Image description

জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ। তিনি একজন শিক্ষক ও লেখক হিসেবেও পরিচিত। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জোটের প্রার্থী হিসেবে ঢাকা-১৩ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

আগামীর রাজনীতি, জোটের প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা, দেশের শিক্ষাব্যবস্থা, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন ববি হাজ্জাজ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তৌহিদুজ্জামান তন্ময়

জাগো নিউজ: আপনি এনডিএমের চেয়ারম্যান, আবার বিএনপির মনোনীত জোটের একজন প্রার্থী। পরিবর্তনটা কীভাবে দেখছেন?

ববি হাজ্জাজ: দল যেহেতু বৃহত্তর বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটে আছে, সেহেতু জোটের অংশীদার হিসেবে আমার নির্বাচন করা। আমার দলের একাধিক প্রার্থী আছেন। এই জোট থেকে তারা মনোনয়ন পেয়েছেন। তারা সবাই জোটের তরফ থেকেই নির্বাচন করবেন। তারা সবাই এনডিএমের প্রার্থী। যেমন বিএনপি ইতোমধ্যে ২৩৭ বিএনপির প্রার্থীর তালিকা ঘোষণা করেছে। বাকি যে সংখ্যাটা আছে এর ভেতরে বড় অংশই হবে জোটের প্রার্থী।

জাগো নিউজ: বরাবরই নতুন প্রজন্মের রাজনীতির কথা বলেন। এখন কতটা বাস্তবায়ন হবে?

ববি হাজ্জাজ: নতুন রাজনীতি নিয়ে আমরা অনেক আশাবাদী, অনেকগুলো কারণে। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে যে গণঅভ্যুত্থান হলো, এটাও নতুন রাজনীতির প্রতিফলন। চিরাচরিতভাবে যেভাবে রাজনীতি হতো, পৃষ্ঠপোষকতার রাজনীতি, গোষ্ঠীভিত্তিক রাজনীতি- এখন সময় বদলেছে। বদলে গেছে শিক্ষাব্যবস্থা, ইন্টারনেট-টেকনোলজির জন্য।

আগামীর প্রধানমন্ত্রী তারেক রহমানকেও তরুণ ধরছি। তারও বয়স ৬০ বছর ক্রস করেছে। তার ৩০ বছরের বেশি রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা আছে। যখন বিএনপি সরকারে ছিল তখনও তিনি দলে জুনিয়র পদে থেকে কাজ করেছেন, তার আগেও কাজ করেছেন এবং কয়েক বছর ধরে পুরো দলের নেতৃত্বই দিচ্ছেন

সবার চিন্তা-চেতনা অনেক বড়ভাবে প্রভাবিত হয়েছে। দেশে জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশ ৩৫ বছরের নিচে এবং ভোটারদের অর্ধেকের বয়স ৩৫ বছরের নিচে। তাদের প্রথম ভোট হয়তো হতে যাচ্ছে। এই যে ভিন্ন চিন্তা-চেতনার তরুণ সমাজ, তারা পুরোনোভাবে আর রাজনীতিকে দেখে না। আগামীর রাজনীতি ভিন্ন হবে এবং আমি আশাবাদী।

এই নির্বাচনে খুব ফলপ্রসূ রেজাল্ট আমরা পাবো। আমি এই নতুন নেতৃত্বের মুখ শুরু করবো তারেক রহমানকে দিয়ে। কারণ উনি জোট নেতা। আগামীতে আমরা আশাবাদী উনি (তারেক রহমান) সরকারের নেতা হবেন। তিনি ইতোমধ্যে প্রমাণ করেছেন তার নেতৃত্ব কতখানি পরিষ্কার, কতখানি সহনশীল ও কতখানি নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সেই জায়গা থেকে আশাবাদী সব জায়গায়ই নতুন রাজনীতি সৃষ্টি করতে সক্ষম হবো।

এই মুহূর্তে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী দেখছি না, আমি শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী

জাগো নিউজ: তরুণরা রাজনীতিতে জায়গা পায় না। এখন পরিবর্তন হবে?

ববি হাজ্জাজ: এখানে দুটো বড় প্রশ্ন থাকে। একটা হলো তরুণ বলতে আপনি কী বোঝান? যেমন মনে করেন আপনি আমাকে প্রথমে পরিচিতি দিলেন তরুণ বলে। আমি খুব খুশি হই কেউ তরুণ বললে, আমি পছন্দ করি। মানে আমি তারুণ্য ধরে রাখতে চাই। কিন্তু আমার বয়স ৫০ পার হয়ে গেছে। এখন আপনি যদি এটা বলেন তরুণ তাহলে- হ্যাঁ, তরুণদের জায়গা করা দরকার। কারণ সব প্রাপ্তবয়স্কই রাজনীতি করতে পারে। তবে দায়িত্বশীল একটা জায়গায় যাওয়ার জন্য অভিজ্ঞতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অভিজ্ঞতা একমাত্র সময়ের সঙ্গেই আসে।

আগামীর প্রধানমন্ত্রী তারেক রহমানকেও তরুণ ধরছি। তারও বয়স ৬০ বছর ক্রস করেছে। তার ৩০ বছরের বেশি রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা আছে। যখন বিএনপি সরকারে ছিল তখনও তিনি দলে জুনিয়র পদে থেকে কাজ করেছেন, তার আগেও কাজ করেছেন এবং কয়েক বছর ধরে পুরো দলের নেতৃত্বই দিচ্ছেন। এই অভিজ্ঞতাগুলো অর্জনের পর আজ তারেক রহমান তরুণ হিসেবে নেতৃত্ব দেওয়ার একটা জায়গায় এসেছেন।

বিজ্ঞাপন

এই মুহূর্তে আমি কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী দেখছি না। বিশ্বাস করি আমি শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী। কিন্তু সেটা আমার বিশ্বাস। কে জিততে পারে, কে দুর্বল এগুলো একমাত্র জনগণই নির্ণয় করতে পারে

জাগো নিউজ: ঢাকা-১৩ আসনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী কাকে মনে করছেন?

