Image description

ছাত্রত্ব না থাকলেও সরকারি তিতুমীর কলেজের ‘শহীদ মামুন হলে’ অবৈধভাবে অবস্থান করার অভিযোগ উঠেছে কলেজ শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জলিল আদিকের বিরুদ্ধে। তিনি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের (২০১৬-১৭) শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। 

অভিযোগ রয়েছে, তিনি দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে শহীদ মামুন ছাত্রাবাসের ৭০৩ নম্বর কক্ষে অবৈধভাবে সিট দখল করে অবস্থান করে আসছেন। হলে অবস্থান করা একাধিক শিক্ষার্থী জলিল আদিকের হলে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে সরজমিনে ছাত্রাবাসের ৭০৩ নম্বার কক্ষে গেলে, জলিল আদিককে কক্ষে পাওয়া যায়নি। তবে সেখানে তার ব্যবহৃত কাপড় ও ব্যক্তিগত সামগ্রী দেখা গেছে। 

হল প্রশাসনের নিয়ম অনুযায়ী কলেজের (২০২০-২০২১) শিক্ষাবর্ষের উপরের কোনো শিক্ষার্থী হলে অবস্থান করতে পারবেন না। 

এ ঘটনায় হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। তাদের অভিযোগ, যারা কলেজের নিয়মিত শিক্ষার্থী এবং নিয়মিতভাবে ক্লাস করেছে, তাদের অনেকেই সিট না পেয়ে বঞ্চিত হয়েছে। অথচ  ছাত্রদল নেতা জলিল আদিক রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে ছাত্রাবাসে অবস্থান করছেন। শিক্ষার্থীরা আরও অভিযোগ করেন, এসব বিষয়ে কলেজ প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, জলিল আদিক দীর্ঘদিন ধরে হলের ৭০৩ নাম্বার কক্ষে থাকেন। বিষয়টি মোটামুটি হলের সবাই জানেন।

এসব অভিযোগ নিজের বিরুদ্ধে অপপ্রচার দাবি করে জলিল আদিক বলেন, আমি হলে থাকি না। মাঝে মাঝে শুধু আড্ডা দিতে যায়। এর আগে ক্যাম্পাসের কিছু ছোট ভাইয়ের সঙ্গে কলেজের বিপরীতে একটি রুম ভাড়া নিয়ে থাকতাম। কিন্তু তারা সবাই হলে উঠে যাওয়ায় আমি একা হয়ে পড়ি। সে কারণে কখনো সকালে, কখনো বিকালে হলে গিয়ে আড্ডা দিই এবং চলে আসি। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কেউ কেউ অপপ্রচার চালাচ্ছেন।

৭০৩ নম্বর কক্ষের এক শিক্ষার্থী হলে আপনার অবস্থানের বিষয়টি স্বীকার করেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে আমি বাড়িতে গিয়েছিলাম। ২৬ তারিখ রাতে বাড়ি থেকে ঢাকায় ফিরেছি, সেদিন রাত বেশি হওয়ার কারণে বাসার গেট বন্ধ করে দেয়। শুধু সেই রাতটুকুই আমি হলের ৭০৩ নম্বর কক্ষে ছিলাম। হলে দীর্ঘদিন থাকার প্রশ্নই আসে না, কারণ আমার তো হলে কোনো সিট নেই। আমার বিরুদ্ধে একদল বিভিন্ন অপপ্রচার চালাচ্ছে।

এ বিষয়ে হলের তত্ত্বাবধায়ক ফারুকুল ইসলাম জানান, হলে যতগুলো সিট রয়েছে, তার সবগুলোরই নিয়মিত শিক্ষার্থীদের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাড়তি কোনো সিট খালি নেই। তবে একজনের সিটে আরেকজন থাকার মতো কিছু অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে। কয়েকদিন আগে হলের অনিয়মিত শিক্ষার্থী বা অছাত্রদের শনাক্ত করতে আমরা নোটিশ দিয়েছি। হলে যদি কোনো অছাত্র থেকে থাকে, তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, আমি মূলত হলের প্রশাসনিক বিষয়গুলো দেখি। আর ছাত্রসংক্রান্ত বা সিট সম্পর্কিত বিষয়গুলো আমার সহকারী তত্ত্বাবধায়ক দেখেন। এসব বিষয়ে তিনি আরও বিস্তারিত বলতে পারবেন।

হলের সহকারী তত্ত্বাবধায়ক কাজী মোহাম্মদ আল নূর বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। হলে অছাত্র থাকার কোনো সুযোগ নেই। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। যদি প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, এর আগে তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জলিল আদিকের বিরুদ্ধে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন সাঈদকে মারধরের অভিযোগ উঠেছিল। এ ছাড়া সম্প্রতি সংবাদ সংগ্রহের সময় তিতুমীর কলেজ সাংবাদিক সমিতির সহযোগী সদস্য মো. সাদিকুল ইসলামের ওপর হামলার ঘটনাতেও তার নাম উঠে এসেছে।