
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বাস্তবায়নে পরিচালিত ‘হিট প্রজেক্ট’র বাজেট বরাদ্দ নিয়ে উঠেছে পক্ষপাতের অভিযোগ। গবেষণা ও উদ্ভাবনকে উৎসাহ দিতে নেওয়া এ উদ্যোগে যোগ্যতার চেয়ে রাজনৈতিক পরিচয় প্রাধান্য পেয়েছে বলে অভিযোগ অনেকের। বাজেট বরাদ্দের তালিকা ঘেঁটে দেখা গেছে, বাম ঘরানার ও আওয়ামীপন্থি শিক্ষকের আধিপত্য রয়েছে। এছাড়া প্রজেক্ট প্রোপোজাল প্রেজেন্টেশন রিভিউয়ার হিসেবে নিজের পছন্দের কিংবা মতাদর্শের শিক্ষককে রাখার অভিযোগ উঠেছে ইউজিসির এক সদস্যের বিরুদ্ধে। ফলে প্রকল্পটির স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা ও প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন গবেষকরা। প্রশ্ন উঠেছে, এত বড় বাজেটের গবেষণা প্রকল্প বাছাইয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা শিক্ষকদের গবেষণার মান নিয়েও।
অভিযোগ রয়েছে, প্রজেক্ট প্রোপাজাল রিপোর্ট মূল্যায়নে অন্যতম একজন রিভিউয়ার শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মুহিবুল আলম আওয়ামী প্যানেলের শিক্ষক সমিতির অন্যতম প্রভাবশালী নেতা। তিনি দু’বারের শিক্ষক সমিতির সেক্রেটারি। এছাড়া আর্টস-স্যোশাল সায়েন্স ও হিউম্যানিটিজ সেকশন রিসার্চ প্রোপজাল প্রেজেন্টেশন মূল্যায়ন একটি সেকশনে রিভিউয়ার ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের মির্জা তাসলিমা সুলতানা ও আইনুন নাহার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধাপক ড. গীতি আরা নাসরীন, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ মোহাম্মদ শাহান, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক অতনু রব্বানী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. তাসনিম সিদ্দিকী।
সূত্রের তথ্য, তালিকায় থাকা ৬ জনই বামপন্থি শিক্ষক রাজনীতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন শিক্ষক নেটওয়ার্কের সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে পাঁচজন নিয়মিত কার্যক্রমে থাকলেও নিষ্ক্রিয় একজন বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অধ্যাপক জানিয়েছেন। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, তালিকা থাকা অধ্যাপকদের সঙ্গে আদর্শগত সখ্যতা থাকায় ইউজিসির সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান তাদেরকে প্রেজেন্টেশন রিভিউয়ার হিসেবে রাখার সুপারিশ করেন। সে হিসেবেই তারা ‘প্রক্রিয়া’র মধ্য দিয়ে কমিটিতে স্থান পান।
সূত্রটির অভিযোগ, যে বিষয়ে তারা অভিজ্ঞ নন, এমন সব বিষয়ের প্রোপোজালগুলোও তারা প্রেজেন্টেশন বোর্ডে থেকে মূল্যায়ন করেছেন। বঞ্চিত শিক্ষকদের অভিযোগ, স্যোশাল সায়েন্সের শিক্ষক হয়েও অনেক ক্ষেত্রে বিজনেস অনুষদ সংক্রান্ত অনেক প্রেজেন্টেশনের মূল্যায়ন করেছেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা; যেটাকে তারা নিয়ম ব্যত্যয়ের বিরল ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাদের এ-ও অভিযোগ, ‘মূল্যায়নকারীরা গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক; অথচ তাদের সেশনে ইকোনমিকস, হিসাববিজ্ঞান, ইংরেজি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, দাওয়াহ ও ইসলামিক স্টাডিজ, প্রত্নতত্ত্ব, শিক্ষা বিজ্ঞান এমনকি আর্কিটেকচারের গবেষণা প্রকল্প প্রস্তাবনা উপস্থাপন ও মূল্যায়ন করা হয়েছে, যা হাস্যকর।’
