Image description

পাঁচটি সংসদীয় আসন নিয়ে গঠিত সুনামগঞ্জ জেলায় আগামী জাতীয় নির্বাচনে মূল লড়াই হবে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে। তবে দুটি আসনে বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চলে আসার আভাস মিলছে। এ ক্ষেত্রে ওই আসনগুলোতে ত্রিমুখী লড়াই হতে পারে।

সুনামগঞ্জ-১ (তাহিরপুর-জামালগঞ্জ-ধর্মপাশা-মধ্যনগর) : চারটি উপজেলা নিয়ে গঠিত সুনামগঞ্জ-১ আয়তনের দিক থেকে জেলার সবচেয়ে বড় আসন। এখানে বিএনপি থেকে কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সহসাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আনিসুল হক পেয়েছেন দলীয় মনোনয়ন। ধানের শীষের পক্ষে তিনি ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ৩১ দফার পক্ষে জনমত গঠনের লক্ষ্যে করছেন সভা, সমাবেশ আর উঠান বৈঠক। আসনটিতে জেলা জামায়াতের আমির উপাধ্যক্ষ তোফায়েল আহমদ খান জামায়াতের প্রার্থী। তিনিও প্রচার মিছিল, মোটর শোডাউন, গণসংযোগ এবং উঠান বৈঠকসহ নানান কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন প্রতিদিনই। বিএনপি নেতা আনিসুল হক বলেন, ‘নির্বাচিত হলে অবহেলিত এই অঞ্চলের উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখব।’ জামায়াত প্রার্থী তোফায়েল আহমদ খান বলেন, ‘হাওড়াঞ্চলের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন করার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচিত হলে এই বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দেব।’

সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) : হাওড় অধ্যুষিত প্রত্যন্ত দুটি উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনটিতে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে। প্রার্থী প্রবীণ বিএনপি নেতা ও আসনটির সাবেক এমপি নাসির উদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে জামায়াতের প্রার্থী আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনিরের। দ্বিতীয় ধাপে প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণার পর প্রচার-প্রচারণায় সরব হয়েছেন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যের দায়িত্বে থাকা নাসির চৌধুরী। অপরাপর মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সহযোগিতা নিয়ে ছুটে যাচ্ছেন তাদের কাছে। গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। নাসির চৌধুরী বলেন, ‘এটি আমার জীবনের শেষ নির্বাচন। আমার কিছু স্বপ্ন ছিল যা বাস্তবায়ন হয়নি। নির্বাচিত হলে সেগুলো বাস্তবায়ন করব।’

জামায়াত প্রার্থী শিশির মনির বলেন, ‘আমার আসনের প্রতিটি গ্রামের নাম উল্লেখ করে কোথায় কী সমস্যা রয়েছে, কোথায় কী উন্নয়ন করতে হবে-এমন একটি তালিকা প্রস্তুত করেছি। আমি নির্বাচিত হলে প্রতিটি ইউনিয়নের সঙ্গে ইউনিয়ন, গ্রামের সঙ্গে গ্রামের যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করব।’ এদিকে আসনটিতে জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম থেকে নির্বাচন করার লক্ষ্যে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন ড. সোয়াইব আহমদ।

সুনামগঞ্জ-৩ (শান্তিগঞ্জ-জগন্নাথপুর) : প্রবাসীদের এলাকা হিসেবে পরিচিত সুনামঞ্জ-৩ আসনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন বিএনপি ও জামায়াত প্রার্থী। তবে আসনটিতে ‘শক্তিশালী’ প্রার্থী দিতে পারে খেলাফত মজলিস ও জমিয়তে ওলামায়ে। সেই সঙ্গে বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত একজনও স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। আসনটিতে বিকল্প শক্তিশালী প্রার্থী এলে ত্রিমুখী কিংবা চতুর্মুখী লড়াইও হতে পারে।

