Image description
তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে রাজসিক প্রত্যাবর্তনে নেতাকর্মী ও সমর্থকরা ঐক্য ও দৃঢ় মনোবলে চাঙা হয়ে উঠেছেন। সবাইকে নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি তার ভবিষ্যৎ রাজনীতির দিকনির্দেশনায় বিএনপির মধ্যে এক ধরনের গতির সঞ্চার হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, তারেক রহমান রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য দিয়েছেন। তার বক্তব্য নিয়ে কোনো সমালোচনা না হওয়ায় নেতাকর্মীরাও উদ্দীপ্ত হয়েছেন।

বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা মনে করেন-১৭ বছরের বেশি সময় দেশের বাইরে থাকলেও তারেক রহমান সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশের মনোজগৎ বুঝতে পেরেছেন। সেই অনুযায়ীই তিনি বক্তব্য দিয়েছেন। নেতাকর্মীদের কাছে টানতে পেরেছেন। জনগণকে একটা ভালো বার্তা দিতে পেরেছেন। দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকাণ্ডের বিষয়ে নেতাকর্মীরা সতর্ক থাকবেন। তবে সবকিছু ছাপিয়ে লাখ লাখ মানুষের অংশগ্রহণ ভোটের প্রচারণার কাজ অনেক এগিয়ে দিয়েছে। যা মাঠে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে বলেও মনে করছেন নেতাকর্মীরা।

নেতাকর্মীরা আরও জানান, দেশে ফেরার পর বিএনপির সর্বস্তরে একটা কথা আলোচনা হচ্ছে-তারেক রহমান রাজনীতি বদলে দেবেন। ফলে আগের মতো আর নেতিবাচক কর্মকাণ্ড করা যাবে না। ইতোমধ্যে নানাভাবে তারেক রহমান তা বুঝিয়ে দিয়েছেন। ফলে তারা এখন আগের চেয়ে বেশি সতর্ক। নেতারা বলেন, ত্যাগীদের মূল্যায়নের প্রত্যাশায় তারা এখন শীর্ষ নেতার দিকে তাকিয়ে আছেন। কারণ, ত্যাগী নেতাকর্মীরাই হচ্ছেন দলের প্রাণ। অতীতে দুর্দিনে যারা জীবনবাজি রেখে মাঠে ছিলেন তাদের কাছে তারেক রহমানই হচ্ছেন ভরসার জায়গা। প্রত্যাবর্তনের দিনের পাশাপাশি শুক্রবারও রাজধানীতে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে উপচে পড়া উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়-মানুষের এখন আবেগের জায়গায় স্থান পেয়েছেন তারেক রহমান। তাদের প্রত্যাশা-বাবা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শ ধারণ করেই তারেক রহমান নতুন রাজনীতি ও পরিবর্তনের সূচনা করবেন।

বিএনপি নেতারা জানান, বিএনপি যে সুশৃঙ্খল দল-তা প্রত্যাবর্তনের দিন ও পরের দিনের কর্মসূচিতে প্রমাণিত হয়েছে। কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলা হয়নি। সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল। যা রাজনৈতিক ইতিহাসে বিরল ঘটনা। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে যাওয়ার পথে তারেক রহমানকে দেখতে বাসার ছাদে ছাদে নারী-পুরুষের অবস্থানের দৃশ্য ছিল চোখে পড়ার মতো।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দীর্ঘ ১৭ বছর পর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরা বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের বার্তা নিয়ে এসেছে। এ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। তার এ প্রত্যাবর্তন ছিল রাজকীয় ও অভূতপূর্ব। দেশের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাকে সংবর্ধনা জানিয়েছেন এবং আনন্দ-উচ্ছ্বাসে অংশ নিয়েছেন। জনগণ তাদের প্রিয় নেতাকে ফিরে পেয়েছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে খুব কম নেতার পক্ষেই এমন স্বতঃস্ফূর্ত জনসমর্থন ও গণ-অভ্যর্থনা পাওয়া সম্ভব হয়েছে। তরুণ ও সম্ভাবনাময় নেতৃত্ব হিসাবে তারেক রহমানকে দেশের মানুষ শুধু নয়, বিশ্ব গণমাধ্যমও বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেখছে। তারেক রহমানের দেশে ফেরা শুধু একটি ব্যক্তিগত প্রত্যাবর্তন নয়; এটি দেশের রাজনীতিতে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা। এর মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও জনগণের প্রত্যাশা বাস্তবায়নের পথ আরও সুগম হবে।

