
সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, এখন নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে দেশ। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারকে সহযোগিতা করার জন্য সেনাবাহিনী সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে সেনারা মাঠে দায়িত্ব পালন করছেন। আগে এত দীর্ঘ সময় মাঠে থাকতে হয়নি। মাঠে দায়িত্ব পালনে সেই পেশাদারিত্ব দেখাতে হবে। প্রতিশোধমূলক কাজে নিজেদের জড়ানো যাবে না। তাই সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। দূরত্ব থাকলে তা দূর করতে হবে। জনগণের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখেই দায়িত্ব পালন করতে হবে। দেশের কঠিন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সেনা সদস্যরা দায়িত্ব পালন করে পেশাদারিত্বে পরিচয় দিয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
মঙ্গলবার ঢাকা সেনানিবাসে ‘অফিসার্স অ্যাড্রেস’ অনুষ্ঠানে সেনা সদস্যদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এছাড়াও দেশের বিভিন্নস্থানের ক্যান্টনমেন্ট থেকে সেনা কর্মকর্তারা ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন। অনুষ্ঠানে একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বক্তব্য রাখেন। সেনা প্রধান তাদের বক্তব্য মনোযোগ সহকারে শুনেন। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সেনা কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অফিসার্স অ্যাড্রেস সেনাপ্রধান বলেন, দেশের মানুষ এখন সেনা সদস্যদের দিকে তাকিয়ে আছে। তোমরাই দেশের ভবিষ্যৎ। তাই দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে এবং বাহিনীর চেইন অব কমান্ড অক্ষুণ্ন রাখতে হবে। সেনাবাহিনী একটি পেশাদার সংগঠন। মাঠে দায়িত্ব পালনের সময় পেশাদারিত্ব দেখাতে হবে। প্রতিশোধমূলক কোনো কাজে জড়ানো যাবে না।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিষয়ে নানা কটূক্তির জবাবে তিনি বলেন, এসব মন্তব্যে অখুশি হওয়ার কিছু নেই। যারা এসব করছে, তাদের বয়স কম। তারা আমাদের সন্তানের বয়সী। তারা বড় হলে নিজেদের ভুল বুঝতে পারবে। তখন নিজেরাই লজ্জিত হবে।
নাম উল্লেখ না করে সেনাপ্রধান বলেন, একজন সেনাসদস্যের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগ তদন্তাধীন। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেনাবাহিনীর কোনো সদস্য রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়াতে পারবেন না। আরেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের অভিযোগ নিয়েও তদন্ত চলছে। নৈতিক স্খলনের বিষয়ে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। তবে মিডিয়া ট্রায়ালের ভিত্তিতে কাউকে সাজা দেওয়া হবে না। অভিযোগ প্রমাণিত হলে অবশ্যই সেনা বাহিনী আইনানুগ ব্যবস্থা নিবে।
সেনাপ্রধান উপস্থিত সেনা কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, একজন সেনা কর্মকর্তাকে গড়ে তুলতে রাষ্ট্র বিপুল অর্থ ব্যয় করে। তাই কেউ যাতে অপরাধে জড়াতে না পারে, সে বিষয়ে আগেভাগেই খেয়াল রাখতে হবে। অপরাধে জড়িয়ে পড়ার পর তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিলে সেটি রাষ্ট্রের অর্থের অপচয় ছাড়া কিছুই নয়। সেনাবাহিনী জনগণের আস্থার প্রতীক। জনগণ যখনই বিপদের মধ্যে পড়েছে তখন ত্রাতা হিসাবে সর্ব প্রথম এগিয়ে গেছে সেনাবাহিনী। এই বাহিনীর ওপর আস্থা দেশের সকল জনগণের। এই সুনাম যে কোনো মূল্যে ধরে রাখতে হবে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া তথ্য ছড়ানো প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান বলেন, সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর বার্তা ছড়ানো হচ্ছে। এসব দেখে বিভ্রান্ত হওয়া যাবে না। সতর্ক থাকতে হবে, যাতে কেউ ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি নষ্ট করতে না পারে। তিনি বলেন, দেশের মানুষ এখন সেনাসদস্যদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। তোমরাই দেশের ভবিষ্যৎ। তাই দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে এবং বাহিনীর চেইন অব কমান্ড অক্ষুণ্ন রাখতে হবে।