
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ঘোষিত চিরুনি অভিযান আরও জোরদার করা হচ্ছে। এজন্য মঙ্গলবার বেশ কয়েকটি বৈঠক করেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। একটি বৈঠক থেকে অভিযান জোরদার করতে সারা দেশের এসপিদের কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন পুলিশের আইজি বাহারুল আলম। পৃথক সভা থেকে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন অপরাধ বিভাগের উপকমিশনার, সব থানার ওসি এবং এসি (সহকারী কমিশনার) থেকে তদূর্ধ্ব কর্মকর্তাদের কার্যক্রমে অধিকতর গতি আনার নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। ডিবিকে তিনি দিয়েছেন বিশেষ নির্দেশনা। ওই নির্দেশনা পাওয়ার পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ডিবির ভারপ্রাপ্ত প্রধান ও ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার নাসিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ডিবি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা প্রণয়ন করেন অভিযানের ছক। ছক অনুযায়ী অভিযানে নামার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বৈঠক থেকে। খবর সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের।
পুলিশ সদর দপ্তরের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চিরুনি অভিযান নিয়ে মঙ্গলবার বিকালে পুলিশ সদর দপ্তরে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়। আইজিপির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অতিরিক্ত আইজিপিরা এবং পুলিশ সদর দপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সারা দেশের এসপিরা এ সময় অনলাইনে যুক্ত ছিলেন। জুম মিটিংয়ে আইজিপি অভিযান জোরদার করতে এসপিদের বিশেষ নির্দেশনা দেন। অভিযান চালানোর ক্ষেত্রে সন্ত্রাসী এবং চাঁদাবাজদের কোনো ছাড় না দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে জোর দেওয়ার কথা বলেন তিনি। ডিএমপি সূত্র জানায়, মঙ্গলবার মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় অপরাধীদের কঠোরভাবে দমনের নির্দেশ দেন কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। চিরুনি অভিযানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি যুগান্তরকে বলেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মহোদয় চিরুনি অভিযানের ঘোষণা দিয়েছেন। সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি আমরা অবগত হয়েছি। এখনো অফিশিয়ালি চিঠি পাইনি। চিঠি পাওয়ার পর আমাদের কার্যক্রম অনেক বাড়বে। ইতোমধ্যেই আমরা অভিযান জোরদার করেছি। চেকপোস্ট বাড়িয়েছি। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে অতিরিক্ত চেকপোস্টের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী আরও বলেন, অপরাধ পর্যালোচনা সভায় মহানগরীর আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং অপরাধ প্রতিরোধে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও পেশাদারত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে মাঠপর্যায়ে নির্দেশ দিয়েছি। অভিযান জোরালো করতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছি। বিশেষ অভিযানে ইতোমধ্যেই অনেক বড় বড় সফলতা এসেছে। এসব সফলতা তুলে ধরতে আজ একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তুলে ধরব। তাই এ নিয়ে এই মুহূর্তে বিস্তারিত বলতে চাচ্ছি না। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নিয়মিত টহল জোরদার, অপরাধপ্রবণ এলাকায় নজরদারি বাড়ানো এবং অতিরিক্ত চেকপোস্ট পরিচালনার বিকল্প নেই। এই কাজগুলোকে গুরুত্ব দিয়েই ডিএমপির তৎপরতা চলছে।
ডিএমপি ডিবির যুগ্ম-কমিশনার নাসিরুল ইসলাম বলেন, চিরুনি অভিযানে আমরা সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজ ছাড়াও ছিনতাইকারী, ডাকাত, চোর এবং প্রতারকদের দিকে বেশি মনোযোগ দিয়ে কাজ করছি। ইতোমধ্যেই বেশ কিছু ডাকাত, ছিনতাইকারী এবং প্রতারককে গ্রেফতার করেছি। তিনি বলেন, অভিযানে আমরা নিকট-অতীতের ঘটনাগুলোকেও গুরুত্ব দিচ্ছি। মিটফোর্ডে ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যা মামলায় বড় অগ্রগতি আছে। এ বিষয়ে বুধবার কমিশনার মহোদয় কথা বলবেন। এ কারণে এ নিয়ে আমি এখন কিছু বলতে চাচ্ছি না। তিনি বলেন, গত ২৫ মে বাড্ডায় ডিশ ব্যবসায়ী সাধন হত্যার ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন শেষের দিকে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর জানান, বিশেষ অভিযানসহ নানা অভিযানে গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশ থেকে এক হাজার ৫৭২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে মামলা এবং ওয়ারেন্টের আসামি এক হাজার সাতজন। অন্যান্য ঘটনায় গ্রেফতার ৪৬৫ জন। অভিযানে দুটি পিস্তল ও দুটি ম্যাগাজিন, একটি উজি সাবমেশিন গান, চার রাউন্ড গুলি, তিনটি চাইনিজ কুড়াল, একটি কিরিচ, একটি লোহার রেত উদ্ধার করা হয়েছে।
ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারের উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ডিএমপি সব সময়ই নগরবাসীর নিরাপত্তায় তৎপর থাকে। তবে বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি হলে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়। উপদেষ্টা মহোদয়ের চিরুনি অভিযানের ঘোষণার পর ডিএমপির সব ইউনিটের কার্যক্রমে অধিকতর গতি আনার নির্দেশ দেওয়া হয়। ডিবিকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী অভিযান চালানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সব ইউনিটকে। তিনি বলেন, বর্তমান কমিশনার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত আট মাসে যেসব বড় ঘটনা ঘটেছে সেগুলোর মধ্যে মাত্র একটি (পুলিশ প্লাজার সামনে গুলি করে হত্যা) ছাড়া সবগুলো ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন হয়েছে এবং আসামি গ্রেফতার হয়েছে।