Image description

ফরিদপুরের তিনটি উপজেলার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে মধুমতি নদী। বিগত দিনগুলোতে নদীভাঙনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সড়ক, ফসলি জমি, মসজিদসহ বসতবাড়ি হারিয়েছেন এই এলাকার হাজারো মানুষ। স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর মধুমতির তীর রক্ষা বাঁধের কাজ শুরু হয়েছে। কয়েক যুগের বুকের মধ্যে পুষে রাখা স্বপ্ন বাস্তবে রূপ পাওয়ায় উচ্ছ্বসিত মধুমতি পাড়ের বাসিন্দারা।

মধুমতি নদীর ভয়াল থাবায় ফরিদপুর জেলার তিনটি উপজেলার (আলফাডাঙ্গা-বোয়ালমারী ও মধুখালী) শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ফসলি জমি, পাকা সড়ক, মসজিদসহ বসতবাড়ি হারিয়েছেন হাজারো মানুষ। নদীতে বসতবাড়ী বিলীন হয়ে অনেকেই হয়েছেন নিঃস্ব। এখনও হুমকির মুখে রয়েছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ কয়েক শ বসতবাড়ি। প্রতিনিয়ত সর্বনাশা নদী চোখ রাঙাচ্ছে বসতভিটা কেড়ে নিতে।

সরেজমিনে জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের বাজরা গ্রামের নদীপাড় এলাকায় দেখা যায়, বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। ভেকু দিয়ে কাটা হচ্ছে পাড়, পাশেই ব্লক তৈরি করে তা ফেলা হচ্ছে তীরে, কেউ আবার বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলছে নদী পাড়ে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বাঁধ নির্মাণকাজ শুরু হওয়ায় খুশি স্থানীয় এলাকাবাসী।

এ বাঁধ তাদের নতুন করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখাচ্ছে। তবে বাঁধ নির্মাণে যেন কোনও অনিয়ম না হয় সেদিকে খেয়াল রাখার দাবি স্থানীয়দের।

স্থানীয় বাসিন্দা এনামুল হাসান, মুজাহিদুল ইসলাম, শরিফ হাবিব, সখিনা খাতুন, রেখা পারভিনসহ অনেকের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তাদের সবার একই কথা– ‘দাদা তার বসতভিটা, বাবা বসতভিটা হারিয়েছে এখন আমাদের হারানোর পালা। আমাদের শেষ সম্বলটুকু রক্ষায় মধুমতি পাড়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য স্বাধীনতার পর দীর্ঘ সময় এই অঞ্চলের জনপ্রতিনিধি, সরকারি উচ্চ পর্যস্থ কর্মকর্তাসহ এমন কোনও জায়গা নেই যেখানে আমরা যাইনি। দীর্ঘ অপেক্ষার পর তিনটি উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ প্রায় ৭ কিলোমিটার অংশে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। আর এতেই আমরা নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি।’

 

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান একেএম জাহিদ হাসান বলেন, ‘মধুমতি নদীর আগ্রাসনে বিশেষ করে আলফাডাঙ্গা অঞ্চল ভয়াবহ ভাঙনের শিকার হয়েছে। অবশেষে সরকারের আন্তরিকতায়  দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হচ্ছে।’    

ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিব হোসেন বলেন, ‘মধুমতি নদীর তীররক্ষা বাঁধের ২৮টি প্যাকেজের আওতায় ইতোমধ্যেই প্রকল্পটির ৩০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। দুই বছর মেয়াদে আগামী বছরের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করা হবে আশা করছি।’

এ প্রকৌশলী আরও বলেন, ‘বাঁধ নির্মাণের ফলে এলাকার মানুষের ফসলি জমি, বাড়ি-ঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা রক্ষা পাবে। সরকারের ৪৮১ কোটি টাকা ব্যয়ে সাড়ে ৭ কিলোমিটার তীর রক্ষা বাঁধ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। আমরা প্রকল্পটি সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছি। বাঁধ নির্মাণ শেষ হলে এ অঞ্চলে মানুষ তার সুফল ভোগ করবে। প্রাণ ফিরে পাবে মধুমতি পাড়ের মানুষের কর্মযজ্ঞে, পরিবর্তন হবে অর্থনৈতিক জীবন মানের।’