বৈদ্যুতিক আর্ক ও পরবর্তী শর্ট সার্কিট থেকেই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো কমপ্লেক্সে আগুনের সূত্রপাত। আগুনের ঘটনায় সরকার গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এমনটাই জানানো হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়।
১২ সদস্যের তদন্ত কমিটির এই প্রতিবেদনটি হস্তান্তর করেন দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম।
গত ১৮ অক্টোবর দুপুর ২টার দিকে বিমানবন্দরের কার্গো কমপ্লেক্সে এ আগুন লাগে।
আজ ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী আগুনটি কুরিয়ার শেডের উত্তর-পশ্চিম পাশের সম্প্রসারিত অংশে লেগেছিল। সেখানে বিভিন্ন কুরিয়ার প্রতিষ্ঠানের ৪৮টি ছোট লোহার গ্রিল দেওয়া অফিস ছিল।
তিনি জানান, ওই এলাকায় কোনো ফায়ার অ্যালার্ম, ধোঁয়া শনাক্তকারী, স্প্রিংকলার ব্যবস্থা বা ফায়ার হাইড্রেন্ট ছিল না। সেখানে দাহ্য সামগ্রী—পলিথিনে মোড়ানো কাপড়ের রোল, কেমিক্যাল, কমপ্রেসড পারফিউম ও বডি স্প্রে বোতল, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, ব্যাটারি এবং ওষুধ তৈরির কাঁচামাল—সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াই রাখা হয়েছিল।
শফিকুল আলম জানান, দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে প্রথম ধোঁয়া দেখতে পান এক আনসার সদস্য। বিকেল ২টা ২২ মিনিটে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের প্রথম ফায়ার ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং কিছুক্ষণের মধ্যে আরেকটি ইউনিট যোগ দেয়। উত্তরা ফায়ার স্টেশনের দল ২টা ৫০ মিনিটে আসে।
প্রায় দেড় হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রার দাউদাউ আগুন, লোহার গ্রিলে আটকে থাকা, হাইড্রেন্ট না থাকা, অজানা রাসায়নিক পদার্থ, পানি সংকট এবং আংশিক কাঠামো ধসে পড়ার কারণে নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লাগে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসে।
তদন্তে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, সিআইডির ফরেনসিক ইউনিট, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের অগ্নি বিশেষজ্ঞ, এনএসআই, বিস্ফোরক অধিদপ্তর, ডেসকো, সিটিটিসি, বুয়েট, তুরস্কের সংস্থা এবং ক্যাটালগিং কমিটির মতামত বিবেচনায় নেওয়া হয়।
৯৭ জন সাক্ষীর বক্তব্য, সিসিটিভি ফুটেজ এবং বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, বিমান, শুল্ক, এপিবিএন, কুরিয়ার প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সংস্থার নথি বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
প্রেস সচিব বলেন, `তদন্তে নাশকতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।'
তদন্তে আরও জানা গেছে, ২০১৩ সাল থেকে একই এলাকায় অন্তত ৭টি বড় আগুনের ঘটনা ঘটেছে, যেগুলোর অনেকগুলোই রিপোর্ট করা হয়নি। বেবিচকের এমন ঘটনা প্রতিরোধ বা নিয়ন্ত্রণে সক্ষমতা নেই বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
কমিটির সুপারিশগুলো হলো—বিমানবন্দরের অপারেশন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আলাদা একটি কর্তৃপক্ষ বা অপারেটর তৈরি করা, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার মান নিশ্চিতে ব্যবস্থা নেওয়া, বিমানকে শুধু ফ্লাইট অপারেশনে সীমাবদ্ধ রাখা, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং দায়িত্ব বেবিচক নিয়োজিত অপারেটরের কাছে হস্তান্তর, ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে যৌথভাবে বিশেষ ক্যাটাগরির ফায়ার স্টেশন স্থাপন, কেমিক্যাল ও বিপজ্জনক পণ্যের গুদাম আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী স্থানান্তর, নিলামযোগ্য পণ্যের জন্য আলাদা কাস্টমস ওয়্যারহাউস, নিষিদ্ধ এলাকায় কোনো ধরনের মালামাল সংরক্ষণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা।
ভয়াবহ ওই অগ্নিকাণ্ডে কার্গো কমপ্লেক্সের বড় অংশ পুড়ে যায়, ফ্লাইট পরিচালনা ব্যাহত হয়, এবং বহু ফ্লাইট বিলম্বিত বা ডাইভার্ট করা হয়।