Image description

ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে নকশা পরিবর্তনের কারণে ব্যয় উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। সর্বশেষ সংশোধিত প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রকল্পটির মোট ব্যয় প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বৃদ্ধি পেতে পারে। ফলে ১৭ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পটি প্রায় ২৭ হাজার টাকায় পৌঁছাবে। ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, নতুন কর নির্ধারণ, নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির ফলে এ ব্যয় বাড়ছে।

জানা গেছে, এক্সপ্রেসওয়ের বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ) ইতোমধ্যে ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব তৈরি করেছে। ব্যয়বৃদ্ধির এই প্রস্তাবে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান চীনের এক্সিম ব্যাংক সম্মতি দিয়েছে। তবে এটি কার্যকর করতে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদন প্রয়োজন। পিপিপি ভিত্তিতে বাস্তবায়িত প্রকল্পটিতে বাড়তি ব্যয়ের বোঝা সরকার ও বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কীভাবে ভাগ হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

জানা গেছে, নকশা পরিবর্তনের বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তুরাগ নদ। প্রকল্পের একটি অংশ তুরাগ নদের ওপর দিয়ে যাবে। প্রথম নকশার সময় নদটি তৃতীয় শ্রেণির ছিল। বর্তমানে সেটি দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত হওয়ায় নৌযান চলাচলের সুবিধার্থে সেতুর উচ্চতা ও খুঁটির দূরত্ব বাড়াতে হচ্ছে। আগে যেখানে এক খুঁটি থেকে আরেক খুঁটির দূরত্ব ছিল ৩০ দশমিক ৪৮ মিটার, এখন তা বাড়িয়ে ৯০ মিটার করা হচ্ছে। নদের উপরিভাগ থেকে সেতুর তলদেশের উচ্চতাও ৭ দশমিক ৬ মিটার থেকে বাড়িয়ে ১২ দশমিক ২ মিটার নির্ধারণ করা হয়েছে। এর ফলে সেতুর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থেও পরিবর্তন আনতে হচ্ছে। নতুন নকশায় সাভারের বাইপাইল এলাকায় একটি নতুন সেতু ও ইন্টারসেকশন যুক্ত হচ্ছে। পাশাপাশি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের সঙ্গে এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগ এবং মেট্রোরেলের সমন্বয় করা হচ্ছে। এতে কাঞ্চন থেকে ছেড়ে আসা মেট্রো ট্রেন তৃতীয় টার্মিনালে থেমে আবার যাত্রা করবে।

সেতু বিভাগের সচিব ও বিবিএর নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, ব্যয়বৃদ্ধির প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়েছে এবং অনুমোদনের জন্য একনেকে পাঠানো হবে।

২০১৭ সালে অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২২ সালের নভেম্বরে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সার্বিক অগ্রগতি ৬৪ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং ভৌত অগ্রগতি ৫৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। সংশোধিত পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৭ সালের ২৭ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, নগরের দ্রুত সম্প্রসারণ ও যানবাহনের চাপ বিবেচনায় রেখে নকশা পরিবর্তন অনিবার্য হয়ে পড়েছে। ভবিষ্যতে যানজট কমাতে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কিছু অতিরিক্ত কাঠামো যুক্ত করা হচ্ছে। এ কারণে প্রাথমিক ব্যয় বাড়লেও দীর্ঘ মেয়াদে এটি নগরবাসীর জন্য সুফল বয়ে আনবে বলে তাঁদের দাবি।

অন্যদিকে প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব ও ব্যয় বৃদ্ধি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকেই মনে করছেন, বারবার নকশা পরিবর্তনের ফলে করদাতাদের অর্থের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত না হলে ভবিষ্যতে আরও ব্যয় বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন তাঁরা।