ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন অনেকে। বিদ্রোহী প্রার্থীর তৎপরতায় হিমশিম খাচ্ছে দলটি। এ পরিস্থিতিতে বেশকিছু আসনে মনোনয়ন পরিবর্তন করলেও বাকিগুলোর সমস্যা রয়েই গেছে। মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের অভিযোগ, বিগত দিনের আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা ও জনপ্রিয়তাকে মাপকাঠি হিসেবে না নিয়ে কতিপয় সিন্ডিকেটের তল্পিবাহকদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এতে ত্যাগী আর যোগ্যরা উপেক্ষিত হয়েছেন, আর নব্য ও হাইব্রিডদের মূল্যায়ন করা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম-১ (নাগেশ্বরী ও ভূরুঙ্গামারী) আসনে বিএনপির টিকিট পেয়েছেন সাবেক এমপি ও কেন্দ্রীয় সদস্য সাইফুর রহমান রানা। এই আসনে ড্যাবের যুগ্ম মহাসচিব চিকিৎসক ইউনুস আলী বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন।
কুড়িগ্রাম-৩ (উলিপুর) আসনে বিএনপির প্রার্থী, দলের চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা এবং জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি তাসভীর উল ইসলাম। এখানে বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। গতকাল সোমবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তিনি।
বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহির উদ্দিন স্বপন ধানের শীষের প্রার্থী। এ আসনে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
কুমিল্লা-৬ (সদর ও সদর দক্ষিণ উপজেলা, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এবং সেনানিবাস) আসনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাজি ইয়াছিন। এ আসনে বিএনপি চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী দলীয় প্রার্থী।
ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামাল। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা গোলাম আজম সৈকত।
যশোর-১ (শার্শা) আসনে বিএনপির প্রার্থী শার্শা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ নুরুজ্জামান লিটন। বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
যশোর-২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা) আসনে বিএনপি মনোনীত সাবিরা সুলতানা মুন্নী। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন জেলা বিএনপির সদস্য ও চৌগাছা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জহুরুল ইসলাম।
যশোর-৪ (বাঘারপাড়া, অভয়নগর উপজেলা ও বসুন্দিয়া ইউনিয়ন) আসনে প্রাথমিক মনোনয়ন পান দলের কেন্দ্রীয় নেতা ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ূব। কিন্তু চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন দলের অভয়নগর উপজেলা কমিটির সভাপতি মতিয়ার রহমান ফারাজী। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুব ও তার ছেলে ফারহান সাজিদ মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
মাদারীপুর-১ (শিবচর) আসনে ধানের শীষের মনোনয়ন বাতিল হওয়া শিবচর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কামাল জামান মোল্লা (নুরুদ্দিন মোল্লা) স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে লড়বেন।
মেহেরপুর-১ (সদর-মুজিবনগর) আসনে বিএনপির প্রার্থী সাবেক এমপি মাসুদ অরুণ। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুল হাসান, মুজিবনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আমিরুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রোমান আহমেদ বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন।
মুন্সীগঞ্জ-১ (শ্রীনগর ও সিরাজদীখান উপজেলা) আসনে বিএনপির প্রার্থী শেখ মো. আব্দুল্লাহ। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বেচ্ছাসেবক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু ও শ্রীনগর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. মমিন আলী।
মুন্সীগঞ্জ-৩ (মুন্সীগঞ্জ সদর ও গজারিয়া উপজেলা) আসনে কেন্দ্রীয় বিএনপির সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক মো. কামরুজ্জামান রতন দলের প্রার্থী। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মো. মহিউদ্দিন।
ঝিনাইদহ-৪ আসনে (কালীগঞ্জ ও সদরের একাংশ) ধানের শীষের প্রার্থী গণঅধিকার পরিষদ ছেড়ে সদ্য বিএনপিতে যোগ দেওয়া রাশেদ খান। কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।
রাজবাড়ী-২ (পাংশা-কালুখালী-বালিয়াকান্দি) আসনে বিএনপির প্রার্থী জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. হারুন-অর-রশিদ। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নাসিরুল হক সাবু ও বিএনপি নেতা মো. মুজাহিদুল ইসলাম মুজাহিদ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ-বিজয়নগর আংশিক) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। এ আসনে জোট প্রার্থী মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিরাজকে নিয়ে তার মনোনয়নপত্র জমা দেন।