এদিকে অভিযোগ উঠেছে, যারা গবেষণা প্রকল্প মূল্যয়নে ছিলেন, তাদের অধিকাংশেরই গবেষণার প্রোফাইল ওই অর্থে সমৃদ্ধ নয়। এর মধ্যে জাবি শিক্ষক আইনুন নাহারের স্কোপাস প্রোফাইল ঘেটে দেখা যায়, ২০১০ সালে তিনি মাত্র একটি স্কোপাস ইনডেক্সড আর্টিকেল প্রকাশ করেছেন। গুগল স্কলারে তার কোন প্রোফাইল খুঁজে পাওয়া যায়নি। অপরদিকে মির্জা তাসলিমার গুগল স্কলার অ্যাকাউন্টে দেখা যায়, তার এইচ ইনডেক্স মাত্র তিন, আর আই-১০ ইনডেক্স মাত্র এক। তার মাত্র ৩টি আর্টিকেল ৬৪ বার সাইটেড হয়েছে, যার মধ্যে একটি ৫৩ বার, যেখানে তিনি তৃতীয় অথর। আরেক সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক গীতিআরা নাসরীন। শিক্ষকতার পাশাপাশি বামপন্থী এ শিক্ষকের ইনডেক্সড জার্নালে প্রকাশিত গবেষণার সংখ্যা অত্যন্ত সীমিত।
‘হিট প্রজেক্ট দেশের গবেষণানির্ভর শিক্ষকদের জন্য একটি যুগান্তকারী সুযোগ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। বিশেষ করে কলা, মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষকদের জন্য এটি ছিল একটি বিরল ঘটনা, কারণ অতীতে এই ক্ষেত্রগুলোতে সরকারিভাবে গবেষণার জন্য এত বড় পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। তাদের মতে, বাংলাদেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে কলা ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদে অন্তত ৩০টির বেশি স্বতন্ত্র বিভাগ রয়েছে। সেই প্রেক্ষাপটে মাত্র তিন সদস্যের একটি মূল্যায়ন কমিটিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের দুজন শিক্ষককে অন্তর্ভুক্ত করা অস্বাভাবিক হিসেবে দেখছেন অনেকে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক বলেন, ‘আমরা কয়েকদিন আগে ইউজিসির চেয়ারম্যানের সঙ্গে এসব অনিয়মের ব্যাপারে আলোচনা করি। সেখানে লো-প্রোফাইলধারী, শিক্ষক নেটওয়ার্কের শিক্ষক দিয়ে প্রেজেন্টেশন মূল্যায়ন রিভিউয়ের ব্যাপারে জানতে চাই। এর জবাবে ইউজিসির একজন সদস্য আমাদের জানান যে, এসব শিক্ষকরা জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকায় ছিলেন, তাই তাদের মূল্যায়ন করা হয়েছে।’
যদিও ইউজিসি সদস্য ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান দাবি করেন, অভিজ্ঞরাই এক্সপার্ট কমিটিতে ছিলেন। তাছাড়া যারা হয়েছেন, তাদেরকেও রাজি করানো সহজ ছিল না। শিক্ষকদের বড় একটি অংশ রাজনৈতিকভাবে সংশ্লিষ্ট হওয়ার কারণে ৬ সদস্যের ওই প্যানেলটি বেছে নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
বিশ্লেষকদের মতে, হিট প্রজেক্ট দেশের গবেষণানির্ভর শিক্ষকদের জন্য একটি যুগান্তকারী সুযোগ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। বিশেষ করে কলা, মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষকদের জন্য এটি ছিল একটি বিরল ঘটনা, কারণ অতীতে এই ক্ষেত্রগুলোতে সরকারিভাবে গবেষণার জন্য এত বড় পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। তাদের মতে, বাংলাদেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে কলা ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদে অন্তত ৩০টির বেশি স্বতন্ত্র বিভাগ রয়েছে। সেই প্রেক্ষাপটে মাত্র তিন সদস্যের একটি মূল্যায়ন কমিটিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের দুজন শিক্ষককে অন্তর্ভুক্ত করা অস্বাভাবিক হিসেবে দেখছেন অনেকে।
এদিকে ব্লাইন্ড রিভিউ শেষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৪টি গবেষণা প্রকল্প প্রাথামিকভাবে নির্বাচিত হয়। প্রকল্পের টেকনিকাল ও আর্থিক বিষয় প্রেজেন্টেশনের জন্য তালিকাভুক্ত হয় ২টি প্রকল্প। কিন্তু পরবর্তীতে একটা ১০ মিনিটের উপস্থাপনা নিয়ে কোনো কিছু জানতে না চেয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২টি গবেষণা প্রকল্প বাদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তবে, বিশ্ববদ্যালয়টি থেকে অপর দুটি প্রজেক্ট চূড়ান্ত মনোনীত করা হয়।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আজম খান বলেন, ‘আমরা আবেদন করেছিলাম। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় বেশি পেয়েছে, কিন্তু আমাদেরটা হয়নি। আমি জানি না কোন ক্রাইটেরিয়াতে বিষয়গুলো নির্ধারণ হয়েছে। তবে আমার কাছে এই সিস্টেমগুলো খুব একটা ভালো মনে হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজন অনুযায়ী যদি বরাদ্দ দেয়া হতো, তাহলে আমার মনে হয় ভালো হতো। তারা এই প্রথমবারের মতো যে পদ্ধতি অবলম্বন করেছে তা আমেরিকার মতো উন্নত দেশগুলোতে আছে। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞান সৃষ্টিতে কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারবে সেটাকে গুরুত্ব দেয়া হয়। তবে এই পদ্ধতি এখনো উপযোগী নয়।’
অপরদিকে হিট প্রকল্পে স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের অভিযোগ করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) একদল শিক্ষক। গত ৭ আগস্ট রিসার্চ সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. আবুল হাসনাত, অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম, অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম, অধ্যাপক ড. সাহাবুল হক ও অধ্যাপক ড. জামাল উদ্দিন।
তাদের অভিযোগ, হিট প্রকল্পে ভালো এবং স্বীকৃত গবেষকদের বাদ দিয়ে লো-প্রোফাইল ও কম সাইটেশনধারী শিক্ষকদের প্রজেক্ট নির্বাচিত করা হয়েছে। অতীতে দেশের বিভিন্ন ব্লাকলিস্টেড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রজেক্টও নির্বাচন করা হয়েছে। এক ফিল্ডের শিক্ষক দিয়ে অন্য ফিল্ডের প্রজেক্ট মূল্যায়ন করা হয়েছে। এমনকি প্রজেক্ট নির্বাচনে রাজনৈতিক প্রভাবের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন তারা।
শাবিপ্রবির সিভিল অ্যান্ড ইনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘হিট প্রকল্পে একটি চক্র কাজ করছে। রিভিউ বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়া ছিল গোপনীয় ও অস্বচ্ছ। কারা রিভিউয়ার ছিলেন, কীভাবে নির্বাচিত হয়েছেন বা তাদের যোগ্যতা কি, এসব প্রকাশ করা হয়নি। এ প্রকল্পে পরিচিতদের অনেকে রিভিউ করেছেন, অনেক ক্ষেত্রে নিজ বিভাগের সহকর্মীদের প্রজেক্ট রিভিউ করেছেন, যা স্পষ্ট কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট (স্বার্থের দ্বন্দ্ব)।’
তিনি আরও বলেন, ‘রিভিউয়ার কার প্রজেক্টে কত স্কোর দিয়েছেন এবং কেন দিয়েছেন; সেসব বিষয়ে কোনো মন্তব্য বা রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়নি, যা পুরো প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।’ হিট প্রকল্পে অনেক লো-প্রোফাইল আবেদনকারী ও গবেষককে প্রজেক্ট দেওয়া হয়েছে, যাদের উল্লেখযোগ্য গবেষণা বা আন্তর্জাতিক মানের প্রকাশনা নেই। অনেকেরই পিএইচডি নেই। আবার যারা রিভিউ করেছেন, তাদের অনেকের প্রোফাইলও নিম্নমানের।
মূল্যায়নেও প্রাধান্য বাম ও আওয়ামীপন্থিদের
