকিপূর্ন দেশের কাছে হস্তান্তর করতে চাইবে না। ভূ-রাজনৈতিক ও অন্যান্য বিবেচনায় বাংলাদেশের কাছে চীন যদি আদৌ জেসি-১০ (JC-10) বিমান বিক্রি করে, সেটা হবে ডাউনগ্রেডেড ভার্সান। সোজা কথায়, অতি স্বল্প ক্ষমতা সম্পন্ন, হয়ত ৩.৫ জেনারেশন প্রযুক্তির বিমান, কোনভাবেই ৪.০ কিংবা ৪.৫ জেনারেশন প্রযুক্তির নয়।
সোজা কথায়, “রাফায়েল কিলার” কোয়ালিটির অগ্রসর প্রযুক্তির নয়, চীন বড়জোর বাংলাদেশকে মিগ-২১ মোকাবেলার ক্যাপাবিলিটির কোয়ালিটি আছে, এমন পুরনো প্রযুক্তির বিমানই দেবে। চীন ভাল করে জানে যে, বাংলাদেশের সামরিক এস্টাবলিশমেন্টের ভেতর ভারতীয় গোয়েন্দাদের শতভাগ এক্সেস এখনও অটুট আছে।
বাংলাদেশ জেসি-১০ (JC-10)-এর খোয়াব দেখতে পারে, সেটা সে দেখুক। খোয়াব দেখতে তো পয়সা লাগে না। কিন্ত বাংলাদেশ যে চীনের কাছ থেকে “খেলনা ভার্সান” ভিন্ন “আসলি মাল” পাচ্ছে না, সেটা বাজি ধরেই বলা যায়।
শিবলী আজাদ