Image description
একীভূত হচ্ছে এনসিপি-গণঅধিকার পরিষদ?

সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ছোট রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলোকে নিজেদের দিকে টানার চেষ্টা করছে বড় দলগুলো। নিজেদের ভোট ব্যাংক বাড়াতেই বড় দলগুলো এই কৌশল নিয়েছে। নির্বাচন সামনে রেখে এখন দলগুলোর কয়েকটি জোট বা পক্ষ আলাদা কাজ করছে। এসব জোট বা পক্ষের অবস্থানও ভিন্ন ভিন্ন। আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলন করার সময়ের রাজনৈতিক সঙ্গীদের বিএনপি এখনো তাদের জোটে ধরে রেখেছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী আন্দোলন করা জামায়াতে ইসলামী নতুন নির্বাচন ফ্রন্ট গড়ার কাজ করছে। এর বাইরে বাম ও মধ্যম ধারার আরও কয়েকটি দল তৃতীয় একটি জোট গঠনের চেষ্টা করছে। এই জোট গড়ার চেষ্টায় ভোটের রাজনীতি নতুন হিসাবনিকাশও শুরু হয়েছে। নির্বাচন সামনে রেখে পুরনো সঙ্গীদের বাইরে কিছু দলের সঙ্গে যোগাযোগ করছে বিএনপি। 

ভোটের জোটে নতুন আলোচনা শুরু হয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদের একীভূত হওয়ার বিষয়টি। এ নিয়ে দুই দলের নেতারা অনানুষ্ঠানিক আলোচনাও করেছেন। তবে একীভূত হলে দলের নাম কি হবে তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান মানবজমিন-এর কাছে আলোচনার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। এনসিপির একজন নেতাও এমন আলোচনার বিষয় জানিয়ে বলেন, দলের নাম বদলে একীভূত হতে চায় না এনসিপি।

ওদিকে ইসলামপন্থিদের ভোট এক বাক্সে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। তাদের এই প্রক্রিয়া এখন দৃশ্যমান। অন্তত সাতটি দল অভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নেমেছে। তাদের এই তৎপরতার বিপরীতে বিএনপিও পাল্টা কৌশল নিয়েছে। গত ৬ই এপ্রিল রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে হেফাজতের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি। পরে ১লা আগস্ট চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির বাবুনগর আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া আজিজুল উলুম মাদ্রাসায় হেফাজতে ইসলামের আমীর মাওলানা শাহ মুহিববুল্লাহ বাবুনগরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বিএনপি’র একটি দল। ওই সময় জোট প্রসঙ্গে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছিলেন, হেফাজতে ইসলাম অরাজনৈতিক সংগঠন। তবে হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে থাকা কয়েকটি রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে আমরা আলাপ-আলোচনা করবো।

বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন মানবজমিনকে বলেন, আমরা এখনো কারও সঙ্গে সমঝোতার ব্যাপারে আলোচনা করি নাই। নির্বাচন এগিয়ে আসলে তখন হতে পারে। আর যুগপৎ আন্দোলনের দল ও জোটগুলো আমাদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে, তারা তো আছে। ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতা হতে পারে। এই বিষয়টি আমরা লক্ষ্য করছি। 

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী মানবজমিনকে বলেন, হেফাজতের সঙ্গে যে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলো রয়েছে, সেগুলোর সঙ্গে বিএনপি’র নির্বাচনী সমঝোতা হতে পারে। তাদের সঙ্গে কারও কারও যোগাযোগ আছে, আর কারও কারও যোগাযোগ হচ্ছে।  

অন্যদিকে জুলাই সনদের বাস্তবায়নসহ পাঁচ দফা দাবিতে জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসসহ ধর্মভিত্তিক কয়েকটি দল যুগপৎ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের এই কর্মসূচি চলমান থাকবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। তবে তারা কোনো নির্বাচনী জোট গঠন করবে না। ভোট এক বাক্সে আনার চেষ্টা করছে। এই সমঝোতার ভিত্তিতে ধর্মভিত্তিক দল একক প্রার্থী দিয়ে একসঙ্গে নির্বাচন করার বিষয়ে সমঝোতা করতে চায়।

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার মানবজমিনকে বলেন, জোটের অগ্রগতি হলেই আমরা সাংবাদিকদের জানাবো। আর এক বাক্সে নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়টি সময় হলে দেখা যাবে। একটা ঐক্যের আগ্রহ ও আন্তরিকতা অনেক দলগুলোর মধ্যে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, সেই হিসেবে তো প্রচেষ্টা সবাই মিলে করতে হবে। এটা যখন একটা পরিণত রূপ লাভ করবে এবং বলার মতো হবে- তখন আমরা আপনাদের ডেকে বলবো। 
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও দলীয় মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান মানবজমিনকে বলেন, আমরা বারবার বলেছি, আমরা জোট করবো না। তবে নির্বাচনে এক বাক্সে থাকার সম্ভাবনা আছে। একটা নির্বাচনী সমঝোতা হতে পারে। আর একক প্রার্থী দিয়ে একসঙ্গে নির্বাচন করার বিষয়ে সমঝোতা হতে পারে। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর এই প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হতে পারে। জুলাই সনদের বাস্তবায়নসহ পাঁচ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলমান থাকবে বলেও জানিয়েছেন গাজী আতাউর রহমান।  

ওদিকে নতুন জোট গঠন নিয়ে আলোচনা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ ও জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ ৯টি রাজনৈতিক দল। তবে এই জোট এখনো দৃশ্যমান হয়নি। আলোচনা প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। সামনে এনিয়ে আরও খোলামেলা আলোচনা করবে তারা। নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া এবং সব ইস্যুতে ঐকমত্য হলেই এই জোট ঘোষণা দৃশ্যমান হতে পারে। সে কারণে এই জোট নিয়ে এখনই তারা কিছু বলছে না। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর হাতিরপুলের একটি রেস্তরাঁয় ৯টি দলের এই বৈঠক হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে প্রায় তিন ঘণ্টা এই বৈঠক হয়। বৈঠকে  গণতন্ত্র মঞ্চের ছয় দল- নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), গণসংহতি আন্দোলন, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ও ভাসানী জনশক্তি পার্টির নেতারা অংশ নেন। মঞ্চের বাইরে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) এবং গণঅধিকার পরিষদের নেতারাও বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠকে উপস্থিত দু’টি দলের শীর্ষ নেতা মানবজমিনকে জানিয়েছেন, নতুন জোট গঠন নিয়ে বৈঠকে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। জোট গঠনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলে ৯ দলের বাইরে আরও কিছু দল যোগ দিতে পারে।