অনসন্ধানে জানা যায়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ জন শিক্ষককে প্রজেক্টের জন্য বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ড. স্নিগ্ধা কট্টর বামপন্থি শিক্ষক রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং মিজানুর রহমান আওয়ামীপন্থি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি জাবি শিক্ষক সমিতির আওয়ামী প্যানেল থেকে নির্বাচন করে জয়ী হয়েছিলেন। এছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রজেক্ট প্রোপোজাল পেয়েছেন সাতজন। তারমধ্যে আইন বিভাগের এবিএম আবু নোমান ও রসায়ন বিভাগের ফণি ভূষণ সক্রিয়ভাবে আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। প্রজেক্ট পাওয়া আরেক শিক্ষক হলেন বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকিউলার বায়োলজি বিভাগের ড. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম, তিনিও বামপন্থি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। অন্যদের রাজনৈতিক পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
‘হিট প্রকল্পে একটি চক্র কাজ করছে। রিভিউ বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়া ছিল গোপনীয় ও অস্বচ্ছ। কারা রিভিউয়ার ছিলেন, কীভাবে নির্বাচিত হয়েছেন বা তাদের যোগ্যতা কি, এসব প্রকাশ করা হয়নি। এ প্রকল্পে পরিচিতদের অনেকে রিভিউ করেছেন, অনেকক্ষেত্রে নিজ বিভাগের সহকর্মীদের প্রজেক্ট রিভিউ করেছেন, যা স্পষ্ট কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট (স্বার্থের দ্বন্দ্ব)।’ -অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চূড়ান্ত প্রকল্প পেয়েছেন আটজন। এর মধ্যে চারজন হলেন আওয়ামীপন্থি শিক্ষক ও দুইজন বিএনপি-জামায়াতপন্থি। আওয়ামীপন্থি শিক্ষকরা হলেন-ইনস্টিটিউট অব এডুকেশন রিসার্চ বিভাগের শিক্ষক ড. রুবাইয়্যাত জাহান, আইন বিভাগের ড. জুলফিকার আহমেদ, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড জুলফিকার আলী ইসলাম, গণিত বিভাগের গৌর চন্দ্র পাল। এছাড়া অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চিত্র একই। জাতীয় কবি কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকল্প পাওয়ার জন্য চূরান্তভাবে মনোনীত হয়েছেন অধাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল এবং সহযোগী অধাপক ড. শফিকুল ইসলাম। মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম শিক্ষক সমিতি সাবেক সেক্রেটারি এবং শফিকুল ইসলাম সমিতির বর্তমান সেক্রেটারি; তারা দুজনই আওয়ামীপন্থী।
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের মাসুদ রানাও আওয়ামীপন্থি শিক্ষক। পাবনা ও বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বরাদ্দ পাওয়া ৪ শিক্ষকের তিনজনই আওয়ামীপন্থী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে ড. মাসুদ রানা জুলাই আন্দোলন পরবর্তী সময়ে প্রক্টর হলেও ৫ দিনের মাথায় ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন করেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, জুলাই আন্দোলনের বিপক্ষে থাকা শিক্ষক হলেন ড. মাসুদ।
গবেষণায় আরও তিনজন গবেষক সহকারী হিসেবে কাজ করছেন, যাদের মধ্যে ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের ড. কামাল হোসেন এবং ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি বিভাগের এস এম শাহিদুল আলমও আওয়ামীপন্থী শিক্ষক। বাকি থাকা ড. রেবেকা সুলতানা রেখার রাজনৈতিক পরিচয় নিশ্চিত হতে পারেনি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস। শিক্ষা ও গবেষণা নিয়ে তিনি বেশি ব্যস্ত থাকেন বলে স্থানীয় সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এসব বিশ্ববিদ্যায়ের পাশাপাশি অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও রয়েছে একই অভিযোগ।
