Image description

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য তিনশ সংসদীয় আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। শেষ দিনে সোমবার মনোনয়নপত্র দাখিল করেন এসব প্রার্থী। তবে ৫২ আসনে দলের ৭১ বিদ্রোহী প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। এরা বিএনপির পদধারী ও সাবেক নেতা-স্বতন্ত্র হিসাবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। অন্যদিকে দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ৩টি আসনসহ সাতটি আসনে দু’জন করে চিঠি দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ বিকল্প প্রার্থী রাখা হয়েছে। এছাড়া রাজনৈতিক সমীকরণ, দলীয় কোন্দল ও মিত্র দলগুলোর সঙ্গে আসন সমঝোতা-সংক্রান্ত জটিলতা কাটাতে প্রাথমিকভাবে ঘোষিত আসনের ১৭টিতে প্রার্থী পরিবর্তন করেছে বিএনপি।

দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে নামায় বিএনপির জন্য রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। যদিও এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন স্থানীয়ভাবে ব্যাপক জনপ্রিয়। তবে দলটির নেতারা আশা করছেন, স্বতন্ত্র হিসাবে দলের যেসব নেতা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন, শিগগিরই তাদের কেন্দ্রে ডাকা হবে। কেন ধানের শীষের বিরুদ্ধে নির্বাচন করবেন না-তা দায়িত্বশীল নেতারা প্রথমে তাদের বোঝাবেন এবং দল ক্ষমতায় গেলে বিভিন্নভাবে মূল্যায়নের আশ্বাস দেবেন। এতেও কাজ না হলে কঠোর হবে বিএনপি। সেক্ষেত্রে বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

নেতারা আরও জানান, ১৭ আসনে প্রার্থী বদল করা হয়েছে। পরিবর্তনের পরও যদি জটিলতা থেকে যায়; সেক্ষেত্রে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সংশ্লিষ্ট নেতাদের ডেকে কথা বললে তার সমাধান হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মিত্র দলগুলোর নেতারা নিজস্ব প্রতীকে ৯টি এবং ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ৫টি আসনে নির্বাচন করবেন। ১৭টি আসনে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর মধ্যে বিএনপি নিজেদের প্রার্থীকে সরিয়ে মিত্র দলের প্রার্থীকে সমর্থন দেয়। আবার কোনো কোনো আসনে বয়স্ক, ঋণখেলাপিসহ আরও কিছু কারণে প্রার্থী বদল করেছে দলটি। এসব আসনে যোগ্যরা মূল্যায়িত হওয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে স্বস্তি এলেও বেশ কিছু আসনে ক্ষোভ রয়ে গেছে। এসব আসনের বেশির ভাগ জায়গায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন দলটির নেতারা।

স্বতন্ত্র হিসাবে বিদ্রোহী প্রার্থী যারা : ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সহসম্পাদক রুমিন ফারহানা এবং ৫-এ জেলা বিএনপির অর্থনৈতিকবিষয়ক সম্পাদক কাজী নাজমুল হোসেন তাপস। মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর শরাফত আলী সপু ও শ্রীপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মমিন আলী। দিনাজপুর-২ আসনে জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ন ম বজলুর রশিদ এবং ৫-এ সাবেক সংসদ-সদস্য ও পার্বতীপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি এজেডএম মেনহাজুল হক। নীলফামারী-৪ আসনে জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রিয়াদ আফরান সরকার রানা ও জেলা বিএনপির সদস্য মামুন অর রশীদ। কুড়িগ্রাম-৩ আসনে স্বতন্ত্র হিসাবে প্রার্থী হয়েছেন বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক।

রাজশাহী-১ আসনে গোদাগাড়ী উপজেলা বিএনপির সদস্য সুলতানুল ইসলাম তারেক এবং ৫-এ জুলকার নাঈম বিস্ময় ও পুটিয়া উপজেলা বিএনপির সদস্য ইফসা খাইরুল হক। নওগাঁ-১ আসনে নিয়ামতপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ডা. ছালেক চৌধুরী ও যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য মাহমুদুস সালেহীন, ৩-এ সাবেক ডেপুটি স্পিকার আখতার হামিদ সিদ্দিকীর ছেলে পারভেজ আরেফিন জনি, ৫-এ বিএনপি নেতা নজমুল হক সনি এবং ৬-এ সাবেক এমপি আলমগীর কবির। নাটোর-১ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু ও ডা. ইয়াসিন আরশাদ রাজন, ৩-এ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক দাউদার মাহমুদ ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির ফাতেমা খানম।