মেহেরপুর জেলা বিএনপির সভাপতি জাভেদ মাসুদ মিল্টন যুগান্তরকে বলেন, তৃণমূল নেতাকর্মীরা উচ্ছ্বাসিত ও আনন্দিত। শুধু বিএনপি নয়, বাংলাদেশের মানুষ তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। তাকে আগামী দিনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দেখতে চায় বিএনপি ও দেশের মানুষ। নেতাকর্মী ও দেশের মানুষ অনেক নির্যাতন সহ্য করেছেন। তারা আশায় আছেন-তারেক রহমানের নেতৃত্বে দুঃখ-কষ্ট লাঘব হবে। তার নেতৃত্বে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ হবে।

বরিশালের উজিরপুর উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সোহাগ বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বক্তব্য এলাকায় ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। তার গঠনমূলক বক্তব্যের প্রশংসা করেছেন নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ। ভোটের মাঠের চিত্রই পালটে গেছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ যুগান্তরকে বলেন-আমিত্ববিহীন এক অনন্য ভাষণের কারণে রাজনীতির ইতিহাসে তারেক রহমান নজির হয়ে থাকবেন। বক্তব্যজুড়ে কোথাও কারও সমালোচনা ও বিষোদগার ছিল না। নিজের বা বাবা-মায়ের বা পরিবারের গুণকীর্তন ছিল না। তার ভাষণের সবচেয়ে প্রশংসনীয় দিক হলো-কোনো দল বা ব্যক্তির প্রতি বিষোদগার না করে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ গড়ার বার্তা। সর্বজনীন নেতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি। যা সর্বস্তরের মানুষ ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছেন।

দলটির একাধিক নীতিনির্ধারক বলেন, তারেক রহমান তার বাবা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে দেখেছেন। তার মা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকেও দেখেছেন। সুন্দর পারিবারিক আবহে বেড়ে ওঠা তারেক রহমান তার ভাষণে ভাষা প্রয়োগে বাবা-মায়ের কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষারই প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। তার ভাষণে ছিল শান্তির কথা। ছিল ঐক্য ও দেশপ্রেমের কথা। আগামীর বাংলাদেশের কথা। আর ছিল দেশ ও দেশের মানুষকে নিয়ে নিজের পরিকল্পনার কথা। তারেক রহমান শান্তি, সম্প্রীতি এবং স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন। ইসলামী মূল্যবোধের কথা বলেছেন।

নীতিনির্ধারকরা আরও বলেন, তারেক রহমান শান্তি ও সম্প্রীতির যে বার্তা দিয়েছেন তা দেশে সুষ্ঠু ধারার রাজনৈতিক কার্যক্রমের সূচনা হিসাবে দেখা যেতে পারে। যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চান, নির্বাচনকে ভন্ডুল করতে চান। তারেক রহমানের ভাষণের মধ্যে দিয়ে তাদের কাছেও একটি সুস্পষ্ট বার্তা পৌঁছে গেছে। তারেক রহমান ৭১ আর ২৪-এর শহীদদের স্মরণ করেছেন। শহীদ শরিফ ওসমান হাদিকে স্মরণ করেছেন। বিশেষ চেয়ার সরিয়ে বসেছেন সাধারণ চেয়ারে। এর মধ্য দিয়ে আমিত্ব বিসর্জনের নজিরও স্থাপন করেছেন তিনি।