Image description
 

রংপুরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের ভর্তি প্রবণতা কমে যাচ্ছে। অভিভাবকরা মাদ্রাসা ও কিন্ডারগার্টেনে সন্তানদের ভর্তি করায় আগ্রহী হয়ে পড়ছেন। ফলে প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থী সংকটে পড়েছে। 

এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, মহানগরীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১২২টি, ১টি পিটিআইসহ রংপুর সদর থানায় ১২৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। জেলায় রয়েছে ১ হাজার ৪৫৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী সংকটের কারণ সম্পর্কে অভিভাবকরা বলছেন, শিক্ষার অব্যবস্থা ও অসঙ্গতি, মানহীন শিক্ষা, শিক্ষকদের উদাসীনতা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো সংকটসহ নানা কারণে সরকারি প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে তারা সন্তানদের ভর্তি করাচ্ছেন না। 

এসব বিদ্যালয়ে পড়াশোনার মান ভালো না হওয়ার কারণে চলতি ২০২৬ সালে ছাত্রছাত্রী ভর্তির সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে আসছে। এতে প্রাথমিক শিক্ষার অবস্থা নাজুক পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা শিশুদের মূল ভিত্তি; কিন্তু বিদ্যালয়ের পরিবেশ, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি, শিক্ষকের সঠিক দায়িত্ব, প্রাথমিক শিক্ষার মনিটরিং না করা গেলে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি সংখ্যা আগামীতে আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

যারা অসচ্ছল অসহায় তাদের ছেলে-মেয়েরাই শুধুমাত্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে। যারা একটু সচ্ছল তারা সন্তানদের মাদ্রসায় ও বেসরাকারি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে ভর্তি করাচ্ছেন। 

রংপুর সদর উপজেলা ও মেট্রোপলিটন ৬টি থানার অন্যান্য উপজেলায় প্রায় আড়াই হাজারের অধিক মাদ্রাসা ও কিন্ডারগার্টেন চালু আছে। সম্প্রতি নতুন মাদ্রাসা পাড়ায়-মহল্লায় গড়ে তোলার প্রবণতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিভিন্ন বাসাবাড়ি ভাড়া নিয়ে গড়ে উঠছে। কিছু নিজস্ব জমিতে নির্মিত স্থাপনায় পরিচালিত হচ্ছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রংপুরে ১৩০টি কিন্ডারগার্টেন তালিকাভুক্ত রয়েছে। অপরদিকে ২০২৬ সালে রংপুর সদর উপজেলা ৬টি মেট্রো থানা, সিটি করপোরেশনের ৩৩টি ওয়ার্ডে, পাড়া-মহল্লায় গড়ে উঠেছে শিশুদের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রতিদিন নগরজুড়ে পত্রিকা, হ্যান্ডবিল, মাইকযোগে ভর্তির প্রচারণা অব্যাহত রেখেছে। যারা বৃত্তশালী তারাই এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তাদের শিশুদের ভর্তি করাচ্ছেন। মাদ্রাসাগুলোতেও ঠিক একই অবস্থা। বেসরকারি মাদ্রাসায় কিন্ডারগার্টেনভিত্তিক সেখানে ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। 

রংপুরের ঐতিহ্যবাহী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে ইচ্ছুক নয় অনেক অভিভাবক। প্রাথমিক শিক্ষা মুখ থুবড়ে পড়েছে। কামালকাছনা এলাকার বাসিন্দা অভিভাবক সফিয়ার রহমান, গুপ্তপাড়ার হারুন অর রশিদ ও শোভা রানী জানান- সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা না হওয়ার কারণেই শিশুদের ভালো পড়াশোনার জন্য রংপুরে বেসরকারি কিন্ডারগার্টেনে ঝুঁকে পড়েছেন অভিভাবকরা। তারা প্রাথমিক শিক্ষার ভিত্তি মজবুত করতে বাংলাদেশ সরকারের গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার বাস্তব পদক্ষেপ নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষার সময়োপযোগী করার দাবি জানান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, যেসব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার মান খারাপ সেখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। তবে আমরা এসব নিয়ে কাজ করছি। শিক্ষার মান ভালো করার জন্য শিক্ষকদের সাথে কথা বলছি। 

তিনি আরও বলেন, জেলায় রয়েছে ১ হাজার ৪৫৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এর বিপরীতে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় অলিতে গলিতে কিন্ডারগার্টেন স্কুল ও মডেল মাদ্রাসার রয়েছে। অভিভাবকরা সেখানে তাদের সন্তানদের ভর্তি করাতে আগ্রহী বেশি। কারণ সবাই এখন ব্যস্ত থাকেন নানা কাজে তাই সন্তানকে ঘরের পাশেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া শেখাতে আগ্রহী।