Image description

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝুঁকি এড়াতে বিকল্প প্রার্থী রাখছে বিএনপি। মূল প্রার্থীর পাশাপাশি বেশ কিছু আসনে বিকল্প প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে দলটি। বয়োবৃদ্ধ, অসুস্থ ও ঋণখেলাপি সহ নানা কারণে কোনো প্রার্থী যদি নির্বাচনে অযোগ্য হন তাহলে সেসব আসনে বিকল্প প্রার্থীরা দলের চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন।

গুলশান কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অনেক আসনে প্রাথমিকভাবে ঘোষিত ধানের শীষের প্রার্থীদের পাশাপাশি দলের বিকল্প প্রার্থীদের মনোনয়নের চিঠি দেয়া হয়েছে। যেসব প্রার্থীর চিঠিতে ‘সংযুক্তি-২’ লেখা তিনি দলের বিকল্প প্রার্থী। কোনো কারণে প্রাথমিক চূড়ান্ত প্রার্থী মনোনয়ন যাচাই-বাছাইয়ে অযোগ্য ঘোষিত হলে বিকল্প প্রার্থীকে দলের চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দেয়া হবে। এদিকে গতকাল মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষদিনে বেশ কিছু আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন মনোনয়নবঞ্চিত নেতারা।       

ওদিকে শেষদিকে অন্তত ১৮টি আসনে প্রার্থী পরিবর্তন করেছে বিএনপি। মাঠপর্যায়ের জরিপ, অসন্তোষ ও রাজনৈতিক সমীকরণ বিবেচনায় নিয়ে ‘ধানের শীষের বিজয়’ নিশ্চিত করতে এ পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে দলীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে। ওদিকে সমমনা শরিকদের জন্য ১০টি আসন ছেড়েছে বিএনপি। এ ছাড়া বিএনপিতে যোগ দিয়ে ধানের শীষের মনোনয়ন পেয়েছেন সমমনা শরিক দলের আরও ৬ নেতা।  

যেসব আসনে বিকল্প প্রার্থী

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে এক মাসের বেশি সময় ধরে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সাবেক তিনবারের এই প্রধানমন্ত্রীকে সর্বোচ্চ তিনটি আসনে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। গুরুতর অসুস্থতার কারণে খালেদা জিয়ার তিনটি আসনেই বিকল্প প্রার্থী প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ফেনী-১ (ফুলগাজী-পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া) আসনে খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র জমা দেন ওই আসনের নির্বাচন সমন্বয়ক ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র আহ্বায়ক রফিকুল আলম (মজনু)। খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে না পারলে তিনি বিএনপি’র প্রার্থী হতে পারেন। বগুড়া-৭ (গাবতলী) আসনে খালেদা জিয়ার বিকল্প প্রার্থী উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি ও সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোরশেদ আলম এবং দিনাজপুর-৩ (সদর) আসনেও খালেদা জিয়ার বিকল্প প্রার্থী হিসেবে সাবেক পৌর মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমকে রাখা হয়েছে।

এদিকে কুমিল্লা-১ (দাউদকান্দি-মেঘনা) আসনে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের পাশাপাশি তার ছেলে ড. খন্দকার মারুফ হোসেনকে বিকল্প প্রার্থী হিসেবে রাখা হয়েছে। ঢাকা-৩  (কেরানীগঞ্জ) আসনে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের পাশাপাশি বিকল্প প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা রেজাউল করিম পল। 

এদিকে বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনে প্রাথমিক মনোনয়ন পান দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী রফিক। তার ঋণখেলাপি সংক্রান্ত জটিলতা থাকায় বিকল্প প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হয় জেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি একেএম আহসানুল তৈয়ব জাকিরকে। তার মনোনয়নের চিঠিতে সংযুক্তি-২ লেখা রয়েছে। বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক দল নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমানকে ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। তার ঋণখেলাপি-সংক্রান্ত জটিলতার কারণে ওই আসনে বিএনপি’র নেতা মীর শাহে আলমকে বিকল্প প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তার মনোনয়নের চিঠিতে সংযুক্তি-২ লেখা রয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (আখাউড়া-কসবা) আসনে সাবেক সচিব মুশফিকুর রহমানকে প্রাথমিক মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল। ৯০ বছর বয়সী মুশফিকুর রহমান বয়সের ভারের কারণে একা চলাফেরা করতে পারেন না। সে কারণে ওই আসনে কবির আহমেদ ভূঁইয়াকে বিকল্প প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তার মনোনয়নের চিঠিতে সংযুক্তি-২ লেখা রয়েছে। নেত্রকোণা-৪ (মোহনগঞ্জ, মদন ও খালিয়াজুড়ি) আসনে সাবেক প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ধানের শীষের মনোনয়ন পান। স্বামী বাবরের আসনে স্ত্রী তাহমিনা জামান শ্রাবণীও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। জানা গেছে, বাবর-পত্নী তাহমিনা জামান শ্রাবণী বিকল্প প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।

