গুলিবিদ্ধ হয়ে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়েছে। তাকে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি গতকাল সোমবার দুপুর ১টা ৫৫ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে। পরে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৫টা ৫০ মিনিটে সিঙ্গাপুরের সেলেতার এয়ারপোর্টে অবতরণ করে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি। সেখান থেকে ওসমান হাদিকে সরাসরি নেওয়া হয় সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে। সেখানকার অ্যাক্সিডেন্ট ইমার্জেন্সি বিভাগে রেখে তাকে উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
এদিকে, ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার তিন দিন পরে মামলা হয়েছে। ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের বাদী হয়ে রোববার রাতে রাজধানীর পল্টন থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে রাহুল ওরফে দাউদের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। মামলার একাধিক ধারায় আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, হত্যাচেষ্টা, বিপজ্জনক অস্ত্র ব্যবহার করে স্বেচ্ছায় গুরুতর আঘাত, দুষ্কর্মে সহায়তার অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলায় অভিযোগে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পলাতক কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা চব্বিশের ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর হতে প্রকাশ্য ও গোপন ষড়যন্ত্র করছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্ররোচনা, নির্দেশনা ও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রম, নাশকতা, ককটেল বিস্ফোরণ, পেট্রোল বোমা, গানপাউডার দিয়ে আগুন সন্ত্রাস, দেশি ও বিদেশি অস্ত্র গোলাবারুদের জোগানদান, অনলাইনে গুজব রটনা ও ভীতি প্রদর্শন ইত্যাদির মাধ্যমে দেশের সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করা, অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করা, জনমনে আতঙ্ক ও ভীতি তৈরি করা সর্বোপরি আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-২০২৬-কে বাধা প্রদান এবং আগ্রহী প্রার্থীদের মনোবলে আঘাত হানার মধ্য দিয়ে নির্বাচনকে নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে (হাদিকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা) শরিফ ওসমান হাদির পরিবার, তার রাজনৈতিক সহযোদ্ধাগণও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এ ছাড়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে আগ্রহী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।
ফয়সালের স্ত্রী ও শ্যালকসহ তিনজন রিমান্ডে: হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টা মামলার প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদের স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ ও অন্য আসামি মারিয়া আক্তার লিমাকে পাঁচ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। গতকাল সোমবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ আসামিদের আদালতে হাজির করে অভিযোগের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিন করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। পরে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জশিতা ইসলামের আদালত এ আদেশ দেন।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, হাদিকে গুলির আগে ফয়সাল তার স্ত্রী সাহেদা পারভীনের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা নেন। সেই টাকা গুলি করার পরে পালিয়ে যাওয়ার খরচ বাবদ ব্যবহার করেন। এ ছাড়াও পল্টনেই তাদের পালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছিল প্রাইভেটকার। শুক্রবার হওয়ায় যানজট ছাড়াই খুব সহজেই ঢাকা থেকে বেরিয়ে পড়েন ফয়সাল ও আলমগীর।
ফয়সাল ও আলমগীরের দেশত্যাগের বিষয়ে নিশ্চিত নয় বিজিবি: হাদিকে হত্যাচেষ্টা মামলার প্রধান আসামি ফয়সাল এবং হাদিকে গুলি করার সময় তাকে বহনকারী মোটরসাইকেলের চালক আলমগীর ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে পালিয়েছে কি না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত নয় বিজিবি। গতকাল বিজিবি ময়মনসিংহ সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সরকার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টাকারীরা ময়মনসিংহের সীমান্ত এলাকা দিয়ে যাতে ভারতে পালাতে না পারে সেজন্য ঘটনার দিন থেকেই সতর্ক অবস্থান নেয় বিজিবি। হামলাকারীরা ময়মনসিংহের সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়েছে কি না, এটি নিশ্চিত নয়। তবে গোয়েন্দা তথ্য আছে, নালিতাবাড়ির বরোয়ারি এলাকার চিহ্নিত মানব পাচারকারী ফিলিপ স্নাল শুক্রবার রাতে দুই বাংলাদেশি যুবককে ভারতে পাচার করেছে। তারাই হামলাকারী কি না তা নিশ্চিত হতে ফিলিপ স্নালকে খুঁজছে বিজিবি।’
এ ঘটনায় ফিলিপ স্নালের দুই সহযোগীকে আটক করেছে বলে জানিয়েছেন বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম। তারা হলেন—ফিলিপের মামা শ্বশুর বেঞ্জামিন চিরান (৪৫) ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু সীশল (২৮)। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।