চট্টগ্রাম-৫ আসনে ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা, ১৪-তে স্বেচ্ছাসেবক দলের শফিকুল ইসলাম রাহী এবং ১৬-তে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক লেয়াকত আলী। চাঁদপুর-৪ আসনে ফরিদগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক এমএ হান্নান, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হাজী মোজাম্মেল ও জাতীয়তাবাদী কর আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্বাস উদ্দিন। মাদারীপুর ২-এ বিএনপি নেতা মিল্টন বৈদ্য। নড়াইল ২-এ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম।

মৌলভীবাজার ৪-এ সাবেক ছাত্রদল নেতা জালাল উদ্দিন আহমেদ। হবিগঞ্জ ১-এ সাবেক সংসদ-সদস্য এবং জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ সুজাত মিয়া। নরসিংদী-৫ আসনে জেলা বিএনপির সহসভাপতি জামাল আহমেদ চৌধুরী।

কুমিল্লা-২ আসনে বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক এপিএস এমএ মতিন খাঁন, ৬-এ দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাজী আমিনুর রশীদ ইয়াছিন, ৭-এ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আতিকুল আলম শাওন, ৯-এ লাকসাম পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পৌর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক মফিজুর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য কর্নেল আনোয়ারুল আজিমের কন্যা সামিরা আজিম দোলা এবং ১০-এ কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়া। নোয়াখালী ২-এ উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী মো. মফিজুর রহমান।

যশোর ১-এ সাবেক কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি ও দলের উপজেলা কমিটির সভাপতি আবুল হাসান জহির, ২-এ চৌগাছা উপজেলার সাবেক সভাপতি জহুরুল ইসলাম, ৪-এ অভয়নগর উপজেলা কমিটির সভাপতি মতিয়ার রহমান ফারাজী, ৫-এ বিএনপি নেতা শহীদ মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন। কুষ্টিয়া-৪ আসনে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নুরুল ইসলাম আনসার প্রামাণিক ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ সাদি।

ময়মনসিংহ-১ আসনে জেলা বিএনপি’র সদস্য সালমান ওমর রুবেল ও বিএনপি নেতা আব্দুল হামিদ। নেত্রকোনা ৩-এ বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়া দুলাল।

বরিশাল-১ আসনে জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহান এবং ৩-এ আব্দুস সাত্তার খান। ঝালকাঠী ১-এ ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা গোলাম আজম সৈকত। পিরোজপুর ২-এ ছাত্রদলের সাবেক নেতা মাহমুদ হোসাইন ওরফে ভিপি মাহমুদ। পটুয়াখালী-৩ আসনে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুন। বরগুনা ১-এ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান আকন।

গাজীপুর ২-এ শ্রমিক দলের কার্যকরী সভাপতি সালাউদ্দিন সরকার। টাঙ্গাইল ১-এ বিএনপি নেতা আসাদুল ইসলাম আজাদ, ৪-এ অধ্যাপক ডা. শাহ আলম তালুকদার। মানিকগঞ্জ-১ আসনে বিএনপি নেতা তোজাম্মেল হক তোজা, ২-এ সিংগাইর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবিদুর রহমান নোমান ও জেলা বিএনপির সাবেক কোষাধ্যক্ষ আব্দুল হক মোল্লা এবং ৩-এ জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি আতাউর রহমান আতা। গোপালগঞ্জ ২-এ বিএনপি নেতা এমএইচ খান মঞ্জু ও সিরাজুল ইসলাম।

নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিন, ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতির পদ থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নেওয়া শাহ আলম ও সাবেক এমপি মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী। নারায়ণগঞ্জ ৫-এ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও শিল্পপতি আবু জাফর আহমেদ বাবুল। খাগড়াছড়িতে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সমীরণ দেওয়ান।