Image description
পল্লবীতে যুবদল নেতা হত্যা

রাজধানীর মিরপুর ১২ নম্বর ‘সি’ ব্লকের বিক্রমপুর হার্ডওয়্যার অ্যান্ড স্যানিটারি দোকানে সোমবার সন্ধ্যায় স্বাভাবিকভাবে প্রবেশ করেন পল্লবী থানা যুবদলের সদস্য সচিব গোলাম কিবরিয়া। এ সময় ৩টি মোটরসাইকেলে করে ৬ জন দুর্বৃত্ত এসে দাঁড়ায় দোকানের সামনে। তাদের মধ্যে হেলমেট ও গায়ে চাদর পরিহিত তিনজন দুবর্ৃৃত্ত দোকানে প্রবেশ করে প্রকাশ্যে কিবরিয়াকে গুলি করে। গুলিবিদ্ধ হয়ে কিবরিয়া দোকানের ফ্লোরে পড়ে গেলে মাথায় ও বুকে গুলি করে তারা। গুরুতর আহত অবস্থায় গোলাম কিবরিয়াকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেয়া হলে, চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পুরো  নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটে মাত্র ১০ সেকেন্ডে। ঘটনার সময় দোকানের ভেতরে কয়েকজন উপস্থিত থাকলেও তারাও ব্যস্ত হয়ে পড়েন নিজেদের বাঁচাতে।  গুলি ছুড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় আশপাশের লোকজন ধাওয়া দিয়ে জনী ভূঁইয়া নামের এক যুবককে আটক করে। তার বাসা ক্যান্টনমেন্ট থানার দক্ষিণ মানিকদি এলাকায়। তার বাবার নাম আশবুদিন।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়,  গ্রেপ্তারকৃত জনিকে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছে ৬ জন। চিহ্নিত সন্ত্রাসী পাতা সোহেল, ভাগনে মাসুম, দর্জি মামুন, বোমা কালু ও রোকন কিলিং মিশনে অংশ নেয়। তবে রাজনৈতিক, মাদক নাকি আন্ডার ওয়ার্ল্ডের দ্বন্দ্ব তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৩টি মোটরসাইকেল করে ৬ জন এসে দাঁড়ায় দোকানটির সামনে। তিনজন দোকানে প্রবেশ করে গুলি ছোড়ে। এ সময় স্থানীয়রা ধাওয়া দিলে দুইজন সন্ত্রাসী একটি অটোরিকশায় জোর করে ওঠে যায়। দ্রুতগতিতে অটোরিকশা চালানোর জন্য চালককে চাপ দিতে থাকেন। দ্রুতগতিতে না চালানোর কারণে রিকশাচালক আরিফুলকে  লক্ষ্য করেও গুলি চালায় তারা। এ সময় স্থানীয়রা ধাওয়া দিয়ে জনি নামে একজনকে আটক করে। সন্ত্রাসী পাতা সোহেলের লোকেরা এ হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। পল্লবী এলাকার একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ এই পাতা সোহেলের। দীর্ঘদিন ধরে তার সঙ্গে বিরোধ ছিল গোলাম কিবরিয়ার। সেই বিরোধের জেরে এ হত্যা-এমনই ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনাস্থল থেকে ৭ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছে পুলিশ।

আহত আরিফ  বলেন, দু’জন হেলমেটপরা ব্যক্তি অস্ত্র ঠেকিয়ে জোর করে তার রিকশায় ওঠে। এ সময় তারা দ্রুত অটোরিকশা চালাতে বলে। কিন্তু রিকশার ব্যাটারিতে পর্যাপ্ত চার্জ না থাকায় সে দ্রুত চালাতে পারেনি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আমার পিঠে গুলি করে দ্রুত রিকশা থেকে নেমে পালিয়ে যায়।

ডিএমপি’র মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বলেন, এ নৃশংস হত্যায় স্থানীয়রা জনি নামে একজনকে আটক করে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে চিহ্নিত সন্ত্রাসী পাতা সোহেল, ভাগনে মাসুম, দর্জি মামুন, বোমা কালু ও রোকনের নাম উঠে এসেছে। তারা ছয়জন কিলিং মিশনে অংশ নেয়। তিনি আরও বলেন, ব্যবসায়িক, রাজনৈতিক নাকি মাদক নিয়ে দ্বন্দ্ব তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া আন্ডারওয়ার্ল্ডের কানেকশন রয়েছে  কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, নিহত গোলাম কিবরিয়ার  ৪ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে দুই ভাই ইউরোপে বসবাস করেন। তার  দুই কন্যা সন্তান রয়েছে।  ছোটবেলা থেকেই পরিবারের সবাই ঢাকায় বসবাস করে আসছেন। রাজনৈতিকভাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করায় ঈর্ষা থেকেই কেউ সন্ত্রাসী ভাড়া করে এ হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে বলে অভিযোগ করছেন স্বজনরা। 
নিহতের খালাতো ভাই মো. পারভেজ বলেন, আমার ভাই খুব ভালো মানুষ ছিলেন। গত বছর বাড়িতে এসেছিলেন। একসময় ভালো ফুটবলার ছিলেন তিনি। বিএনপি করার কারণেই কয়েকবার জেল খেটেছেন। তার ব্যাপক রাজনৈতিক জনপ্রিয়তা ছিল এলাকায়। রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় কেউ এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড মেনে নিতে পারছি না।  যারা আমার ভাইকে হত্যা করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

ঢাকা মহানগর পুলিশের  (ডিএমপি) মিডিয়া বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার তালেবুর রহমান বলেন,  এ ঘটনায় তদন্ত একদম প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। অপরাধীদের গ্রেপ্তারে আমরা অভিযান পরিচালনা করছি, এখন পর্যন্ত একজনকে আটক করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং তার কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য আমরা যাচাই-বাছাই করছি।  তবে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র এখনো উদ্ধার করা যায়নি। হত্যাকাণ্ডে জড়িত বাকি দু’জনকে গ্রেপ্তারের পর মূল রহস্য জানা যাবে। এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে তার স্ত্রী বাদী হয়ে মামলা করেছেন।