আসন্ন রিয়াদ বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল (বাংলা শাখা) পরিচালনা পর্ষদ (বিওডি) নির্বাচনকে সামনে রেখে জাল শিক্ষাগত সনদ ব্যবহার করে অন্তত দুইজন প্রার্থী প্রার্থীতা দাখিল করেছেন এমন অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে একজন প্রার্থীর বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট ও যাচাইকৃত তথ্য ইতোমধ্যে আমাদের হাতে পৌঁছেছে। বাংলাদেশ দূতাবাস, রিয়াদ দুই দফায় নির্বাচন স্থগিতের পর আগামী ২১ নভেম্বর চূড়ান্তভাবে নির্বাচনের দিন নির্ধারণ করেছে। নির্বাচনী মাঠে যখন প্রার্থীরা বিভিন্নভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন, ঠিক সেই সময় প্রার্থী ফারুক আহমেদের দাখিলকৃত শিক্ষাগত যোগ্যতায় গুরুতর জালিয়াতির প্রমাণ সামনে এসেছে।
ছবিঃ অভিযুক্ত ফারুক আহমেদ
আমাদের বিশেষ অনুসন্ধানে জানা গেছে ১৯৯৯ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে আসেন লক্ষ্মীপুরের ফারুক আহমেদ। এবং দীর্ঘদিন স্বপরিবারে তিনি রিয়াদে বসবাস করছেন।
প্রার্থীতা দাখিলের সময় ফারুক আহমেদ যে সনদপত্র জমা দিয়েছেন, তাতে উল্লেখ রয়েছে তিনি ২০০১–০২ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়ে ২০০৪ সালে ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (EEE)–এ বিএসসি সম্পন্ন করেছেন। তবে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, উক্ত পুরো সময় তিনি সৌদি আরবেই অবস্থান করছিলেন, যা এই ডিগ্রির সত্যতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে।
আমাদের প্রথম অনুসন্ধানে আমরা সৌদি আরব জাওয়াযাত থেকে তার ডাটা উত্তোলন করে দেখতে পাই, তিনি ১৪২০ সালের রবিউল আউয়াল মাসের ০৩ তারিখ তথা ইংরেজি ১৯৯৯ সালের ১৫ই জুন তিনি সৌদি আরব পাড়ি জমান।
আমাদের দ্বিতীয় অনুসন্ধানী টিম সরেজমিন তদন্তে নেমে তার গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর উপজেলার দালাল বাজার সংলগ্ন উত্তর বাঞ্চানগর, বায়েজিদ পাটোয়ারী বাড়িতে গিয়ে আরও বেশ কিছু অসঙ্গতি খুঁজে পায়। একই বাড়ির বাসিন্দা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক ব্যক্তি জানান, “আমিন মিয়ার পোলা কলেজ পর্যন্তই যায়নি, ইঞ্জিনিয়ার হইলো কবে!” উল্লেখ্য, প্রার্থীর পিতার নাম মোহাম্মদ আমিন।
ছবিঃ সৌদি থেকে উত্তোলনকৃত জাওজাত প্রিন্ট
যে সনদ তিনি দাখিল করেছেন, তাতে উল্লেখ আছে “THE UNIVERSITY OF COMILLA BANGLADESH” থেকে তিনি বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করেছেন, যা University Grants Commission (UGC) কর্তৃক অনুমোদিত নয়।
এদিকে ফারুক আহমেদের সার্টিফিকেট ভেরিফাই করা প্রতিষ্ঠানের দেয়া ঠিকানা অনুযায়ী আমাদের প্রতিবেদক কুড়িল প্রগতি স্মরনী, উত্তরা ৮ নাম্বার সেক্টর ভ্রমণ করে এমন কোন প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্বই খুঁজে পাননি।
আরেকজন প্রার্থী রোকনুজ্জামান কর্তৃক দাখিলকৃত সার্টিফিকেটে উল্লেখিত “America Bangladesh University” যা “University Grants Commission” (UGC) কর্তৃক অনুমোদিত নয়। এছাড়াও রোকনুজ্জামানের জন্ম সালের সাথে সার্টিফিকেটের বয়সের তারতম্য সার্টিফিকেটের বৈধতার ব্যাপারে প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে।
এদিকে বিষয়টি জানাজানি হলে রিয়াদ কমিউনিটিতে বিষয়টি সমালোচনার ঝড় উঠে। অভিভাবকদের মধ্যে ব্যপক ক্ষোভের জন্ম দেয়। অভিভাবকরা বলছেন যারা নিজেরাই জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে, তারা নির্বাচিত হলে আমাদের সন্তানদের সে কী শিক্ষা দিবে। তাদের নৈতিক অধিকারই বা কতটুকু থাকবে শিক্ষকদের সাথে কথা বলার।
বাকীদের তথ্য উদঘাটনে আমাদের অনুসন্ধান চলমান আছে।