
দুদিন আগে টেনিসের রাজা রজার ফেদেরারকে হারিয়ে মায়ামি ওপেনে নতুন ইতিহাস গড়েন নোভাক জোকোভিচ। সবচেয়ে বেশি বয়সি খেলোয়াড় হিসেবে কোনো এটিপি মাস্টার্স ১০০০ প্রতিযোগিতার সেমিফাইনালে নাম লেখান তিনি। ৩৭ বছর ১০ মাস বয়সে এই কীর্তি গড়েন জোকোভিচ।
এর আগে ২০১৯ সালে ৩৭ বছর ৭ মাস বয়সে ইন্ডিয়ান ওয়েলস এবং মায়ামি ওপেনের সেমিফাইনালে উঠে রেকর্ডটির মালিক হন সুইস কিংবদন্তি ফেদেরার।
তবে সেই সুখময় আবহটা আরও রঙিন করতে পারলেন না জোকোভিচ। কারণ ফাইনালেই যে তাকে পরাভূত করে বিশ্বকে রীতিমত তাক লাগিয়ে দিয়েছেন মাত্র ১৯ বছরের এক চেক তরুণ।
ইয়াকুব মেনসিক নামের এই তরুণ তুর্কি রোববার মায়ামির হার্ড রক স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে ৭-৬ (৭/৪), ৭-৬ (৭/৪) গেমে জোকোভিচকে হারিয়ে মায়ামি ওপেন জয় করেছেন।
যার মাধ্যমে সার্বিয়ান মহাতারকা তার ক্যারিয়ারের ১০০তম শিরোপা অর্জন থেকে বঞ্চিত হলেন।
অন্যদিকে বিশ্ব র্যাংকিংয়ে ৫৪ নম্বরে থাকা ১৯ বছর বয়সি মেনসিক তার শক্তিশালী টেনিস দক্ষতার মাধ্যমে তার প্রথম এপিটি ট্যুর শিরোপা অর্জন করেছেন।
ফাইনাল ম্যাচটি অবশ্য ভারি বৃষ্টির কারণে প্রায় ছয় ঘণ্টা দেরিতে শুরু হয়।তার ওপর মাঠে নামার পর দেখা যায়, সংক্রমণজনিত কারণে চোখের অস্বস্তিতে ভুগছেন জোকোভিচ। এমন অবস্থায় প্রথম সেটের মধ্যভাগে তাকে চোখের ড্রপও ব্যবহার করতে দেখা যায়।
বিপরীতে মেনসিক শুরু থেকেই প্রভাব বিস্তার করে খেলতে থাকেন। প্রথম সার্ভ গেমে জোকোভিচকে ব্রেক করে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যান।মূলত গড়নে লম্বা হওয়ায় এবং শক্তিশালী সার্ভিংয়ের সুবাদে আধিপত্য ধরে রাখতে পারছিলেন চেক তরুণ। তারপরও ৪-২ এ জোকোভিচ ব্রেক ব্যাক করে ম্যাচে ফেরেন।
সেটটি পরে সার্ভ ধরে রাখতে থাকে। তবে টাইব্রেকের সময় দুটি এসেস-সহ মেনসিকের শক্তিশালী সার্ভ তাকে প্রথম থেকেই নিয়ন্ত্রণে এনে দেয়। ৫-০ লিডে চলে যান এই তরুণ। যদিও জোকোভিচ ফিরতে চেষ্টা করেন, তবে শেষ পর্যন্ত মেনসিক একটি ওভারহেড ভলিতে সেটটি জয় করেন।
এটি ছিল টুর্নামেন্টে জোকোভিচের প্রথম হার। ম্যাচে তিনি দুবার পা পিছলে পড়েও যান এবং সেটের মাঝে ফুটওয়্যারও পরিবর্তন করেন।
মেনসিক এর আগে খেলা একমাত্র ম্যাচেও প্রথম সেটে একই মার্জিনে জোকোভিচকে হারিয়েছিলেন। যদিও সেবার তিন সেটে হেরে যান চেক তরুণ।তবে এবার মেনসিকের মনোভাব ছিল বেশ শক্তিশালী।
ম্যাচের দ্বিতীয় সেটটিও ছিল খুবই টানটান উত্তেজনাপূর্ণ। কিন্তু আবারও মেনসিকের সেই শক্তির জায়গা, টাইব্রেকের সময়ে জয় ছিনিয়ে নেন তিনি।এমনকি যখন জোকোভিচ একটি লং রিটার্ন করেন তখন মেনসিক জয়ের পর আনন্দিত হয়ে পিছনে পড়ে যান।
মাঠেই সাক্ষাৎকারে চেক তরুণ বলেন, ‘সত্যি বলতে, আমি জানি না কী বলব। অবিশ্বাস্য লাগছে, স্পষ্টতই।’
‘এটা সম্ভবত আমার জীবনের সবচেয়ে বড় দিন এবং আমি অসাধারণ খেলেছি। আমি সত্যিই খুশি যে ম্যাচের আগে পুরোপুরি শান্ত থাকতে পেরেছি।’
‘আমি শুধু অত্যন্ত খুশি অনুভব করছি এবং আমি মনে করি অনুভূতিগুলো পরে আসবে’, যোগ করেন তিনি।
মেনসিক তার ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন এই আশা নিয়ে যে, তিনি জোকোভিচের মতো একজন কিংবদন্তি হতে পারবেন এবং ট্রফি পাওয়ার পর চেক তরুণ সার্বিয়ান কিংবদন্তিকে বলেন, ‘একটি টুর্নামেন্টের ফাইনালে আপনাকে হারানো কোনো টেনিস খেলোয়াড়ের জন্য সবচেয়ে কঠিন কাজ।’
‘আমি নিশ্চিত, এটা ছিল প্রথম শিরোপা। অনেকগুলোর মধ্যে এটি ছিল শুধু একটিই,’ মেন্সিক যোগ করেন। তিনি জানান, প্রথম ম্যাচের আগে তার হাঁটুতে চোট ছিল এবং শেষ মুহূর্তের ফিজিওথেরাপি তাকে সাহায্য করেছে।
এদিকে ম্যাচ শেষে জোকোভিচ তার চোখের সমস্যা নিয়ে কিছু বলেননি। তবে চেক খেলোয়াড়ের পারফরম্যান্সের প্রশংসা করেন।
জোকোর ভাষায়, ‘এটা ইয়াকুবের স্মরণীয় মুহূর্ত, তার টিম, তার পরিবারের জন্যও। অভিনন্দন, অবিশ্বাস্য টুর্নামেন্ট। এটা আমার জন্য কষ্টের, তবে তার পারফর্ম ভালো ছিলো। একটি চাপের মুহূর্তে সে দারুণ পারফর্ম করেছে’।
উল্লেখ্য, এই ম্যাচটি ছিল ৩৭ বছর বয়সি জোকোভিচ এবং ১৯ বছরের ইয়াকুব মেনসিকের মধ্যে মার্স্টার্স ১০০০তম ফাইনালে সবচেয়ে বড় বয়সের পার্থক্য এবং ১৯৭৬ সাল থেকে যেকোনো ট্যুর-লেভেল ফাইনালের মধ্যে সবচেয়ে বড় বয়সের পার্থক্য।সূত্র: জিও নিউজ