সুনামগঞ্জ-১ (ধর্মপাশা-মধ্যনগর-তাহিরপুর-জামালগঞ্জ) আসনে বিএনপি’র দলীয় প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রীয় কৃষকদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক আনিসুল হককে মনোনয়ন দেয়া হয়। এর পাশাপাশি বিকল্প প্রার্থী হিসেবে জেলা বিএনপি’র সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান কামরুলকে মনোনয়নের চিঠি দেয় বিএনপি। তার মনোনয়নের চিঠিতেও সংযুক্তি-২ লেখা রয়েছে।

সুনামগঞ্জ-২ আসনে (দিরাই ও শাল্লা) বিএনপি’র মনোনয়ন পান দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. নাছির চৌধুরী। বর্ষীয়ান এই নেতা অসুস্থতার কারণে একা চলাফেরা করতে পারেন না। সেজন্য ওই আসনে বিকল্প প্রার্থী হিসেবে যুক্তরাজ্য বিএনপি’র সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক তাহির রায়হান চৌধুরী (পাভেল)কে মনোনয়ন দেয়া হয়। রোববার দুপুরে নাছির চৌধুরী মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময়ে তার সঙ্গে তাহির রায়হান চৌধুরীও ছিলেন। কিন্তু সন্ধ্যায় তাহির নিজে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে পরদিন মনোনয়ন জমা দেন। 

মুন্সীগঞ্জ-২ আসনে বিএনপি’র সাবেক কোষাধ্যক্ষ ও এক্‌মি গ্রুপের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান সিনহাকে মনোনয়ন দেয়া হয়। পাশাপাশি বিকল্প প্রার্থী হিসেবে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদকে মনোনয়নের চিঠি দেয়া হয়।

এ বিষয়ে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, নির্বাচনের কৌশল হিসেবে কিছু আসনে বিকল্প প্রার্থী রাখা হয়েছে। কোনো কারণে দলের প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়ে যায় তাহলে বিকল্প প্রার্থী ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করবেন। 

স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন যেসব বিএনপি নেতা

দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন বেশ কিছু নেতা। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে গতকাল শেষদিনে মনোনয়নপত্র জমাও দিয়েছেন তারা। তবে বিএনপি’র হাইকমান্ড জানিয়েছেন, দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে কেউ ধানের শীষের প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে তাকে শিগগিরই বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হবে।

বিএনপি’র যেসব নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তারা হলেন- ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ ও বিজয়নগরের একাংশ) আসনে সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি’র আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, ঢাকা-১২ আসনে ঢাকা মহানগর উত্তরের সাবেক আহ্বায়ক সাইফুল আলম নীরব, ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ-সদর আংশিক) আসনে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, কুড়িগ্রাম-৩ আসনে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (রংপুর বিভাগ) আব্দুল খালেক, চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) আসনে উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক এমএ হান্নান, চাঁদপুর-২ (মতলব উত্তর ও দক্ষিণ)  আসনের বিএনপি’র সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত মোহাম্মদ নূরুল হুদার ছেলে, জেলা বিএনপি নেতা তানভীর হুদা, সুনামগঞ্জ-৪ (সদর ও বিশ্বম্ভরপুর) আসনে জেলা বিএনপি’র সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি দেওয়ান জয়নুল জাকেরীন, বরিশাল-৩ (মুলাদী-বাবুগঞ্জ) আসনে মুলাদী উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি এবং উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ আবদুস সাত্তার খান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) আসনে সাবেক এমপি কাজী আনোয়ারের পুত্র কাজী তাপস, ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়িয়া) আসনে করিম সরকার, ময়মনসিংহ-৯ (নান্দাইল) আসনে বিএনপি নেতা মামুন বিন আবদুল মান্নান, চট্টগ্রাম-৫ আসনে বিএনপি’র সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের মেয়ে ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা, পটুয়াখালী-৩ আসনে বিএনপি’র নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুন, ঢাকা-১২ আসনে সাবেক বিএনপি নেতা মোহাম্মদ শাহাবউদ্দিন প্রমুখ। এ ছাড়াও আরও বেশ কিছু আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিএনপি নেতারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।