ঢাকার পূর্বাচলে রাজউকের প্লট বরাদ্দ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে করা তিনটি পৃথক মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সাত বছর করে মোট ২১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন এই রায় ঘোষণা করেন।
মোট ২১ বছরের সাজা ছাড়াও তিন মামলায় তাকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা পরিশোধ না করলে অতিরিক্ত ১৮ মাস কারাভোগের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
এই মামলাগুলোয় আসামির সংখ্যা মোট ৪৭ হলেও ব্যক্তি হিসেবে সংখ্যা ২৩। শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ছাড়াও আরও ২০ জন সাবেক সরকারি কর্মকর্তা ও রাজউকের বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা তালিকায় রয়েছেন। তাদের মধ্যে মাত্র এক আসামি—মোহাম্মদ খুরশীদ আলম—গ্রেপ্তার অবস্থায় আছেন।
মামলার তদন্ত ও ৯১ জন সাক্ষীর জবানবন্দিতে উঠে এসেছে—রাজধানীতে নিজস্ব জমি থাকা সত্ত্বেও তথ্য গোপন করে রাজউকের প্লট নেন শেখ হাসিনা ও তার সন্তানরা। রাজউকের ৩০ কাঠা প্লট অবৈধভাবে বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে দুদক মামলাগুলো করে।
আদালত থেকে সমন, গ্রেফতারি পরোয়ানা ও পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরও আসামিরা অনুপস্থিত থাকায় পলাতক অবস্থাতেই তাদের বিরুদ্ধে বিচারকাজ সম্পন্ন হয়।
দুদকের অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, রাজউকের নীতিমালা লঙ্ঘন করে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের নামে সরকারি জমি নেন শেখ হাসিনা ও তার সন্তানরা। এ জন্য মিথ্যা হলফনামাও জমা দেওয়া হয়।
গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের নানা অনিয়ম–দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ৬০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নিয়ে ‘ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের’ অভিযোগে চলতি বছরের জানুয়ারিতে দুদক মোট ছয়টি মামলা করে। এসব মামলায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি তার ছেলে-মেয়ে, বোন শেখ রেহানা ও তার পরিবারের সদস্যদেরও আসামি করা হয়।
ছয়টি মামলার মধ্যেই শেখ হাসিনা অভিযুক্ত। তার পরিবারের তিনটি মামলার বিচার একসঙ্গে চলছে; অপরদিকে, রেহানার পরিবারের তিন মামলার শুনানি চলছে আলাদা আদালতে।
গত ৩১ জুলাই এসব মামলায় হাসিনা ও রেহানা পরিবারের সাত সদস্যসহ মোট ২৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এরপর ২৩ নভেম্বর যুক্তিতর্ক শেষে হাসিনা–পরিবারের মামলার রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করা হয়।
রেহানার পরিবারের একটি মামলার যুক্তিতর্ক শেষে ২৫ নভেম্বর বিচারক ১ ডিসেম্বর রায়ের দিন ঠিক করেন।