Image description
জামালপুর পৌরসভা » অনেকে ঘর বরাদ্দ পাওয়ার পর এক দিনের জন্যও আসেননি । নির্মিত ১৮০ টি ঘরে মোট ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫ কোটি টাকা । রাস্তা না থাকায় মেয়েটাও স্কুলে যেতে পারে না : উপকারভোগী » তদন্ত করে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করব : ইউএনও

ভূমিহীন - গৃহহীন পরিবারকে উপহার হিসেবে ঘর দিয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ২০২০ সালে তাঁর দেওয়া সেই ঘর এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে জামালপুর পৌরসভার নাওভাঙ্গা চরের উপকারভোগীদের কাছে । শত আশা নিয়ে সেই ঘরে উঠলেও এখন মিলছে না পানি ও বিদ্যুৎ । নেই রাস্তাঘাটও । সরেজমিনে দেখা গেছে , কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত উপহারে সেই সব ঘরে অধিকাংশ উপকারভোগী থাকছেন না । অনেকেই ঘর বরাদ্দ পাওয়ার পর এক দিনের জন্যও আসেননি । আর যাঁরা থাকছেন , তাঁরা পড়েছেন চরম বেকায়দায় ।

তবে স্থানীয় প্রশাসনের দাবি, ইতিমধ্যেই সরেজমিনে ঘুরে দেখেছেন । খতিয়ে দেখা হচ্ছে অনিয়ম - দুর্নীতি । সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে , নাওভাঙ্গা চরে ৩ একর ৪০ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত ১৮০ টি ঘরে মোট ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫ কোটি টাকা । প্রতিটি ঘর নির্মাণে খরচ হয় ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা । প্রথম দফায় উপহারের প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যয় ছিল ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা । তা বাড়িয়ে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা করা হয় । সর্বশেষ ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ঘরপ্রতি ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা । প্রকল্প ঘুরে দেখা গেছে , অধিকাংশ ঘর তালাবদ্ধ । আর যাঁরা বসবাস করছেন , তাঁদের সমস্যা যাতায়াতের রাস্তা । প্রায় ২ কিলোমিটার নদের চরের কাদামাটি পেরিয়ে সেখানে যেতে হচ্ছে । বিদ্যুৎ ও পানির সংকটের কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে । শাকসবজি , হাঁস - মুরগি পালনের কোনো জায়গা রাখা হয়নি ।

শিল্পী বেগম নামে একজন বলেন , “ ফৌজদারিতে থাকতাম । সকালে শহরে উঠে কাজ করতাম । মেয়েটাকে লেখাপড়া করাতাম । জোর করে বসতভিটা ভেঙে এখানে পাঠিয়ে দেন । স্থানীয় পৌরসভার কাউন্সিলর হাসানুজ্জামান খান রুনু এ কাজে সহায়তা করেছেন । এখন খেয়ে না খেয়ে পড়ে থাকি । চরের মধ্যে থেকে শহরের যেতে সময় লাগে দুই ঘণ্টা ।

এই জন্য কাজকর্মও পাই না । রাস্তা না থাকায় মেয়েটাও স্কুলে যেতে পারে না । ” উপকারভোগী তাসলিমা আক্তার বলেন , “ এই ঘর দেওয়ার সময় বলেছিল , আমাদের সাহায্য - সহায়তা করা হবে । কই , এখন তো কাউকে দেখি না । কেউ খুঁজ নিতেও আসে না ।

”সুমি বেগম বলেন ,“ পানি নাই , রাস্তা নাই , বিদ্যুৎ নাই । সন্ধ্যা হলেই এক দিকে যেমন পৃথিবী অন্ধকার হয় । এখানে আমাদের জীবনও অন্ধকার হয়ে যায় । কোথাও বের হবার উপায় নাই । কেউ অসুস্থ হলে চিকিৎসা দিতে নিব তার কোনো সুযোগ নাই । দুই মাইল হেঁটে পাথালিয়ার ছাতির মোড়ে রিকশা আনতে গেলে আরেক রিকশা না যাওয়ার জন্য বলে । ’

জামালপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও ) শহীদ জান্নাত পিংকি বলেন , পরিদর্শনে গিয়ে মোটামুটি ৭ শতাংশ মানুষ পেয়েছি । কয়েকটি ঘর খালি ছিল । তাঁরা জানিয়েছেন , এরা বাইরে কাজ করতে গিয়েছেন । যেহেতু আমি দিনের  বেলায় গিয়েছিলাম । যাঁরা থাকেন না ; তার মানে হচ্ছে এই ঘরে থাকার যোগ্যতা তাঁর ছিল না । এমনি এমনি নিয়েছেন । আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিটি ঘরে কার থাকার কথা , কে বরাদ্দ নিয়েছেন , সেই ব্যক্তি থাকছেন কি না , কেন থাকছেন না , তদন্ত করে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করব । '