মানবতাবিরোধী অপরাধে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ই মামলাটি আইনি প্রক্রিয়ার শেষ ধাপ নয়। ন্যায়বিচার পাওয়ার লক্ষ্যে উচ্চ আদালতে সংক্ষুব্ধ যে কেউই যেতে পারে। তবে শেখ হাসিনার জন্য এই সুযোগ থাকবে না যদি তিনি আত্মসমর্পণ না করেন। নির্ধারিত ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে আত্মসমর্পণ বা গ্রেপ্তার না হলে আপিলের সেই সুযোগ থাকবে না। এরপর গ্রেপ্তার হলে বা আত্মসমর্পণ করলে সরাসরি ফাঁসির মঞ্চে যেতে হবে। যদিও বাংলাদেশে কোনো নারীর ফাঁসি কার্যকরের রেকর্ড নেই।
শেখ হাসিনার মামলাটি পরবর্তী ধাপ কী হবে এই প্রশ্নে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, গত সোমবার এই মামলার রায় হয়েছে। এখন দেখতে হবে আসামি পক্ষ রায়ের বিপরীতে কী পদক্ষেপ নেন। তাদের পদক্ষেপ অনুযায়ী প্রসিকিউশন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে মামলাটি নিয়ে উচ্চ আদালতে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে কিনা- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, মামলার রায়ের কপি এখনো প্রকাশ হয়নি। রায়ের কপি প্রকাশ হলে, প্রসিকিউশন রায়টি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিবেন। তবে, এখন পর্যন্ত প্রসিকিউশন থেকে এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি যে, মামলাটি নিয়ে উচ্চ আদালতে যাওয়া হবে।
পলাতকদের ফেরাতে দুইভাবে চেষ্টা করা হবে: এই মামলায় ৩ আসামির মধ্যে দুজন পলাতক রয়েছেন। প্রসিকিউটর মিজানুল বলেন, পলাতক দুজন আসামির মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে রয়েছেন এটি নিশ্চিত। তবে, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ঠিক কোন দেশে রয়েছেন এটি নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তিনি একবার বলেন ভারতে রয়েছেন আবার তা অস্বীকার করেন। আমরা পলাতক আসামিদের দেশে ফিরিয়ে রায় কার্যকরের জন্য দু’ভাবে চেষ্টা করবো। প্রথমে আমরা ভারতের সঙ্গে বন্দি বিনিময় চুক্তির মাধ্যমে আসামিদের ফেরত আনার চেষ্টা করবো। যদি এটি ফেইল (ব্যর্থ) করে তহলে আমরা ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারির মাধ্যমে আসামিদের ফেরত আনার ব্যবস্থা করবো।
আসামিদের ৩০ দিনের মধ্যে আপিল, ৬০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে: প্রসিকিউটর মিজানুল আরও বলেন, আইসিটি আইন অনুযায়ী রায়ের ৩০ দিনের মধ্যে আপিল দায়ের করতে হবে এবং ৬০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির বিধান রয়েছে। আমাদের দেশে আপিলের মেয়াদ নির্ধারিত হয় তামাদি আইন দ্বারা। এই আইনেই বলে দেয়া আছে কোন মামলায় কতোদিনের মধ্যে আপিল করতে হবে। তিনি বলেন, তামাদি আইনের ৫ ধারায় বলা আছে, নির্ধারিত সময়ে আপিল করতে না পারলে উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে তা আদালতে আবেদন করতে হবে। তখন আদালত দেরি মওকুফ করে আপিল করার সুযোগ দিতে পারে। কিন্তু আইসিটি আইনের মধ্যেই বলা আছে-৩০ দিনের মধ্যে আবেদন করতে হবে। এই রায়ের সার্টিফাইড কপি বের হওয়ার পরে আপিল করতে হবে। তবে পলাতক আসামিদের ক্ষেত্রে সে সুযোগ নাই। আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এটি তারা জানেন। তাই তাদের আত্মসমর্পণ না করে কিংবা গ্রেপ্তার না হলে তাদের আপিলে যাওয়ার সুযোগ নাই।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী মনোয়ার হোসেন তামিম গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, এই মামলার শুরুতে পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি ছিল। তিনি বলেন, ইন্টারপোলে পূর্বে জারি হওয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানার বদলে কনভিকশন ওয়ারেন্ট বা সাজার পরোয়ানা মূলে তার বিরুদ্ধে আরেকটি ইন্টারপোলে নোটিশ জারির জন্য আবেদন করা হবে। ফরেন মিনিস্ট্রির মাধ্যমে ইন্টারপোলে আবেদন করার প্রস্তুতি শুরু করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন। তিনি আরও বলেন, পলাতক দুই আসামির বিরুদ্ধে হওয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশের রায়ের কপি শিগগিরই জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (ঢাকায় জেলা প্রশাসক) সহ কয়েকটি দপ্তরে পাঠানো হবে রায়টি কার্যকরের জন্য। তিনি বলেন, আইসিটি আইনে বলা আছে ট্রাইব্যুনালের সকল রায় সরকার বাস্তবায়ন করবে। এখন এই রায়ের কপি যখন ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে যাবে তারা সিদ্ধান্ত নিবেন, রায়ের কোন অংশ তারা কীভাবে কার্যকর করবে।
তামিম বলেন, পুনর্গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সোমবার প্রথম রায় প্রদান করেছেন ট্রাইব্যুনাল এবং এই রায়ের পরে রায়ের শেষ প্যারাতেই উল্লেখ আছে যে, এই রায়ের একটি সার্টিফাইড কপি ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন পাবে এবং একটি সার্টিফাইড কপি এই মামলায় যে আসামি উপস্থিত ছিলেন তিনি পাবেন এবং যে আসামিরা পলাতক আছেন তারা যদি ৩০ দিনের মধ্যে সারেন্ডার করেন অথবা গ্রেপ্তার হন তাহলে তারাও এই রায়ের একটি সার্টিফাইড কপি পাবেন ফ্রি অফ কস্ট (বিনামূল্যে)। আরেকটি কথা ট্রাইব্যুনাল বলে দিয়েছেন সেটা হলো যে, এই রায়ের আরেকটি কপি ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে, মানে ঢাকার জেলা প্রশাসক যিনি এজ ওয়েল এজ ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট, উনার কাছে ফর কমপ্লায়েন্সের জন্য যাবে এটার কার্যকারিতার জন্য।
তিনি আরও বলেন, আমরা যেটা করবো সেটা হলো যে, যে দুজন আসামি পলাতক আছে তাদের বিরুদ্ধে একটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কপিসহ রেড নোটিশ জারির আবেদন করা আছে আমাদের আগেই। সেটাকে এখন মডিফাই করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার বদলে একটা কনভিকশন ওয়ারেন্ট এই কনভিকশন ওয়ারেন্ট বা সাজার পরোয়ানা মূলে আমরা তার বিরুদ্ধে আরেকটি ইন্টারপোলে নোটিশ জারির জন্য আবেদন করবো থ্রো ফরেন মিনিস্ট্রি এটা আমরা করবো এবং এটার কাজ অলরেডি আমরা শুরু করেছি। এটি চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ের পক্ষ থেকে ফরেন মিনিস্ট্রিতে পাঠানো হবে। ফরেন মিনিস্ট্রির মাধ্যমে এটি ইন্টাপোলে যাবে। আমরা জাজমেন্টের কপি হাতে পেলেই এটি পাঠিয়ে দিবো।