Image description

সিলেট-৩ আসন নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন সিলেট বিএনপি’র নেতারা। এ আসনে প্রার্থী দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এমএম মালিক। সুতোয় ঝুলছিল তার মনোনয়ন। কখন কী হয় বলা মুশকিল ছিল। মালিকও নির্বাচনের সুর তুলতে পারছিলেন না। আসনের প্রার্থী তালিকায় এগিয়ে ছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা এমএ সালাম ও জেলা বিএনপি’র সভাপতি কাইয়ূম চৌধুরী। দু’জনের পক্ষেই ছিল দলীয় নেতাকর্মীদের অবস্থান। সোমবার সকাল পর্যন্ত হাওয়ায় খবর ভাসছিল ব্যারিস্টার সালাম স্বতন্ত্র হিসেবে প্রার্থী হতে পারেন। তবে কাইয়ূম চৌধুরী নীরবই ছিলেন। কিন্তু দুপুরে সিলেটের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে দেখা গেল এক অভূতপূর্ব দৃশ্য।

যুক্তরাজ্য বিএনপি’র সাবেক সভাপতি এমএ মালিক মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসছেন। তার সঙ্গে রয়েছেন ব্যারিস্টার এমএ সালাম ও এমএ কাইয়ূম চৌধুরী। হাতে হাত মিলিয়ে তারা দু’জন প্রার্থী এমএ মালিকের মনোনয়নপত্র জমা দিতে এসেছেন। সঙ্গে ছিলেন সিলেট জেলা বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি আব্দুল আহাদ খান জামাল। এবার দলীয় ফোরামে মনোনয়নের জন্য লড়াই করেন খান জামালও। বিষয়টি নজর কাড়ে সবার। মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার আগে তারা রিটার্নিং কর্মকর্তার সামনে গিয়ে একসঙ্গে বসেন। দৃশ্যটি অচেনা হলেও গতকাল তাই ঘটেছে। এটাই সিলেট বিএনপি’র ম্যাজিক বলে মনে করেন নেতাকর্মীরা। প্রশংসায় ভাসছেন তারা। অথচ সিলেট-৩ আসনে ভোটের জনপ্রিয়তায় এগিয়ে ছিলেন

ব্যারিস্টার সালাম ও এমএ কাইয়ূম। দু’জন থেকে যেকোনো একজন প্রার্থী হলেই পাস- এমন পরিবেশ ছিল এ আসনে। সালাম লন্ডন প্রবাসী হলেও এলাকার টাচ্‌ে ছিলেন। আর কাইয়ূম তো হলেন জেলার সভাপতি। তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে আরও বেশি সম্পৃক্ত। গতকালের এ দৃশ্য প্রতিপক্ষ প্রার্থীদের মনে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছে বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা। ব্যারিস্টার সালাম প্রার্থী এমএ মালিকের সঙ্গে মনোনয়নপত্র জমা দিতে এসে বলেছেন, প্রার্থী হওয়া নিয়ে প্রতিযোগিতা হতেই পারে। দলের জন্য সবাই ঐক্যবদ্ধ। বিএনপি সরকার গঠন করাই হচ্ছে আমাদের মুখ্য উদ্দেশ্য। 

অন্যদিকে, কাইয়ূম চৌধুরীও জানিয়েছেন, ধানের শীষের বিজয়ে কারও কোনো দ্বিধা নেই। ভোটের মাঠে আমরা সবাই ধানের শীষের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ থাকবো। সিলেটের পাঁচটি আসনেই বিএনপি ঐক্যবদ্ধ রয়েছে বলে জানান তিনি। সিলেট-৩ আসনের এ দৃশ্যের মধ্যে সিলেট-৪ আসনের প্রার্থী সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর মনোনয়ন জমা দেয়ার একই দৃশ্যের অবতারণা ঘটেছে। দলীয় ফোরামে মনোনয়নের জন্য মাঠে আরিফের সঙ্গে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেছিলেন জেলা বিএনপি’র উপদেষ্টা আব্দুল হাকিম চৌধুরী। এখন তারা এক ও ঐক্যবদ্ধ। তাদের সঙ্গে এলাকার বিএনপিও এক হয়েছে। দুপুরে মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসেন প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী। তার ডানপাশে দাঁড়িয়েছিলেন আব্দুল হাকিম চৌধুরী। ছিলেন হাস্যোজ্জলও। সঙ্গে কেন্দ্র ও স্থানীয় বিএনপি’র নেতাকর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন। মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে বেরিয়ে এসে আরিফুল হক চৌধুরী জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এবার আর ভুল করলেন না সিলেট-২ আসনের বিএনপি’র প্রার্থী তাহসিনা রুশদীর লুনা। তিনি আসনের সাবেক এমপি এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তাকে নিয়ে নাটকের অন্ত ছিল না। শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করতেই পারেননি।

গতকাল দুপুরে সিলেট জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে তিনি মনোনয়নপত্র জমা দেন। তার সঙ্গে মনোনয়নপত্র জমা দেন বড় ছেলে ব্যারিস্টার আবরারও। বেরিয়ে এসে ইলিয়াসপত্নী লুনা সকলের কাছে দোয়া চান। এ সময় তিনি বলেন, ভোটের পরিবেশ স্বাভাবিক রয়েছে। জনগণ এবার ভোট দেয়ার জন্য মুখিয়ে রয়েছে বলে জানান তিনি। বিকালে মনোনয়নপত্র জমা দেন সিলেট-১ আসনের প্রার্থী খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। তার পক্ষে সিলেট নগর ও সদর বিএনপি’র নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ রয়েছেন। সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে নিয়ে মুক্তাদির মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে সাংবাদিকদের জানান, সিলেটকে একটি আধুনিক ও উন্নত জনপদে পরিণত করতে তার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। সকালে মনোনয়ন জমা দেন বিএনপি’র শরিক সিলেট-৫ আসনে জমিয়তের প্রার্থী দলের সভাপতি মাওলানা ওবায়দুল্লাহ ফারুক। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি’র সমর্থন থাকায় মাঠে ভোটারের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া মিলছে। উন্নয়নের জন্য মানুষ এবার তার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ রয়েছে বলে জানান তিনি। 

সিলেট-৬ আসনে বিকল্প প্রার্থী: সিলেট-৬ আসনে বিএনপি’র প্রার্থী জেলা সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী। তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে দুপুরে গোলাপগঞ্জের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়পত্র দাখিল করেন। তার আগে সকালে এ আসনে বিকল্প প্রার্থী হিসেবে জেলা বিএনপি নেতা ফয়সল আহমদ চৌধুরীকে বিকল্প ভাবনায় মনোনয়ন দেয়া হয়। বিকালে ফয়সল আহমদ চৌধুরী সিলেটের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে এসে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এ সময় তিনি আগামী নির্বাচনে জয়ের জন্য আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এর আগে রোববার থেকে খবর রটছিল ফয়সল আহমদ চৌধুরী এবারের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন। তবে মনোনয়নপত্র হাতে পাওয়ার পর তিনি দলের হয়েই মনোনয়নপত্র জমা দেন। সিলেট-৬ আসনে এখন প্রার্থী দু’জন। শেষ পর্যন্ত যেকোনো একজন প্রার্থী হবেন। তবে শেষ মুহূর্তে মনোনয়ন প্রাপ্তিকে ফয়সলের জন্য চমক হিসেবে দেখছেন তার অনুসারী নেতাকর্মীরা।