Image description
মনোনয়নবঞ্চিতদের তৎপরতা

সংসদ নির্বাচনে বেশ কয়েকটি আসনে দলীয় মনোনয়নবঞ্চিতদের তৎপরতায় বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ বিএনপি। প্রায় ২০টি জেলায় একাধিক আসনে প্রার্থী পুনর্বিবেচনায় আন্দোলন চলছে। কোথাও কোথাও সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে। মনোনয়ন নিয়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। যেসব আসনে কোন্দল রয়েছে ওই আসনে কমিটির সদস্যরা দলীয় প্রার্থী ও মনোনয়নবঞ্চিতদের সঙ্গে কথা বলে কোন্দল নিরসনের চেষ্টা করছেন। যদিও এখন পর্যন্ত কোনো আসনেই মনোনয়নকেন্দ্রিক গ্রুপিং ও কোন্দল নিরসন হয়নি; বরং দলীয় সম্ভাব্যপ্রার্থী রিভিউয়ের দাবি জানিয়েছেন মনোনয়নবঞ্চিত নেতারা। ইতিমধ্যে কয়েকজন রিভিউয়ের আবেদন করেছেন। আরও কয়েকজন লিখিত রিভিউ আবেদন করবেন। প্রার্থী পুনর্বিবেচনা মাদারীপুর-১ (শিবচর), ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর), ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া), কুষ্টিয়া-৪, মাগুরা-২, টাঙ্গাইল-৩, চট্টগ্রাম-১২, গাইবান্ধা-৪, নরসিংদী-৪সহ বিভিন্ন আসনে বিক্ষোভ, মশাল মিছিল, জনসভা এবং সংবাদ সম্মেলন করছেন মনোনয়নবঞ্চিতদের কর্মী ও সমর্থকরা। তবে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়ার পর অভ্যন্তরীণ কোন্দল আর থাকবে না বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

বহিষ্কারের ভয়ে অনেক মনোয়নপ্রত্যাশী নেতা প্রকাশ্যে এখন আসছেন না। তাদের কর্মী ও সমর্থকরা বিক্ষোভ এবং সংবাদ সম্মেলনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। দলীয় মনোনয়ন পাননি এমন ৪ জন প্রার্থীর সঙ্গে মানবজমিনের কথা হয়েছে। তাদের দাবি জনগণ ও ভোটারদের সঙ্গে যাদের সম্পৃক্ততা নেই, তাদেরকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। 

বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতা, দলীয় প্রার্থী এবং মনোনয়ন পাননি এমন নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মনোনয়ন পাননি এমন কর্মী ও সমর্থকদের তৎপরতায় বিএনপি’র দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন। এই অবস্থা চলতে থাকলে নির্বাচনের ফলে এর প্রভাব পড়বে বলে স্থানীয় নেতাকর্মীরা মনে করছেন। 

সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ২৩৬টি আসনে দলীয় প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করছে বিএনপি। বাকি  ৬৪টি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি। দলের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে- এই তালিকা চূড়ান্ত নয়। দলের স্থায়ী যদি কমিটি মনে করে, পার্লামেন্টারি বোর্ড যদি মনে করে- তারা কোনো আসনে পরিবর্তন আনবেন-সেটা নিঃসন্দেহে নিয়ম মেনে পরিবর্তন নিয়ে আসবেন। বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন মানবজমিনকে বলেন, মনোনয়ন নিয়ে কোন্দল নিরসনে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান একটা কমিটি করে দিয়েছেন। তারা আলাপ-আলোচনা করছেন। যারা বিক্ষোভ করছেন, তাদেরকেও ডেকে বোঝানো হচ্ছে।

গত বুধবার চাঁদপুর-২ আসনে দলীয় প্রার্থী রিভিউয়ের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি’র নেতাকর্মীরা। জেলা বিএনপি’র সদস্য ও ড্যাব ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি প্রফেসর ডা. সরকার মাহবুব আহমেদ শামীমকে এ আসনে মনোনয়ন দেয়ার দাবি জানান তারা। এদিন রসুলপুর হাজী চান বক্স সরকার দাখিল মাদ্রাসা মাঠে চাঁদপুর মতলব উত্তর উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত এক জনসভায় তারা এ দাবি জানান। 

