Image description

 

 

 

গত ২৪ মার্চ ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে দেওয়া পাঁচ পৃষ্ঠার জবানবন্দিতে সাবেক আইজিপি মামুন জানান, ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই থেকে আন্দোলন চলাকালীন প্রতিদিন রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসভবনে বৈঠক হতো।
বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ছাড়াও উপস্থিত থাকতেন:

 

* দুই সচিব
* এসবির প্রধান মনিরুল ইসলাম
* ডিবির হারুন অর রশীদ
* র‌্যাবের ডিজি
* আনসার ডিজি
* এনটিএমসির জিয়াউল আহসান

এ বৈঠক থেকেই আন্দোলন দমন সংক্রান্ত *মূল পরিকল্পনা ও নির্দেশনা দেওয়া হতো* বলে জানান মামুন।

 

জবানবন্দিতে বলা হয়, আন্দোলন দমন কৌশলের অংশ হিসেবে ছয়জন সমন্বয়ককে গ্রেফতার করে ডিবি অফিসে নেওয়া হয়, যেখানে তাদের উপর মানসিক চাপ প্রয়োগ করে আন্দোলন প্রত্যাহারে বাধ্য করা হয়।
এ প্রসঙ্গে মামুন বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডিবি প্রধান হারুনকে “জিন” নামে ডাকতেন, কারণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে তাকে সবচেয়ে কার্যকর মনে করা হতো।

চাঞ্চল্যকরভাবে মামুন আরও জানান, আন্দোলন দমন কৌশলের অংশ হিসেবে হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালিয়ে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়, যার নেতৃত্বে ছিলেন তৎকালীন র‌্যাব ডিজি হারুন অর রশীদ।
এছাড়া তিনি জানান, লেথাল উইপেন ব্যবহারে সবচেয়ে উৎসাহী ছিলেন ডিএমপির তৎকালীন কমিশনার হাবিবুর রহমান হাবিব ও ডিবি প্রধান হারুন।

 

 

 

মামুন দাবি করেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাকে সরাসরি জানান, আন্দোলন দমন করতে  শেখ হাসিনার নির্দেশেই মারণাস্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
তিনি বলেন, "মারণাস্ত্র ব্যবহার এবং আন্দোলনপ্রবণ এলাকায় ব্লক রেইড ছিল রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।"

 

জবানবন্দিতে আরও বলা হয়, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ একাধিক প্রভাবশালী রাজনীতিক মারণাস্ত্র ব্যবহারের পক্ষে পরামর্শ ও উসকানি দিয়েছেন।

 

সরকার পতনের দিন অর্থাৎ ৫ আগস্ট বিকেলে একটি হেলিকপ্টারে করে মামুন পুলিশ সদর দফতর থেকে তেজগাঁও বিমানবন্দর হয়ে সেনানিবাসে আশ্রয় নেন।

 

গত ১০ জুলাই, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এক মামলায় চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করেন এবং পুরো ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, “আমি এ মামলায় রাজসাক্ষী হতে চাই এবং সত্যি যা ঘটেছে তা ট্রাইব্যুনালের সামনে তুলে ধরতে চাই।”
পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তার রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন গ্রহণ করে এবং কারাগারে আলাদা নিরাপত্তা কক্ষে রাখার নির্দেশ দেয়।

 

জবানবন্দির শেষাংশে তিনি আন্দোলন দমনে গুলি চালানো ও হতাহতের ঘটনায় অনুতপ্ত প্রকাশ করেন এবং ক্ষমা চান। তবে জবানবন্দিতে তিনি নিজের সরাসরি সম্পৃক্ততা নিয়ে কোনো বিস্তারিত তথ্য দেননি।