ববি হাজ্জাজ: খুব অল্প সময় হলো গণসংযোগ শুরু করেছি এবং আরও কয়েক দিন পর থেকে পুরোদমে মূল নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করবো। ইতোমধ্যে যেহেতু কিছুটা গণসংযোগ শুরু করেছি, ভোটারদের কিছুটা কাছে আসতে সক্ষম হয়েছি, সেই জায়গা থেকে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। ভোটারদের কাছ থেকে বা এলাকাবাসীর ভেতরে যারা রাজনৈতিক কর্মী তাদের কাছ থেকেও খুবই ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি। এই মুহূর্তে আমি কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী দেখছি না। বিশ্বাস করি আমি শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী। কিন্তু সেটা আমার বিশ্বাস। কে জিততে পারে, কে দুর্বল এগুলো একমাত্র জনগণই নির্ণয় করতে পারে। আমার জায়গা থেকে বিশ্বাসের কথা বলছি, যতখানি আমি দেখেছি, এই মুহূর্তে আমি কোনো শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী দেখিনি।

তবে নিশ্চয়ই আছে এবং আগামীতে থাকবে। তাদের জন্য আমরা তৈরি হয়েই কাজ করবো। গণতন্ত্রের সৌন্দর্যই তো এটা যে, জনগণ যেন অনেকগুলো অপশন পায়। তিন-চারটি, দুটি-পাঁচটি। ভালো প্রতিদ্বন্দ্বী থাকলে তখন জনগণ ভালো দিকগুলোর ভেতর থেকে বেছে নিতে পারে। আমাদের সেটাই প্রচেষ্টা থাকবে।

জাগো নিউজ: মানুষ আপনাকে কেন ভোট দেবে?

ববি হাজ্জাজ: এলাকার বেশিরভাগই আমাকে চেনেন। তারা শুধু জানতেন না যে এখানে আমি নির্বাচন করছি, কিন্তু আমাকে চেনেন। এটা হয়তো টেলিভিশন টকশো বা আমার বিগত দিনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং রাজনীতিতেও তো আমরা বহু বছর হয়ে গেলো।

এই মুহূর্তে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী দেখছি না, আমি শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী

জাগো নিউজ: মোহাম্মদপুর-আদাবর-শেরেবাংলা নগর অপরাধপ্রবণ এলাকা। আপনি নির্বাচিত হলে অপরাধ কমাতে পারবেন?

ববি হাজ্জাজ: ভোটারদের সঙ্গে যখন আমরা কথা বলছি বারবারই একটি কথাই উঠে আসছে ‘ক্রাইম’। অপরাধ কমাতে পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলছি, থানার অফিসারদের সঙ্গে কথা বলছি। প্রযুক্তিবিদের সঙ্গে কথা বলছি- কারণ ঢাকা-১৩ কেন্দ্রিক একটি অ্যাপস তৈরি করা হবে। সেই অ্যাপসে কেউ বিপদে পড়লে মুহূর্তে তিনি সাহায্য পাবেন। সব এলাকায় সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হবে। সিসি ক্যামেরার সঙ্গে অ্যাপসের সংযোগ থাকবে।

দেশের জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ ৩৫ বছরের নিচে। এটি একটি বিশাল ব্যাপার। যদি আমরা তাদের সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারি তাহলে এই দেশ অন্য লেভেলে পৌঁছে যাবে

জাগো নিউজ: দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?

ববি হাজ্জাজ: বোর্ড স্ট্রাকচার, কারিকুলাম স্ট্রাকচার, প্রাইমারি লেভেল, বাংলা মিডিয়াম, ইংলিশ মিডিয়াম, মাদরাসা, পলিটেকনিক্যাল, পরীক্ষার সিস্টেমসহ সবকিছু নিয়ে বৃহত্তর একটি কাজ শিগগির প্রকাশ হচ্ছে। সেখানে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার পরিকল্পনা নিয়ে সবকিছু রয়েছে।

জাগো নিউজ: আগামী ১০ বছরে আপনি কেমন বাংলাদেশ দেখতে চান?

ববি হাজ্জাজ: দেশের জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ ৩৫ বছরের নিচে। এটি একটি বিশাল ব্যাপার। যদি আমরা তাদের সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারি তাহলে এই দেশ অন্য লেভেলে পৌঁছে যাবে। যদি সম্ভব হয় তাহলে আগামী দেড়শ বছরেও বাংলাদেশকে পিছিয়ে থাকতে হবে না।

জাগো নিউজ: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

ববি হাজ্জাজ: জাগো নিউজ পরিবারকেও ধন্যবাদ।