Image description
সতর্কভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলার নির্দেশ । ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে । সোহাগ হত্যাকাণ্ডে নিজস্ব তদন্ত ও তথ্যানুসন্ধানী কমিটির রিপোর্ট জনসম্মুখে প্রকাশ করবে ।

গণতন্ত্র, আগামী জাতীয় নির্বাচন ও দলের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের আশঙ্কায় সতর্ক অবস্থানে বিএনপি। হঠাৎ করে বিএনপি ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে একটি গোষ্ঠীর অপপ্রচার এরই অংশ বলে মনে করছেন নেতারা। এজন্য ধৈর্য ও সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে নেতাকর্মীদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন দলটির হাইকমান্ড। নেতাদের মতে, ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে স্বল্প সময়ের নোটিশে সোম ও মঙ্গলবার ঢাকাসহ সারা দেশে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সুশৃঙ্খল বিক্ষোভ দলের মধ্যে ঐক্যকে আরও সুদৃঢ় করেছে। এর মাধ্যমে তারা বার্তা দিয়েছেন অপপ্রচার ও যে কোনো ষড়যন্ত্রকে বিএনপি নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করবে। এদিকে একই সঙ্গে লন্ডন বৈঠকের ঘোষণাপত্রের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে দ্রুত দেশকে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় ফেরাতে চায় দলটি। সেই লক্ষ্য নিয়েও নেতারা কাজ করছেন। এছাড়া রাজধানীর মিটফোর্ডে ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যাকাণ্ডের অন্তর্নিহিত কারণ অনুসন্ধানে গঠিত ‘তদন্ত ও তথ্যানুসন্ধানী কমিটি’ প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন করে তা জনসম্মুখে প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

বিএনপি নেতাদের মতে, বিশেষ করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রতিবাদে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সব পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের আরও ঐক্যবদ্ধ করেছে। দেশব্যাপী বিক্ষোভ থেকে রাজধানীর মিটফোর্ডে সোহাগ হত্যাকাণ্ড নিয়ে যারা পানি ঘোলা করতে চেয়েছে তাদের বার্তা দিতে পেরেছে, বিএনপি সুশৃঙ্খল ও ঐক্যের দল। কোনো ষড়যন্ত্রেই কাজ হবে না।

এদিকে পরিকল্পিতভাবে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য মিটফোর্ডের হত্যাকাণ্ডকে রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি বাস্তবায়নে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে বলে মনে করেন দলটির নেতারা। তাদের মতে, অপরাধীর জন্য কোনো অনুকম্পার সুযোগ যেমন নেই, তেমনি পক্ষাবলম্বনের প্রশ্নই উঠে না। শুধু অভিযোগের ভিত্তিতে দলীয় পদ থেকে অপসারণের এমন দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপকে স্বাগত না জানিয়ে পরিকল্পিতভাবে চরিত্র হনন; দেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দ্রুত কার্যকর করার বিষয়ে বিএনপির দলীয় অবস্থান সুদৃঢ় এবং অপরিবর্তিত। নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের অন্তর্নিহিত কারণ অনুসন্ধানের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে বিএনপি গঠিত ‘তদন্ত ও তথ্যানুসন্ধানী কমিটি’ প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন করবে এবং তা জনসম্মুখে প্রকাশ করবে। কিন্তু এ বিষয় নিয়ে যারা রাজনৈতিক পরিবেশ নষ্ট এবং জাতীয় নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত ও অনিশ্চিত করতে চায় এবং প্রকারান্তরে ফ্যাসিবাদ উত্থানের পথ কারা সৃষ্টি করতে চায়, তাদের চিহ্নিত করা ও প্রতিহত করাও প্রয়োজন। আগামী জাতীয় নির্বাচন, গণতন্ত্র এবং প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের আশঙ্কায় দল সতর্ক হয়েছে এবং গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিকভাবে এর মোকাবিলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, ‘গণতন্ত্রের প্রশ্নে আমাদের কোনো আপস নেই। আমরা নির্বাচন চাই। যেই সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেই সময়টাতেই নির্বাচন চাই। কিন্তু লন্ডন বৈঠকের পর যখন মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে একটা আশার সঞ্চার হয়েছে, ঠিক সেই সময়ই কয়েকটি রাজনৈতিক মহল, কয়েকটি চক্র বাংলাদেশের রাজনীতিকে ভিন্ন পথে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। এই চক্রান্তকারীরা বাংলাদেশকে আবার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। অকথ্য ভাষায় আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে তারা কথা বলছে, স্লোগান দিচ্ছে। তারা ভেবেছিল কথাগুলো বললে এবং স্লোগান দিলে বিএনপি মনে হয় ঘরের মধ্যে ঢুকে যাবে। বিএনপি সেই দল, যারা বারবার সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে।’

