বাংলাদেশ পন্থিদের অগ্রনায়ক হিসেবে দেশের ইতিহাসের পাতায় আরেক শহীদ বিপ্লবীর নাম যুক্ত হলো- যিনি দেশের কথা বলতেন, দেশের মানুষের কথা বলতেন, মানুষের কথা শুনতেন। যিনি ছিলেন সৎ, একনিষ্ঠ ও নীতিবান ব্যক্তিত্ত্বের অধিকারী। যার কণ্ঠস্বর থেকে অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো বের হতো সকল অন্যায়, অবিচার এবং সকল আধিপত্যবাদ ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ। জুলাই বিপ্লবের পর জুলাইকে ধারণ করে চলা অনন্য বিপ্লবী বীর শহীদ শরিফ ওসমান হাদি। যিনি বলেছিলেন, ‘জান দিবো, জুলাই দিবো না’। তিনি তার কথা রেখেছেন, বিপ্লবীরা কথা রাখেন। এ জন্যই মৃত্যুর পরেও তারা অমর হয়ে থাকেন মানুষের অন্তরে। তিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করে দিয়েছেন জুলাই রক্ষার জন্য। তবু কখনো কোনো অন্যায়ের সঙ্গে মাথা নত করেননি। ইতিহাসের পাতায় স্বার্ণাক্ষরে লেখা থাকবে বিদ্রোহী বীর শহীদ শরীফ উসমান হাদি।
সারাদেশের মানুষ উসমান হাদিকে যেভাবে গ্রহণ করেছে, যেভাবে ভালোবেসেছে, পৃথিবীতে এতো ভালোবাসা নিয়ে বসবাস করা বিরল। তাই হয়তো তিনি চলে গেলেন। বেঁচে ফিরলে হয়তো বাংলাদেশের মানুষের এতো অজস্র অকৃত্রিম ভালোবাসা তিনি ধারণ বা সহ্য করতে পারতেন না। আমরা দেখেছি, নির্বাচনের জন্য যেখানে প্রার্থীকে টাকা বিলি করতে হয়, সেই জায়গায় মানুষই প্রার্থীকে টাকা দিয়েছেন। এই ইতিহাসও বাংলাদেশে বিরল। ওসমান হাদি এমনই এক রাজনৈতিক নেতা। বিপ্লবী নেতা। রাজনীতিতে তিনি নতুন কিছু এনেছিলেন, যা ছিল বাংলাদেশের মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা। দুর্নীতি, অন্যায়, অবিচার, জুলুম, অত্যাচার, আধিপত্য বিস্তার না করে জনগণের কথা শুনে, জনগণের পাশে থেকে, জনগণকে নিয়েই যে দেশ গঠন করা যায়, তারই স্বপ্ন তিনি লালন করেছিলেন। যে সময় দেশের সকল রাজনৈতিক দল ব্যস্ত তাদের নিজেদের রাজনীতি, প্রচারণা নিয়ে, সেই সময় ওসমান হাদি ব্যস্ত ছিলেন দেশ থেকে চিরতরে আধিপত্যবাদকে উচ্ছেদ করে বাংলাদেশ পন্থিদের নিয়ে বাংলাদেশ গড়তে। এটাই ছিল তার বড় অপরাধ।
বাঙালি জাতিসত্তাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চেয়েছিলেন ওসমান হাদি। যার বয়ানে ছিল বাংলাদেশ পন্থিদের কথা। তিনি বুঝতে সক্ষম হয়েছিলেন বাংলাদেশের গতিপথ ও বহিঃশক্তির ষড়যন্ত্র এবং বাংলাদেশকে প্রতিবেশী আধিপত্যবাদ থেকে মুক্ত না করা পর্যন্ত কোনো উপায় নেই। তিনি ছিলেন একক ব্যক্তিত্বের অধিকারী। আমাদের দূর্ভাগ্য যে, আমরা এমন এক বিপ্লবী বীরকে হারিয়ে ফেলেছি। আমরা বুঝতেই পারিনি কাকে হারালাম! আমাদের বোঝার আগেই ষড়যন্ত্রকারীরা হাদিকে দুনিয়া থেকে চিরতরে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে ফেলে। এ থেকে শিক্ষা নেওয়া আমাদের জন্য অপরিহার্য। আমরা আর কোনো হাদিকে হারাতে চাই না।
১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীনের পর থেকেই ভারতীয় আধিপত্যবাদ দেশকে গ্রাস করে রেখেছে। যারাই আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই- সংগ্রামের কথা বলেছেন, তারাই শহীদ হয়েছেন। দেশকে মেধাশূন্য করার জন্য একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছে। এরপর রাষ্ট্রনায়ক শহীদ জিয়াউর রহমান, ইসলামি আলোচক মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী, আবরারকে হারিয়েছি। হারিয়েছি আবু সাইদকেও। এবার হারালাম ওসমান হাদিকে। এরপর হয়তো আরেক লড়াকু সৈনিককে হারাতে হবে। আমরা তা চাই না।
জুলাইয়ের পরে দেশে বিপ্লবী সরকার গঠন করা হলেও এই সরকার কতটুকু বিপ্লবকে ধারণ করে জনগণের আস্থা অর্জন করতে পেরেছে তা প্রশ্নবিদ্ধ। জুলাইয়ের পরে সরকার এখনো কোনো ফ্যাসিস্টের ফাঁসি নিশ্চিত করতে পারেনি। অথচ ওরা দেশের বাইরে থেকে আমাদের জুলাইকে ধারণ করা শ্রেষ্ঠ বিপ্লবীকে শহীদ করে দিল। ওরা দেশের বাইরে থেকেও ষড়যন্ত্র চলমান রেখে বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম চলমান রেখেছে দেশে। এটা আমাদের ব্যর্থতা, আমাদের দেশের ব্যর্থতা, রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যর্থতা, সর্বোপরি অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা।
লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া