অন্যদিকে ইতিমধ্যে নেতিবাচক তথ্য পাওয়ায় মাদারীপুর-১ (শিবচর) আসনে কামাল জামান মোল্লার প্রার্থী স্থগিত করা হয়েছে। আরও বেশ কয়েকটি আসনে প্রার্থিতা স্থগিত হতে পারে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এম ইকবাল হোসেইনকে পরিবর্তনের দাবিতে গৌরীপুরে বিক্ষোভ সমাবেশ করে আসছেন উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক তায়েবুর রহমান হিরনের সমর্থকরা। এতে দু’পক্ষের সংঘর্ষে প্রাণ হারান উত্তর জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি তানিজল আহমেদ মিঠু। 
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনে সাবেক এমপি মুশফিকুর রহমানকে সম্ভাব্য মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। এই আসনে অপর মনোনয়নপ্রত্যাশী কবির আহমদ ভূঁইয়ার পক্ষে তার সমর্থকরা সক্রিয় রয়েছেন। 

কুষ্টিয়া-৪ আসনে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে সাবেক এমপি সৈয়দ মেহেদি আহমেদ রুমিকে। এই আসনে জেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ সাদী মনোনয়ন চাইছেন। তার সমর্থকরাও মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। 
মাগুরা-২ আসনে প্রার্থী করা হয়েছে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরীকে। এখানে সাবেক এমপি কাজী সলিমুল হক কামাল ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম নয়নের সমর্থকরা নিতাই রায়ের মনোনয়নের বিরোধিতা করে মাঠে রয়েছেন। 

টাঙ্গাইল-৩ আসনে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হক নাসিরকে। তিনি এই আসনে বহিরাগত দাবি করে তার প্রতিপক্ষ অপর দুই গ্রুপ নাসিরের মনোনয়নকে প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন করছেন। এর মধ্যে সাবেক এমপি ও মন্ত্রী লুৎফর রহমান খান আজাদ ছাড়াও দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মাইনুল ইসলামের অনুসারীরা কর্মসূচি পালন করছেন। 
চট্টগ্রাম-১২ আসনে এনামুল হককে মনোনয়ন দিয়েছে দল। এখানে সৈয়দ সাদাত আহমেদের সমর্থকরা তার মনোনয়নের পক্ষে মাঠে রয়েছেন। 

সিরাজগঞ্জ-৩ আসনে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে আইনুল হককে। তাকে মনোনয়ন না দেয়ার জন্য কেন্দ্রে আবেদন করেছেন অন্য তিন মনোনয়নপ্রত্যাশী। 
গাইবান্ধা-৪ আসনে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে সাবেক এমপি মোহাম্মদ শামীম কায়সার লিঙ্কনকে। এই আসনে জেলা বিএনপি’র সহ- সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদকে মনোনয়ন দেয়ার দাবি করছেন তার কর্মী-সমর্থকরা। 
নরসিংদী-৪ আসনে বিএনপি’র সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুলের নাম ঘোষণা করেছে বিএনপি। এখানে ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল নির্বাচন করতে আগ্রহী। এখনো এই দাবি নিয়ে মাঠে আছেন তার কর্মী-সমর্থকরা। 

এ ছাড়া গোপালগঞ্জ-২ সংসদীয় আসনে বিএনপি’র সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ডা. বাবর আলীর নাম ঘোষণাকে কেন্দ্র করে তৃণমূল ও মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত আবেদনে প্রার্থী তালিকা পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে জেলা বিএনপি’র সিনিয়র নেতারা। 

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, যেসব আসনে প্রার্থী নিয়ে সমস্যা হচ্ছে সেখানকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি আসনের প্রার্থী নিয়ে নতুন করে ভাবছেন দলের শীর্ষ নেতারা। এর বাইরে এখনো যেসব আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দল, জোট ও সমমনাদের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে এসব আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত হবে। সূত্রের দাবি, শেষ পর্যন্ত প্রার্থী তালিকায় কিছুটা পরিবর্তন আসতে পারে। নতুন যেসব আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হবে সেখানেও মাঠের পরিস্থিতি বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে। 

বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী মানবজমিনকে বলেন, বড় দলে অনেক যোগ্য প্রার্থী থাকে। সেজন্য প্রাথমিক তালিকা ঘোষণার পর কিছু মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থী ও তাদের কর্মী এবং সমর্থকরা অসন্তুষ্ট থাকে। যখন চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়া হয়, তখন সবাই একত্রিত হয়ে যায়। ওই সময় দল সবচেয়ে বড় হয়ে যায়।