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী যুগান্তরকে বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের অনুকম্পায় দু-একটি ইসলামি দল রাজনীতি করার সুযোগ পেয়েছে। এখন তারা টার্গেট করেছে বাংলাদেশের মানুষের আশা ও ভরসারস্থল তারেক রহমান ও বিএনপিকে। বুক-পিঠ বলে তাদের কিছু নেই। তারা দেশে নতুন করে অশান্তি ও অরাজকতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। ‘মব জাস্টিস’র নামে বিশৃঙ্খলা ছড়ানো হচ্ছে। দেশের জনগণ জানে কারা ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করে, ইসলামের নাম নিয়ে কারা সুযোগসন্ধানী কাজ করে। ইউটিউব, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে কারা আজেবাজে কথা ছড়াচ্ছে, এটা মানুষ জানে। কিন্তু বিএনপি একটি গণমুখী দল। কোনো ষড়যন্ত্রেই কাজ হবে না।’

বিএনপি নেতাদের মতে, সোহাগ হত্যাকাণ্ড নিয়ে জনমনে বেশকিছু প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা কোনো রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য ব্যবহার হচ্ছে কিনা। এবং এর মাধ্যমে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশকে বিঘ্নিত করার জন্য বিশেষ কোনো মহলের প্ররোচনায় এ ধরনের ঘটনাকে অজুহাত হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে সন্দেহ করার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। সরকার পরিচালনার দায়িত্বে না থাকা সত্ত্বেও বিএনপিকে দায়ী করে বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন এবং অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে আবারও সেই ফ্যাসিবাদের যুগে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে কিনা এমন প্রশ্ন উঠতেই পারে। দেশে সুস্থধারার রাজনীতি প্রতিষ্ঠার গণআকাঙ্ক্ষার বিপরীতে পরিকল্পিত অপপ্রচার, অশ্লীল স্লোগানের মাধ্যমে আবারও ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও আওয়ামী লীগের কণ্ঠস্বরের প্রতিধ্বনিই শোনা যাচ্ছে।

নেতারা আরও মনে করেন, অপরাধীর জন্য কোনো অনুকম্পার সুযোগ যেমন নেই, তেমনি পক্ষাবলম্বনের প্রশ্নই উঠে না। শুধু অভিযোগের ভিত্তিতে দলীয় পদ থেকে অপসারণের এমন দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপকে স্বাগত না জানিয়ে পরিকল্পিতভাবে চরিত্র হনন; দেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে সুপরিকল্পিতভাবে দেশের বৃহত্তম ও জনপ্রিয় দলের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা হচ্ছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দলের শীর্ষ নেতা তারেক রহমান, যিনি শুধু একজন ব্যক্তি নন, দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে পরিচালিত স্বৈরাচার পতন আন্দোলনের প্রধান নেতা ও সাফল্যের কারিগর এবং গণ-অভ্যুত্থানের প্রাণ পুরুষ। তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য প্রদানের বিরুদ্ধে সুধী সমাজের প্রতিবাদ, নিন্দা ও ঘৃণা প্রকাশ করা উচিত।

বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা গভীর শঙ্কার সঙ্গে লক্ষ্য করছি সুপরিকল্পিতভাবে অশ্লীল কুরুচিপূর্ণ আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হচ্ছেন এ দেশের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের সমার্থক রাজনৈতিক দল বিএনপি ও তার শীর্ষ নেতৃত্ব। গুটিকয়েক রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রকারীর অপচেষ্টায় বাংলাদেশ ব্যর্থ হতে পারে না। যে তারুণ্য ফ্যাসিবাদের পতনে আমাদের সঙ্গে অগ্রসৈনিক ছিল, আজ দেশের প্রয়োজনে তাদের সঙ্গে সবার ঐক্যবদ্ধ চেষ্টা যে কোনো মূল্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হবে। ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশে ষড়যন্ত্রকারীদের কোনো অপচেষ্টাই লক্ষ্য অর্জনের পথে বাধা হতে পারে না।’ তিনি মনে করেন, ‘সংঘাত সৃষ্টির সব উসকানি ও পরিকল্পিত ফাঁদে পা না দিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যকে বিনষ্ট করার যে কোনো ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে। ফ্যাসিবাদের অনুপ্রবেশের যে কোনো ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র এই বাংলাদেশে বাস্তবায়িত হতে দেওয়া যায় না। সব গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্যবদ্ধ অবস্থানকে সঙ্গে নিয়ে এ দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সংকল্পে সবাইকে হতে হবে বরাবরের মতোই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। পতিত স্বৈরাচার আর কাপুরুষ ষড়যন্ত্রকারীদের মিলিত অপচেষ্টা, সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও আগামীর বাংলাদেশ গড়ার পথে যদি কোনো বাধা হয়ে আসে, তবে তা ঐক্যবদ্ধ গণতান্ত্রিক শক্তির মাধ্যমে প্রতিহত করতে হবে।’ বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ যুগান্তরকে বলেন, ‘দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে ঐক্যবদ্ধ জাতিকে বিভক্ত করার ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ আজ উন্মোচিত। এই অপরাজনীতি প্রতিহত করার ক্ষেত্রে সরকারের উদাসীনতা দেখানোর সুযোগ নেই। আমরা দৃঢ়ভাবে আশা করি দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি অবনতির ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে দায়িত্বশীল সব রাজনৈতিক দল সচেতন হবে। রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত এ জাতীয় কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণের পথ বাধাগ্রস্ত হলে তার পরিণতি হবে ভয়াবহ।’