শুধু আদর্শিক মতাদর্শ নয়, রিভিউয়ার কিংবা হিট প্রজেক্টের সঙ্গে জড়িত থাকা ব্যক্তিদের সঙ্গে সখ্যতার খাতিরেও প্রজেক্ট চূড়ান্ত হয়েছে অনেকের। এর মধ্যে ‘বন্ধুকোটা’, ‘ছাত্রকোটা’তেও পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে বেশ কয়েকটি। রয়েছে ‘স্বজনপ্রীতি’র মতো বিষয়গুলো। প্রজেক্ট বরাদ্দে যেখানে গবেষণা মানের পাশাপাশি স্ব স্ব গবষকের বিশ্ববিদ্যায়ের অবকাঠামো, পরিবেশসহ নানা বিষয় প্রাধান্য পাওয়ার কথা ছিল, সেখানে কিছু ক্ষেত্রে বরাদ্দ পেয়েছে তুলনামূলক নতুন ও অবকাঠমোগত দিক থেকে দুর্বল থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে গবেষণায় ব্র্যাকের পরেই সবচেয়ে বেশি ব্যয় করা বিশ্ববিদ্যালয় ইউল্যাব-এআইইউবি-আইইউবির কোনো শিক্ষকের গবেষণাও চূড়ান্ত বরাদ্দের তালিকায় স্থান পায়নি।
জানা যায়, দেশের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের গবেষণা কার্যক্রমে নতুন গতি আনতে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বাস্তবায়িত হচ্ছে হায়ার এডুকেশন অ্যাকসেলারেশন অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন (হিট) প্রকল্প। এ প্রকল্পের আওতায় সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাঝে দুই ধাপে ১ হাজার ২২৪ কোটি টাকার গবেষণা তহবিল বিতরণ করা হবে। প্রথম ধাপে ৬১২ কোটি টাকার গবেষণা তহবিল বিতরণের প্রক্রিয়া বর্তমানে চলমান। প্রথম ধাপের কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর শুরু হবে দ্বিতীয় ধাপের তহবিল বিতরণ। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে চার হাজার ১৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। প্রকল্পটির যৌথভাবে অর্থায়ন করছে বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকার; এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার ৫১ শতাংশ এবং বিশ্বব্যাংক ৪৯ শতাংশ অর্থায়ন করছে।
‘এত বড় পরিসরের একটি প্রকল্প সম্পর্কে জনগণ-শিক্ষাবিদ-নীতিনির্ধারক এবং সংবাদমাধ্যমের জানার অধিকার ছিল। কিন্তু বাস্তবে পুরো প্রক্রিয়াটি চলেছে ‘সাইলেন্ট মোডে’। প্রকল্প নিয়ে কোনো প্রেস কনফারেন্স হয়নি এবং কোন বিবৃতিও দেয়া হয়নি। অথচ পূর্ববর্তী হেকেপ (হায়ার এডুকেশন কোয়ালিটি এনহেন্সম্যান্ট প্রজেক্ট-এইচইকিউইপি) প্রকল্পের অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ বিপরীত। হেকেপ চলাকালে প্রকল্পের অগ্রগতি, অর্জন, চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে নিয়মিতভাবে প্রেস ব্রিফিং করে গণমাধ্যমকে জানানো হত। এতে করে শুধু সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডাররাই নয়, সাধারণ জনগণও প্রকল্পটির কার্যক্রম সম্পর্কে সচেতন ছিল।’
এর আগে ইউজিসি ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে গবেষণা প্রস্তাব (রিসার্চ প্রপোজাল) আহবান করে। আবেদন জমার শেষ তারিখ ছিল ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দেশের সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মোট ১ হাজার ৫১৬টি গবেষণা প্রস্তাব জমা পড়ে। এর মধ্যে প্রাথমিকভাবে ২০৭টি প্রজেক্ট ব্লাইন্ড রিভিউয়ের মাধ্যম নির্বাচন করা হয়। পরে প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে চূড়ান্ত বরাদ্দের তালিকা প্রকাশ করে সংশ্লিষ্টরা। প্রতিটি প্রস্তাবনা পর্যালোচনা করছেন দুইজন স্বতন্ত্র রিভিউয়ার। প্রকল্পটি ২০২৩ সালের জুলাই মাসে শুরু হয় এবং এটি ২০২৮ সালের জুলাই মাসে শেষ হওয়ার কথা।
নীরবেই চলছে প্রজেক্ট চূড়ান্তকরণ প্রক্রিয়া, নেই প্রেস-ব্রিফিং, প্রেস-রিলিজ; ধোঁয়াশায় খোদ ইউজিসি কর্মকর্তারাও
