Image description

জুলাই বিপ্লবে ফ্যাসিবাদ শাসনের অবসানের পর পাল্টে গেছে দেশের রাজনীতির চিত্র। বক্তব্য বিবৃতিতে বিভিন্ন ইস্যুতে কিছু মত পার্থক্য থাকলেও আওয়ামী লীগ ছাড়া দেশে ক্রিয়াশীল সব দলই এখন নির্বাচন মুখি হচ্ছে। ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ের আড়ালে সারাদেশ বয়ে চলছে ভোটের রাজনীতির আমেজ। শহর থেকে বন্দরে গ্রাম পাড়া মহল্লায় সবখানেই এখন রাজনৈতিক নেতাদের উপস্থিতি। দীর্ঘ ১৫ বছর পর দেশের প্রতিটি এলাকা যেন রাজনৈতিক নেতা-কর্মি সমর্থকদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।

 

খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, সব দলের অধিকাংশ নেতাই এখন নিজ নিজ এলাকায় রয়েছেন। আর যারা ঢাকা শহরে ঈদ করেছেন তারাও গ্রামমুখি হচ্ছেন। আবার অনেকে ঈদের কয়েক দিন আগে থেকেই নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকায় রয়েছেন।প্রতিটি নির্বাচনি এলাকায় সরগরম হয়ে উঠেছে ভোটের রাজনীতি। ঢাকাসহ সারা দেশে ঈদ শুভেচ্ছার নামে বইছে নির্বাচনি হাওয়া।

 

নিজ নিজ আসনে পুরোদমে প্রচার কার্যক্রমে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। ঈদের দিন গভীর রাত নাগাদ গণসংযোগে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেছেন তারা। দলের অবস্থান তুলে ধরার পাশাপাশি দিচ্ছেন বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি। ঈদ উপলক্ষে সম্ভাব্য প্রার্থীদের শুভেচ্ছা পোস্টারে ছেয়ে গেছে নির্বাচনি এলাকা।

 

ঈদের টানা ছুটিতে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে পরিকল্পনা ও ব্যাপক গণসংযোগের মাধ্যমে নির্বাচনের প্রস্তুতি অনেকটা এগিয়ে রাখতে মাঠে বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ অন্য দলগুলোর হেভিওয়েট প্রার্থীরাও। সম্ভাব্য প্রার্থীরা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে এলাকামুখী হওয়ায় সারা দেশে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে ঈদকেন্দ্রিক ভোটের রাজনীতি।

 

সম্ভাব্য অধিকাংশ প্রার্থী এলাকায় অবস্থান করছেন। ঈদের ছুটিতে ঈদ পুনর্মিলনী-শুভেচ্ছাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছেন তারা। জামায়াতে ইসলামী সব দলের আগে শতাধিক আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছে। তারা আরও আগে থেকেই প্রচার শুরু করেছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারাও বসে নেই। তারাও নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকায় গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন। এ ছাড়া ১২ দলীয় জোট, লেবার পার্টি, ইসলামী আন্দোলনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের পোস্টার-ব্যানার শোভা পাচ্ছে নির্বাচনি এলাকায়।

 

হেভিওয়েট প্রার্থী বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমদ গত রোববার থেকে নিজ নির্বাচনি এলাকা কক্সবাজারের উপকূলীয় উপজেলা পেকুয়ায় গণসংযোগে ব্যস্ত সেময় পার করছেন।বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার ঈদে খুলনায় ব্যাপক গণসংযোগ করছেন। গত ২৪ মার্চ থেকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম নিজের নির্বাচনি এলাকা আটোয়ারী উপজেলায় গণসংযোগে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এভাবে সব দলের নেতারাই এখন ঈদ শুভেচ্ছার আড়ালে নিজ নিজ এলাকায় গণসংযোগ করছেন। এভাবে সব দলের নেতারাই নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান নিয়ে গণসংযোগে ব্যস্ত রয়েছেন।

 

 

বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকার এরই মধ্যে ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচনের সম্ভাব্য রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে। প্রতিটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনের জন্য মুখিয়ে আছে। তাই সম্ভাব্য প্রার্থীরা আগেভাগেই মাঠে নেমে পড়েছেন। এর আগে অনেকেই দীর্ঘদিন নিজ নির্বাচনি এলাকায় গণসংযোগ তো দূরের কথা, যেতেও পারেননি। তারা এখন এলাকায় বেশি সময় দিচ্ছেন। ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে পোস্টার-ব্যানারে শোভা পাচ্ছে গ্রাম বাংলার পাড়া মহল্লা। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের পতনে সম্মুখ সারিতে ছিলেন ছাত্র ও তরুণরা। তাই এবারের নির্বাচনে বড় ফ্যাক্টর হতে পারে তারুণ্যের ভোট। সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাই তরুণদের দিকে বেশি মনোযোগী।

 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনের দিন তারিখ-ঘোষণা না হলেও ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে এটা ধরে নিয়েই সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে গণসংযোগ শুরু করে দিয়েছেন।

 

এ প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনি প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। ঈদ সামনে রেখে স্থানীয় পর্যায়ে সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাদের জনসম্পৃক্ততা বাড়াবেন, এটাই স্বাভাবিক।

 

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ঈদে নেতাকর্মীরা যার যার এলাকায় রয়েছেন। দলের নেতাকর্মীদের জনগণের পাশে থাকতে বলা হয়েছে। জনগণের সুখ-দুঃখ ভালো-মন্দ দেখবেন। কোনো রাজনৈতিক বিতর্কে জড়ানো যাবে না এই নির্দেশনা দেওয়া আছে।

 

রাজশাহী সদর আসনের বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী ও দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু বলেন, বিগত ১৫ বছর ফ্যাসিস্ট হাসিনার দুঃশাসনে সারাদেশই যেন কারাগার ছিল। ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেনি দেশের জনগণ। ফলে বর্তমানে হাসিনামুক্ত বাংলাদেশে রাজনৈতিক নেতা কর্মী ও সমর্থকরা ঈদ উৎসব উদযাপন করছেন পরম আনন্দে, পাশাপাশি গণসংযোগও করছেন। তিনি মনে করেন, নির্বাচন যত তাড়াতাড়ি হবে ততোই দেশ ও জনগণের জন্য কল্যাণকর হবে।