Image description
বাংলাদেশের আর্থিক খাত

বাংলাদেশে আর্থিক স্বচ্ছতা ফেরাতে আটটি সুপারিশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবার আর্থিক স্বচ্ছতা বিষয়ক বার্ষিক পর্যালোচনাভিত্তিক এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ‘২০২৫ ফিসক্যাল ট্রান্সপারেন্সি রিপোর্ট’-এর বাংলাদেশ অধ্যায়ে বলা হয়, পূর্ববর্তী সরকার বা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার যে বাজেট দিয়েছে তার বাজেট নথি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নীতিমালা অনুযায়ী প্রস্তুত করা হয়নি। এই পর্যালোচনার সময়ে বাংলাদেশে একটি অরাজনৈতিক অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পূর্ববর্তী বাজেট প্রণয়নকারী সরকারের জায়গায় দায়িত্ব গ্রহণ করে। অর্থাৎ আগের সরকারের নীতি অনুসরণ করেছে। অন্তর্বর্তী সরকার মূলত পূর্ববর্তী সরকারের বাজেট সংক্রান্ত সুপারিশ ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এবং আর্থিক স্বচ্ছতা উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য সংস্কার শুরু করে। এতে আরও বলা হয়, পূর্ববর্তী সরকার তাদের নির্বাহী বাজেট প্রস্তাবনা ও অনুমোদিত বাজেট জনসমক্ষে, এমনকি অনলাইনে প্রকাশ করে। তবে তারা বছর শেষে চূড়ান্ত প্রতিবেদন যুক্তিসঙ্গত সময়ে প্রকাশ করেনি। 

বাজেটে অন্তর্ভুক্ত তথ্য সাধারণভাবে নির্ভরযোগ্য বলে বিবেচিত হয়, যদিও বাজেট নথি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নীতিমালা অনুযায়ী প্রস্তুত করা হয়নি। এতে আরও বলা হয়, ঋণ সম্পর্কিত তথ্য জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ছিল। বাজেট নথিতে সরকারের পরিকল্পিত ব্যয় ও আয়, প্রাকৃতিক সম্পদ থেকে প্রাপ্ত রাজস্বসহ যথেষ্ট পরিমাণে উপস্থাপিত হয়। তবে নির্বাহী দপ্তরের সহায়ক ব্যয়ের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়নি এবং বাজেটে সরকারের আয়-ব্যয়ের পূর্ণাঙ্গ চিত্রও ছিল না। প্রকাশিত বাজেট নথিতে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক বরাদ্দ ও আয় অন্তর্ভুক্ত ছিল। সরকার পরিবর্তনের কারণে সরকারের সর্বোচ্চ নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান বার্ষিক হিসাব পর্যালোচনা করেনি, তবে কিছু সংক্ষিপ্তসার প্রতিবেদন যুক্তিসঙ্গত সময়ে প্রকাশ করে। সর্বোচ্চ নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী স্বাধীনতা বজায় রাখতে পারেনি। সরকার আইন বা বিধিমালায় প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণে চুক্তি ও লাইসেন্স দেয়ার মানদণ্ড ও প্রক্রিয়া নির্ধারণ করে এবং বাস্তবেও তা অনুসরণ করে। তবে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত সীমিত তথ্য প্রকাশিত হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষণা দেয় যে, প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণের ক্ষেত্রে সব ধরনের ক্রয় প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ হবে এবং পূর্ববর্তী সরকারের সরাসরি আলোচনার ভিত্তিতে চলমান বা গৃহীত সব চুক্তি স্থগিত করে।

বাংলাদেশের জন্য আর্থিক স্বচ্ছতা বৃদ্ধির জন্য ৮টি সুপারিশ উপস্থাপন করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। এর মধ্যে আছে- ১. বছর শেষে চূড়ান্ত প্রতিবেদন যুক্তিসঙ্গত সময়ে প্রকাশ করা। ২. আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নীতিমালা অনুসারে বাজেট নথি প্রস্তুত করা। ৩. বাজেটে নির্বাহী দপ্তরের সহায়ক ব্যয়ের বিস্তারিত উপস্থাপন করা। ৪. সরকারের আয়-ব্যয়ের পূর্ণাঙ্গ চিত্র বাজেটে প্রকাশ করা। ৫. সর্বোচ্চ নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আন্তর্জাতিক মানের স্বাধীনতা দেয়া এবং যথেষ্ট সম্পদ সরবরাহ করা, যাতে তারা সময়মতো পুরো বাজেটের সরাসরি ‘অ্যাক্সেস’ পেতে পারে। ৬. সময়মতো নিরীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ করা, যাতে বাস্তব অনুসন্ধান, সুপারিশ ও বিশ্লেষণ থাকে। ৭. প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণের জন্য চুক্তির মৌলিক তথ্য প্রকাশ করা। ৮. সরকারি ক্রয় চুক্তি সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করা।