উচ্চশিক্ষা খাতে পরিচালিত একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প নিয়ে শুরু থেকেই রয়েছে এক ধরনের রহস্যের ঘোর। প্রকল্পটির কাঠামো, উদ্দেশ্য ও অগ্রগতি সবকিছু নিয়েই রয়েছে ধোঁয়াশা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা সংস্থা ও কর্মকর্তারা এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো তথ্য জানাচ্ছেন না, এমনকি প্রকল্পের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সংশ্লিষ্টরাও প্রকল্পের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে অস্পষ্ট অবস্থানে রয়েছেন শীর্ষ পর্যায়ের দুজন এবং মধ্যম সারির তিন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
অনেক শিক্ষক-অধ্যাপকও বলছেন, তারা এ প্রকল্প নিয়ে কিছু জানেন না বা জানার সুযোগ পাননি। তাদের বক্তব্য, ৯০ শতাংশ ব্লাইন্ড রিভিউয়ে যেখানে তারা উত্তীর্ণ হয়েছেন, সেখানে মাত্র ১০ মার্কসের প্রেজেন্টেশনে তাদেরকে কেন বাদ দেওয়া হলো, সে বিষয়গুলো তাদের কাছে পরিষ্কার নয়।
ইউজিসির মধ্যম সারির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এত বড় পরিসরের একটি প্রকল্পে স্বাভাবিকভাবে জনগণ, শিক্ষাবিদ, নীতিনির্ধারক এবং সংবাদমাধ্যমের জানার অধিকার থাকা উচিত ছিল। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, পুরো প্রক্রিয়াটি চলছে এক ধরনের ‘সাইলেন্ট মোডে’। প্রকল্প নিয়ে কোনো প্রেস কনফারেন্স হয়নি এবং কোন বিবৃতিও দেয়া হয়নি। অথচ পূর্ববর্তী হেকেপ (হায়ার এডুকেশন কোয়ালিটি এনহেন্সম্যান্ট প্রজেক্ট-এইচইকিউইপি) প্রকল্পের অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ বিপরীত।
তিনি বলেন, হেকেপ চলাকালে প্রকল্পের অগ্রগতি, অর্জন, চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে নিয়মিতভাবে প্রেস ব্রিফিং করে গণমাধ্যমে তথ্য জানানো হতো। এতে করে শুধু সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডাররাই নয়, সাধারণ জনগণও প্রকল্পটির কার্যক্রম সম্পর্কে সচেতন ছিল। কিন্তু এসব বিষয় পুরোপুরি অনুপস্থিত এই হিট প্রকল্পের ক্ষেত্রে। সম্প্রতি ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ দেশের বাইরে অবস্থানকালীন ও ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান ইউজিসির রুটিন দায়িত্ব পালনকালীন গবেষণাগুলো চূড়ান্তকরণ ও তালিকা প্রকাশ করা হয়; যা নিয়ে ইউজিসির শীর্ষ কর্মকর্তারা তো বটেই, খোদ চেয়ারম্যারে মধ্যেও কিছুটা ‘চাপা অসন্তোষ’ রয়েছে বলে দাবি সূত্রটির।।
বিষয়টি নিয়ে ইউজিসির আরও দুজন সদস্যের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে ‘জানেন না’ এবং সংশিষ্ট দপ্তরে কথা বলার পরামর্শ দিয়ে এড়িয়ে গেছেন।
৪৩ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫১ প্রজেক্ট
প্রথম ধাপে প্রায় ৪৩ পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা মোট ১৫১টি প্রজেক্ট পেয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) সর্বোচ্চ ১৫টি প্রজেক্ট পেয়েছে। এরপর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পেয়েছে ৮টি করে প্রজেক্ট। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পেয়েছে ৭টি প্রজেক্ট। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি), নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ৬টি করে প্রজেক্ট পেয়েছে। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভিএএসইউ) ও যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি), জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) পেয়েছে ৫টি করে প্রজেক্ট। