যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী মন্ত্রী ডোনাল্ড লু শনিবার সন্ধ্যায় নয়াদিল্লি হয়ে দুই দিনের ঢাকা সফরে এসেছেন। ঢাকায় নামার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক এবং ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত তাকে স্বাগত জানান। এরপরই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের বাসভবনে যান ডোনাল্ড লু এবং সেখানে দুই পক্ষের বৈঠক হয়।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে র্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং যুক্তরাষ্ট্র যাতে সামনে আর নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করে সে বিষয়ে গুরুত্ব দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আজ রোববার মধ্যরাতে ডোনাল্ড লুর ফিরে যাওয়ার কথা রয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, তার এই সফরে দুই পক্ষের আলোচনার টেবিলে গুরুত্ব পাবে জ্বালানি, বাণিজ্য, নিরাপত্তা সহযোগিতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, শ্রম, মানবাধিকার, গুম, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল, জিসোমিয়া ও আকসা আইন, শাহীনবাগে ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কথিত নিরাপত্তা বিঘিœতের ঘটনা, আমেরিকান দূতাবাসের নিরাপত্তা জোরদার, রোহিঙ্গা সংকট ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ।
শনিবার ঢাকায় নামার পর যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে নাগরিক সমাজের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ডোনাল্ড লু। ওই বৈঠকে সফররত মার্কিন সহকারী মন্ত্রী দেশের শ্রম ও মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে নাগরিক সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বোঝার চেষ্টা করেছেন বলে জানা গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে, সম্পর্কের অগ্রাধিকারমূলক ইস্যুতে বৈঠক করতে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী মন্ত্রী ডোনাল্ড লু ১২ থেকে ১৫ জানুয়ারি ভারত ও বাংলাদেশ সফর করছেন। যেখানে জ্বালানি, বাণিজ্য, নিরাপত্তা সহযোগিতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, শ্রম ও মানবাধিকার বিশেষ গুরুত্ব পাবে। দুই পক্ষের সম্পর্ক আরও নিবিড় করতে এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও বাড়াতে বাংলাদেশ সফরে ডোনাল্ড লু দেশটির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এবং নাগরিক সমাজের সঙ্গে বৈঠক করবেন। সেই সঙ্গে শ্রম ও মানবাধিকার ইস্যুতে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি জানবেন তিনি।
ঢাকার কূটনীতিকরা জানান, এ সফরে দুই পক্ষই সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে ডোনাল্ড লুর। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে আজ পৃথক বৈঠক করবেন তিনি। এই সফরে ঢাকার পক্ষ থেকে র্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া বাণিজ্য খাতের জিএসপি সুবিধা পুনর্বহাল, বিনিয়োগ এবং রোহিঙ্গা সংকটে গুরুত্ব দিচ্ছে ঢাকা।
সদ্য সমাপ্ত রিয়ার অ্যাডমিরাল আইলিন লাউবাচার বাংলাদেশ সফরে এসে যেসব ইস্যু সামনে আনেন, ডোনাল্ড লুর সফরে সেগুলো আবার আলোচনায় উঠবে। পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠকে রিয়ার অ্যাডমিরাল আইলিন লাউবাচার রোহিঙ্গা সংকট, দুই পক্ষের সম্পর্কে বিশেষ করে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল, উন্নয়ন সহযোগিতা, মেরিটাইম নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীর সক্ষমতা বাড়ানো, সাইবার নিরাপত্তা ইস্যুতে আলাপ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র চায় যে, বাংলাদেশ তাদের নেতৃত্বে প্যাসিফিক কৌশল এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অর্থনৈতিক ফোরামে যোগ দিক। কয়েক বছর আগেই বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্র এসব ফোরামে যোগ দিতে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিয়েছে। রিয়ার অ্যাডমিরাল আইলিন লাউবাচার বাংলাদেশ সফরে এসে সেই প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করেন।
এ ক্ষেত্রে ঢাকা বলেছে, যেকোনো ধরনের অর্থনৈতিক জোট বা ফোরামে অংশ নিতে বাংলাদেশের আপত্তি নেই। তবে কোনো প্রকার সামরিক জোটে যোগ দিতে বাংলাদেশের আগ্রহ নেই। ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে এ সফরে জিসোমিয়া ও আকসা আইন এবং নিরাপত্তার বিষয়টিও গুরুত্ব পাবে। গত বছরের শেষে একটি অনুষ্ঠানে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার পর রাষ্ট্রদূত পিটার হাস তার নিরাপত্তা নিয়ে যে উদ্বেগ প্রকাশ করেন, ডোনাল্ড লুর সফরে সেই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। ঢাকার কূটনীতিকরা আরও বলছেন যে, সদ্য সমাপ্ত লাউবাচারের বাংলাদেশ সফরটি রুটিন সফর ছিল না। কিন্তু সহকারী মন্ত্রী ডোনাল্ড লুর আসন্ন সফরটি রুটিনকাজ। এখানে লাউবাচারের সফরটি ভিন্ন বার্তা বহন করে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম সময়ের আলোকে বলেন, আমাদের প্রথম ইচ্ছা দুই পক্ষের সম্পর্ককে আরও নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া, আরও গভীর করা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের ধারাবাহিক যে কর্মকা- সেটা অব্যাহত আছে। মাঝে কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল, সেটা নিয়ে আমরা কাজ করছি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সময়ের আলোকে বলেন, আমরা ডোনাল্ড লুকে স্বাগত জানাই। আমাদের সঙ্গে আমেরিকার খুব ভালো সম্পর্ক। তাদের সঙ্গে আমাদের বহুমুখী সম্পৃক্ততা আছে। তার সঙ্গে বিভিন্ন ইস্যুতে আলাপ হবে। আমার ধারণা, তাতে আমাদের সুসম্পর্ক আরও বৃদ্ধি পাবে।