Image description
 

৪৭ তম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) উপলক্ষে ৪৭ পাউন্ডের কেক কাটে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা একে অপরকে কেক খাইয়ে দেওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর পুরো কেকটি ছোট ছোট অংশে ভাগ করছিলেন। এর মধ্যেই আশেপাশে থাকা শিক্ষার্থীরা কেকের উপর হামলে পরে কাড়াকাড়ি শুরু করে।

 

এসময় প্রক্টর বাধা দিলেও শিক্ষার্থীরা তা মানেননি। কেক নেওয়ার সময় তাদের ধাক্কাধাক্কির একপর্যায়ে কেকের টেবিলটিও ভেঙে মাটিতে পরে যায়৷ তারপর অনেককে মাটিতে পড়ে যাওয়া সেই টেবিলে লেগে থাকা কেকও মুঠোভরে তুলতে দেখা যায়। এসময় প্রক্টরের জামা-কাপড়েও কেকের ক্রিম লেগে যায়।

শনিবার (২২ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের থানা গেট সংলগ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভিত্তিপ্রস্তরের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী সমালোচনার সৃষ্টি হয়। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও নেটিজেনরা ঘটনার ভিডিও শেয়ার করে ব্যঙ্গাত্মক ক্যাপশন দিয়ে ট্রল করছেন।

 

এই নিয়ে বিব্রত হওয়ার কথা জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরাও। অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন ফেসবুকে। বাংলা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী অনি আতিকুর রহমান ফেসবুকে লিখেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে একটা স্মৃতিচারণমূলক লেখা শুরু করেছিলাম। কেক খাওয়ার ভিডিও দেখে আগ্রহ হারিয়ে ফেললাম।

 

আসাদুজ্জামান নামে আইন বিভাগের সাবেক আরেক শিক্ষার্থী লিখেছেন, আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ছিল৷ আমাদের স্মৃতির বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে দুই কথা লিখব বলব এমনিই ভেবেছিলাম। কিন্তু আপনাদের কেক খাওয়ার ভিডিও দেখে লজ্জা লাগছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হয়েও আপনাদের ন্যুনতম ম্যানার নাই? সভ্যতা নাই? শিক্ষা নাই? অন্তত ন্যুনতম আত্মসম্মান থাকাটাও জরুরি ছিল৷ সেটাও নাই।

তিনি আরও লিখেছেন, আপনারা কি কোনদিন কেক খাননি? নাকি চোখেও দেখেননি? এই যে ভিডিও আজ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। আপনারা ভাবুন ত আপনারা মেধাবী হওয়ার চেয়ে জনগণকে হিরো আলমের চেয়েও নিম্নমানের বিনোদনের রসদ হলেন। যদি আপনাদের কেক খেতে ইচ্ছে করে - আমাদের এলামনাইদের কে জানান। এলামনাইরা আপনাদের জন্য কেকের ব্যবস্থা করবে। প্রত্যেক হলে কেক দেওয়া হবে। পেট চুক্তিতে কেক দেওয়া হবে। তবুও ভুখানাঙাদের মত, টোকাইদের মত কেক নিয়ে কামড়াকামড়ি করবেন না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে এমন বিশৃঙ্খলা কোনোভাবেই কাম্য নয়। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোগ্রামে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে বিশৃঙ্খলা সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। আমাদের আরো মার্জিত আচরণ করা উচিত। আশা করি পরবর্তী অনুষ্ঠানগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এসব বিষয়ে যথাযথ ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে।

বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় লেখক ও শিক্ষক ড. আমিনুল ইসলাম লিখেছেন, মানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এইসব করছে! চিন্তা করা যায়! আমরা মানুষ হতে চাইছি না।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুনর রশিদ খান ভিডিও শেয়ার করে ফেসবুকে লিখেছেন, Just unbelievable. আমাদের আগামী প্রজন্ম আরো সুশৃঙ্খল খোক।

এদিকে কেক কাড়াকাড়ির ভিডিও ভাইরাল হওয়া নিয়ে শিক্ষার্থীদের পক্ষে আল-কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাইফুল্লাহ আল হাদি লিখেছেন, সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা। কিন্তু ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী অনুষ্ঠানে আজ ক্যাম্পাসের সাংবাদিক সংগঠনগুলোর বদৌলতে জাতি জানতে পারলো খ্যাত, ইতর, ছ্যাচড়া পোলাপান পড়ে ইবিতে।

প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান বলেন, কেক শিক্ষার্থীদের জন্যই আনা হয়েছিল। আমাদের উপস্থিত প্রতিটি শিক্ষার্থীকে কেক দিতে চেয়েছিলাম। সুশৃঙ্খলভাবে দাঁড়ালে ওখানে উপস্থিত সবাই কেক পেত। আমি সুন্দরভাবে কেটে সবাইকেই দিতাম। এই বিষয়টি সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত। 

এদিকে দিবসটি উপলক্ষে দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। বেলা ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল মাঠে পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সংগীত পরিবেশন, পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম সহ বিভিন্ন স্তরের শিক্ষাক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

কেক কাটা শেষে উপাচার্যের নেতৃত্বে বর্ণাঢ্য আনন্দ র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়। র‌্যালিটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তরের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এরপর কেন্দ্রীয় মসজিদে দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে সেখানে ইরানি মুভি ‘দ্যা মেসেঞ্জার’ প্রদর্শন করা হয়।