Image description
ঘুষ গ্রহণকালে সমবায় অধিদপ্তরের তিন কর্মকর্তা গ্রেফতার

এক ব্যবসায়ীর কাছে থেকে ঘুষ গ্রহনকালে হাতে নাতে গ্রেফতার হয়েছেন সমবায় অধিদপ্তরের তিন কর্মকর্তা। তাদের অবস্থান এখন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। অথচ যার নির্দেশ এবং যার জন্য ঘুষ নিতে গিয়েছিলেন সেই মূল অভিযুক্ত তৎকালীন ঢাকা জেলা সমবায় কর্তকর্তা এসএম তহমিদুজ্জামান এখনো রয়েছেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। গ্রেফতারকৃতদের এখন চাকরি যায় যায় অবস্থা। তহমিদুজ্জামানের জন্য ঘুষের টাকা আনতে গিয়ে তিন কর্মকর্তার গ্রেফতারে সমবায় অধিদপ্তরে এখনো চলছে তোলপাড়। সাধারণ কর্মকর্ত-কর্মচারিদের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম অসন্তোষ। চাকরি হারানোর ভয়ে অনেকেই চুপ থাকলেও ভেতরে ভেতরে সবার মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। শাহবাগ থানায় দায়ের করা অভিযোগের সূত্রমতে, জেলা সমবায় কর্মকর্তা তহমিদুজ্জামান কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি এপার্টমেন্ট মালিক সমিতির নির্বাচনে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি পদপ্রার্থী নূরুল আমিনকে নির্বাচনে জিতিয়ে দেয়ার কথা পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন। একই ভাবে অপর সভাপতি পদপ্রার্থী জনাব সাইফুল ইসলাম সজীবকে ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে জিতিয়ে দেয়ার আশ^াস দেন। সাইফুল ইসলাম সজীব এ বিষয়ে গত ৩ জুন দুর্নীতি দমন কমিশনে ফাঁদ মামলার আবেদন করেন।

পরবর্তীতে তহমিদুজ্জামানের নির্দেশে গত ১৬ জুন সজীবের বাংলা মটরস্থ অফিসে তিনটি খামে ঘুষের টাকা গ্রহনকালে সমবায় অধিদপ্তরের পরিদর্শক শাহজাহান আলী, সহকারি পরিদর্শক শাখাওয়াত হোসেন ও সহকারি পরিদর্শক মনির হোসেন পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। গ্রেফতারকৃতরা নির্বাচন কমিটির সদস্য ছিলেন। ঘটনার পর তৎকালীন ঢাকা জেলা সমবায় অফিসার তহমিদুজ্জামানকে ১নং বিবাদী করে শাহবাগ থানায় অভিযোগ করেন ভূক্তভোগী সজীব। শাহবাগ থানা অভিযোগটি পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপ-পরিচালক, দূর্নীতি দমন কমিশন, সমম্বিত জেলা কার্যালয় সেগুন বাগিচায় দাখিল করেন।

এদিকে এ ঘটনার পর গত ২৩ জুন জেলা সমবায় অফিসার তহমিদুজ্জামানকে রংপুরে বদলি করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, ঘুষখোর কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত এবং ছাত্র লীগের কোটায় ৩৬তম বিসিএস ক্যাডার তহমিদুজ্জামানকে ঘুষের ওই মামলা থেকে রক্ষার জন্যই কৌশলে বদলি করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ঘটনাটি চাপা পড়লেই তিনি ফের ঢাকায় ফিরে আসবেন।

সমবায় অধিদপ্তরের নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র জানায়, তহমিদুজ্জামান এবং উপ-নিবন্ধক তানিম রহমান সমবায় অধিদপ্তরে নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতি বাণিজ্যের এক মহা সিন্ডিকেট তৈরীর পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছেন। তাদের কারনে সমবায় দপ্তর সুনাম ক্ষন্ন হচ্ছে। তহমিদুজ্জামানের লাগামহীন চাহিদা মেটাতে সাধারণ সমবায়ীরা অতিষ্ঠ ছিলেন। তিনি টাঙ্গাইলে কর্মরতবস্থায় টাঙ্গাইল সিবি’র প্রশাসক নিয়োগ ও ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচন নিয়ে অনিয়ম করেছেন। তদন্তের প্রেক্ষিতে তখন তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়। তাঁর দূর্নীতি ও অনিয়মের কারনে মাগুরা, গোপালগঞ্জ বদলী করা হয়েছিল, কিন্তু ফ্যাসিষ্ট সরকারের দলীয় প্রভাব খাটিয়ে বদলী আদেশ কার্যকর করা যায়নি। টাঙ্গাইলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যাপক দূর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। উক্ত অভিযোগের ভিত্তিতে অনেক মামলা এখনও চলমান রয়েছে।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারীতে তহমিদুজ্জামান ঢাকা জেলা সমবায় কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানের পরপরই টেস্ট অডিটের ভয় দেখিয়ে পল্লবী থানাধীন সোনার বাংলা বহুমূখী সমবায় সমিতি থেকে ৫ লাখ টাকা গ্রহন করার অভিযোগ রয়েছে।

তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গতরাতে তহমিদুজ্জামান ইনকিলাবকে বলেন, আমি এখন আর দায়িত্বে নাই। আমাকে বদলি করা হয়েছে। আপনার ঘুষের টাকা আনতে গিয়ে তিনজন গ্রেফতারসহ আপনার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম- দুর্নীতি ও সি-িকেট করার অভিযোগ রয়েছে। এ প্রশ্ন করতেই তিনি মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।