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় পেয়েছে ৪টি, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ৩টি প্রজেক্ট।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট), বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (সিইউইটি), ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ইউআইইউ), গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (গোবিপ্রবি), মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়; এগুলো পেয়েছে ২ থেকে ৪টি প্রজেক্ট করে। এছাড়াও হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি), শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (শেকৃবি), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পেয়েছে ২টি করে প্রজেক্ট।
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট), ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি চট্টগ্রাম, লিডিং বিশ্ববিদ্যালয়, নেত্রকোণা বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, গ্রীন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি এবং বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়; এই প্রতিষ্ঠানগুলো প্রত্যেকেই ১টি করে প্রজেক্ট পেয়েছে।
অভিজ্ঞরাই এক্সপার্ট কমিটিতে ছিলেন, বললেন ইউজিসি সদস্য ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান
‘প্রেজেন্টেশন রিভিউয়ার নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমরা সচেতনভাবে চেষ্টা করেছি যেন মূল্যায়নটি নিরপেক্ষ ও সুষম হয়। একদিকে অনেক শিক্ষকই কোনো না কোনোভাবে রাজনৈতিকভাবে সংশ্লিষ্ট, অন্যদিকে শিক্ষকদের বড় একটি অংশ প্রকল্প প্রস্তাব জমা দিয়েছেন। আবার অনেকেই প্রকল্পের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট রয়েছেন। এ অবস্থায় আমরা এমন রিভিউয়ার নির্বাচন করেছি, যারা সময় দিতে সম্মত হয়েছেন এবং পুরো প্রক্রিয়াজুড়ে তিনদিনই উপস্থিত থাকতে রাজি হয়েছেন; যদিও সবাইকে রাজি করানো সহজ ছিল না।’
কেউ একটানা তিনদিন সময় দিতে চায়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কারণ, প্রতিদিন ভিন্ন ভিন্ন এক্সপার্ট থাকলে মূল্যায়নে হেরফের হতে পারত। তাই আমরা একটি নির্দিষ্ট ও অভিজ্ঞ দলকে এক্সপার্ট হিসেবে নির্ধারণ করেছি। এছড়া গবেষণা প্রস্তাব পুরো প্রক্রিয়ায় রিভিউয়ার ছিলেন কমপক্ষে ২ হাজার ৮০০ জনের অধিক অধ্যাপক।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই রিভিউয়ারদের নির্বাচন করেছেন কমিটি অব এক্সপার্টস। আমি বা ইউজিসির অন্য কোনো সদস্যের এককভাবে কোনো নাম প্রস্তাব বা মনোনয়ন দেওয়ার সুযোগ ছিল না। এখানে কোনো সদস্যের একক সিদ্ধান্ত নেওয়ার অবকাশও নেই। আরেকটি ব্যাপার হলো এখানে কেউ ব্যক্তিগতভাবে প্রোপোজাল প্রস্তাব জমা দেয়নি। তারা প্রত্যেকে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের অনুমোদন নিয়ে তারা প্রোপোজাল জমা দিয়েছেন। যেহেতু এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে এসেছে, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বকিয়তার ওপর নিজস্ব সিদ্ধান্ত প্রনয়ণকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছি।’
অধ্যাপক তানজীম আরও বলেন, ‘যাদের নাম ঘিরে আলোচনা হচ্ছে, তাদের পেশাগত যোগ্যতা বা সততা নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। তারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ ও সুপ্রতিষ্ঠিত।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। অফিসে অন্তত দুদিন গেলেও তিনি ‘মিটিংয়ে’ ব্যস্ত রয়েছেন বলে প্রতিবেদককে জানানো হয়।