নেত্রকোনা-৩ (কেন্দুয়া-আটপাড়া) আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম হিলালী দলের প্রার্থী। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও কেন্দুয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়া দুলাল বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন।
নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনে বিএনপির প্রয়াত নেতা ফজলুর রহমান পটলের ছোট মেয়ে, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুলকে মনোনয়ন দিয়েছে দল। সেখানে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।
নোয়াখালী-৫ (কোম্পানীগঞ্জ-কবিরহাট ও সদরের আংশিক) আসনে দলের মনোনয়ন না পেয়ে বিএনপির প্রয়াত স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের স্ত্রী হাসনা জসীমউদ্দিন মওদুদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। এই আসনে বিএনপির মনোনীত এমপি প্রার্থী মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম।
ঢাকা-১২ আসনে শুরুতে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল বিএনপি নেতা সাইফুল আলম নিরবকে। তাকে পরিবর্তন করে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হককে আসনটি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এই আসনেও নিরব স্বতন্ত্র নির্বাচন করতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
বরগুনা-১ (সদর) আসনে বিএনপির প্রার্থী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম মোল্লা। জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে দলীয় ও স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান (স্থগিত) গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী। এ আসনে গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর পাশাপাশি উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকারকেও মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি।
পটুয়াখালী-৩ আসনে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুন নির্বাচন করার ঘোষণা আগেই দিয়েছেন। গতকাল সোমবার তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
ময়মনসিংহ-১ (হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া) আসনে ধানের শীষের প্রার্থী বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য সালমান ওমর রুবেল মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ।
ময়মনসিংহ-২ (ফুলপুর ও তারাকান্দা) আসনে বিএনপির প্রার্থী তারাকান্দা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাহ শহীদ সারোয়ার।
ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য প্রকৌশলী মো. ইকবাল হোসাইন দলীয় প্রার্থী। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আহম্মেদ তায়েবুর রহমান হিরন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়িয়া) আসনে বিএনপির প্রার্থী দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আকতারুল আলম ফারুক। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন এই আসনের সাবেক এমপি ইঞ্জিনিয়ার শামছ উদ্দিন আহমেদের স্ত্রী আখতার সুলতানা এবং তাদের ছেলে তানভীর আহম্মেদ রানা। এ ছাড়া মনোনয়ন জমা দিয়েছেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য আব্দুল করিম।
ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. মাহাবুবুর রহমান লিটন দলটির প্রার্থী। বিদ্রোহী হিসেবে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল খালেকের ছেলে মুহাম্মদ আনোয়ার সাদাত মনোনয়ন দাখিল করেছেন।
ময়মনসিংহ-৮ (ঈশ্বরগঞ্জ) আসনে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক প্রকৌশলী লুৎফুল্লাহেল মাজেদ বাবু ধানের শীষের প্রার্থী। দল ছেড়ে সাবেক এমপি শাহ নূরুল কবীর শাহীন বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন।
ময়মনসিংহ-৯ (নান্দাইল) আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইয়াসের খান চৌধুরী। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন বিএনপির সাবেক এমপি খুররম খান চৌধুরীর স্ত্রী হাসিনা খান চৌধুরী ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মামুন বিন আব্দুল মান্নান।
ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও) আসনে বিএনপির প্রার্থী দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আক্তারুজ্জামান বাচ্চু। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করেছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু বকর সিদ্দিকুর রহমান এবং পাগলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আল-ফাতাহ মো. আব্দুল হান্নান খান।
ময়মনসিংহ-১১ (ভালুকা) আসনে উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ফখরুদ্দিন আহম্মেদ বাচ্চু দলীয় প্রার্থী। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ মুর্শেদ আলম।