এই আসনে যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়ছর আহমদকে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। হাই কমান্ডের কাছের মানুষ হিসেবে নির্বাচনি হাঁকডাক শুরুর পর থেকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে তাঁর মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি প্রায় নিশ্চিত ছিল। যে কারণে বছরখানেক আগ থেকে প্রচার-প্রচারণা শুরু করেন কয়ছর। তবে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন অপর যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার আনোয়ার হোসেন।

এই আসনে সিলেট জজ আদালতের তরুণ আইনজীবী ইয়াসিন খানকে প্রার্থী করেছে জামায়াতে ইসলামী। ভোটের রাজনীতিতে ‘নবাগত’ ইয়াসিন খান প্রচার-প্রচারণা, সভাসমাবেশ করে ব্যস্ত সময় পার করছেন। দলীয় নেতা-কর্মীদের একজোট করে দাঁড়িপাল্লাকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।

এই আসনে নির্বাচন করার লক্ষ্যে মাঠে রয়েছেন আসনটির সাবেক এমপি মাওলানা শাহিনুর পাশা চৌধুরী। খেলাফত মজলিস থেকে মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করছেন তিনি। এ ছাড়া আসনটিতে জমিয়তের মনোনয়ন পেয়েছেন মাওলানা হাম্মাদ গাজীনগরী। তবে মনোনয়নবঞ্চিত জমিয়তের নেতা সৈয়দ তালহা আলম স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন।

সুনামগঞ্জ-৪ (সদর-বিশ্বম্ভরপুর) : তিনটি নির্বাচন ছাড়া এই আসনে অতীতে বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা পালাক্রমে নির্বাচিত হয়েছেন। চব্বিশের গণ অভ্যুত্থানের পর মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চলে এসেছে বিএনপি ও জামায়াত। বিএনপি থেকে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম। সংগঠক হিসেবেও সুপরিচিতি রয়েছে তাঁর। মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করার পাশাপাশি জোরেশোরে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন তিনি।

এ আসনে সিনিয়র আইনজীবী ও জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শামসউদ্দিনকে প্রার্থী করেছে জামায়াত। ভোটের মাঠে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে নিয়মিত সভাসমাবেশ ও প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

এদিকে বিএনপি প্রার্থী নুরুলের বিপরীতে অপর যে চারজন দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন তাদের পরস্পরের মধ্যে ভালো বোঝাপড়া ছিল। তাদের মধ্য থেকে মনোনয়নবঞ্চিত চারবারের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান দেওয়ান জয়নুল জাকেরীন স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। মরমি কবি হাছনরাজার প্রপৌত্র জাকেরীন পারিবারিক কারণে এখানকার ভোটের মাঠে ‘ফ্যাক্টর’। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আগের অবস্থান ধরে রাখতে পারলে এই আসনে ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস মিলছে।

সুনামগঞ্জ-৫ (ছাতক-দোয়ারাবাজার) : শিল্পনগরী ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলা নিয়ে গঠিত সুনামগঞ্জ-৫ আসনে সংসদ নির্বাচনে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন পেয়েছেন দলীয় মনোনয়ন। তিনি এই আসনের তিনবারের সাবেক সংসদ সদস্য। আসনটিতে মনোনয়নবঞ্চিত হয়েছেন ২০১৮ সালের নির্বাচনি দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চৌধুরী। ব্যক্তিগত ইমেজ, সাংগঠনিক অবস্থানের পাশাপাশি প্রভাবশী মনোনয়নবঞ্চিত মিজানকে নিজের পক্ষে নামাতে পারলে মাঠের প্রতিপক্ষ জামায়াতকে মোকাবিলা করা সহজ হবে মিলনের জন্য। মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে সভাসমাবেশ আর প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন মিলন।

এই আসনে জামায়াত মনোনয়ন দিয়েছে প্রিন্সিপাল আবদুস সালাম আল মাদানীকে। সিলেট মহানগর জামায়াতের মজলিসে শুরা সদস্য তিনি। এর আগে ইসলামী ঐক্যজোট থেকে নির্বাচন করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর।