Image description
 
 

নারায়ণগঞ্জে দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ ও ওসমান পরিবারের সেবক হিসেবে কাজ করা জাতীয় পার্টির দুই নেতা এখন দল পাল্টে এমপি হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে তারা ভর করেছেন চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ওপর।

 

চরমোনাই পীরের মুরিদ হয়ে এই দলের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে এবং স্থানীয় নেতাকর্মীদের ব্যবহার করে এমপি হতে চান এই দুই দোসর। ইতোমধ্যে একজন আনুষ্ঠানিকভাবে ইসলামী আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। অপরজনের যোগদানের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। বিষয়টি গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই সর্বমহলে নিন্দার ঝড় উঠেছে।

বিগত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারকে বৈধতা দিয়ে ১৫ বছর ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে নিরলসভাবে কাজ করে গেছে জাতীয় পার্টি। আর এই দলের মধ্যে পলাতক শেখ হাসিনার সবচেয়ে অনুগত ছিলেন তৎকালীন তথাকথিত বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদের বিশেষ সহকারী গোলাম মসিহ। পুরস্কার হিসেবে তাকে সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত করা হয়েছিল। এরপরও শেখ হাসিনার প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী জাতীয় পার্টির মূলধারার নেতাদের চাপে রাখতেন এবং দল ভাঙার চক্রান্তে লিপ্ত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

 

২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণের বিষয়ে গোলাম মসিহ ছিলেন অন্যতম ক্রীড়ানক। ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের পর কিছুদিন নিষ্ক্রিয় থাকলেও ফের সক্রিয় হন তিনি। তবে এবার বেশভূষা ও ভোল পাল্টে ইসলামী আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। ইতোমধ্যে তার জন্য নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে (সোনারগাঁ-সিদ্ধিরগঞ্জ) ইসলামী আন্দোলনের দলীয় প্রার্থীও পরিবর্তন করা হয়েছে।

 

গোলাম মসিহের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি কাদিয়ানি সম্প্রদায়ের লোক। যেখানে কাদিয়ানিদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণার দাবি উঠেছে সর্বমহলে, সেখানে একটি হকপন্থী ইসলামী দলের হয়ে নির্বাচন করবেন—এ বিষয়টি ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসলামী আন্দোলনের একাধিক কর্মী বলেন, “এটা আমাদের স্থানীয় কর্মী-সমর্থকদের সিলেকশন নয়। আমাদের প্রার্থী ছিলেন ফারুক মুন্সী। কিন্তু কেন্দ্রীয়ভাবে প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়েছে।” মনঃপূত না হলেও তাদের বাধ্য হয়ে কাজ করতে হবে বলেও জানান তারা।

অভিযোগ রয়েছে, গোলাম মসিহ সারা বছর শেখ হাসিনার বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়নে এবং জাতীয় পার্টির ভেতরে কোন্দল টিকিয়ে রেখে আওয়ামী লীগ সরকারকে বৈধতা দেওয়ার অন্যতম কারিগর ছিলেন। ৫ আগস্টের পর অস্তিত্ব সংকটে পড়ে লেবাস পাল্টে ইসলামী আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন তিনি। হাতপাখা প্রতীক নিয়ে সোনারগাঁ-সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় নির্বাচন করতে চান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সোনারগাঁয়ের জাতীয় নাগরিক পার্টির এক নেতা বলেন, “ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আওয়ামী লীগের পরেই ঘৃণিত দল জাতীয় পার্টি।” ২০১৪ সালের বিনা ভোটের নির্বাচন ও ২০১৮ সালের রাতের ভোটের নির্বাচনকে বৈধতা দেওয়ার কারিগরদের দলে নেওয়া হলে তা ২৪-এর ছাত্র-জনতার রক্তের সঙ্গে বেইমানি হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এদিকে গোলাম মসিহের আগমন নিয়ে জেলা ও মহানগর পর্যায়ের ইসলামী আন্দোলনের নেতারা নীরব রয়েছেন। তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যেও রয়েছে ক্ষোভ।

একইভাবে গুঞ্জন রয়েছে, ওসমান পরিবারের অন্যতম দোসর ও বন্দরের মুছাপুর অঞ্চলের ত্রাস মাকসুদ হোসেনকে নিয়েও। তিনি সম্প্রতি ইসলামী আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন এবং মনোনয়ন নিশ্চিত করতে চরমোনাই পীর সাহেবের দরবারে দেনদরবার করেছেন বলে শোনা যাচ্ছে। যদিও তিনি বিষয়টি নাকচ করেছেন।

মাকসুদ হোসেনের বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। গত ১৬ বছরে সেলিম ওসমানের হাত ধরে মুছাপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। মুছাপুর ও ধামগড় এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে তার বাহিনী।
৫ আগস্টের পরও হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগে অপারেশন ডেভিল হান্টে গ্রেপ্তার হয়ে কয়েক মাস কারাভোগ করেন তিনি।

সংশ্লিষ্টদের মতে, ইসলামী আন্দোলন ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে ভূমিকার কারণে প্রশংসিত হলেও স্বৈরাচারের দোসরদের প্রশ্রয় দিলে দলের ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।