Image description

ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনের মুখে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার সরকার পতনের পর ৮ আগস্ট দায়িত্ব গ্রহণ করে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। এরপর ছাত্র-জনতার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সংস্কারের উদ্যোগ নেয় সরকার। 

বিভিন্ন কমিশনের সুপারিশ ও রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে ইতিমধ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। সংস্কারের এ ধারাবাহিকতা রক্ষা হলে আগামীতে দেশের শাসন কাঠামোতে বড় ধরনের পরিবর্ত আসতে পারে।

 
 

 

রাজনৈতিক দলগুলো যেসব বড় ইস্যুতে একমত হয়েছে :

এক. এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন, এমন বিধান সংবিধানে যুক্ত করা। এই সুপারিশ কার্যকর হলে দেশে দীর্ঘমেয়াদে শেখ হাসিনার মতো স্বৈরশাসকের উত্থানের পথ রুদ্ধ হবে। 

দুই. সংসদে উচ্চকক্ষ রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে ঐকমত্য কমিশন। উচ্চকক্ষ শাসন বিভাগকে জবাবদিহির পাশাপাশি নিম্নকক্ষে পাস হওয়া প্রতিটি আইনের রিভিউতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

 
এর ফলে সংসদে এক ধরনের ভারসাম্য তৈরি হবে।

 

তিন. সংসদে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি বাস্তবায়ন হচ্ছে। আজ ঐকমত্য কমিশন জানিয়েছে, সংসদের উচ্চকক্ষে ১০০ আসন থাকবে। এসব আসনে প্রতিনিধি মনোনীত হবে পিআর পদ্ধতিতে।

 

চার. গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক চুক্তির অনুমোদন, সংশোধন ইত্যাদি সংসদের উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ উভয় থেকে পাস করিয়ে নিতে হবে। কোনো আলোচনা না করে, জনগণকে না জানিয়ে কোনো চুক্তি করা যাবে না। 

পাঁচ. হাইকোর্টে পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের পর গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রভিশনের ক্ষেত্রে সংবিধানে গণভোটের বিধান ফিরে এসেছে। এ ছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরাতেও একমত হয়েছে দলগুলো।

ছয়. সংসদে বিরোধী দলের গুরুত্ব বৃদ্ধি করা হয়েছে।

 
সংস্কার প্রস্তাব কার্যকর হলে ডেপুটি স্পিকার পদে বিরোধী দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলোতে আনুপাতিক হারে সব দলের অংশগ্রহণ থাকবে। অর্থাৎ, বিরোধী দলগুলো সংসদে যে কটি আসন পাবে, তার অনুপাতে সংসদীয় কমিটির সভাপতি পদ পাবে।

 

সাত. স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক আর থাকছে না। অর্থাৎ সংস্কারের পর আগামীতে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলো অনুষ্ঠিত হবে সাধারণ প্রতীকে। 

আট. সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ পরিবর্তন হচ্ছে। এতে অর্থবিল ও আস্থা ভোট ছাড়া অন্য যেকোনো বিষয়ে সংসদ সদস্যরা দলের বিপক্ষে ভোট দিতে পারবেন। 

নয়. নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে স্বাধীন করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের আলাদা সচিবালয় হতে পারে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে একটি স্বাধীন বিচার বিভাগীয় নিয়োগ কমিশন গঠিত হচ্ছে। হাইকোর্ট বিভাগের বেঞ্চগুলো বিভাগীয় পর্যায়ে স্থানান্তরিত করার বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। 

দশ. আগামীতে দেশে স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন হবে। ধারণা করা হচ্ছে, এর ফলে প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুলিশকে আর রাজনৈতিক হাতিয়ার বানানো যাবে না।