দেশের ২৫তম প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ অবসরে যাচ্ছেন ২৭ ডিসেম্বর। ওই দিন সুপ্রিম কোর্টে অবকাশকালীন ছুটি থাকায় ১৮ ডিসেম্বর (ছুটির আগে শেষ কর্মদিবস) তাঁকে সংবর্ধনা দেবে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি।
আজ অধস্তন আদালতের বিচারকদের উদ্দেশে বিদায়ি অভিভাষণ দেবেন প্রধান বিচারপতি। গণ অভ্যুত্থান-পরবর্তী প্রেক্ষাপটে ইতিহাস সৃষ্টি করে সরাসরি হাই কোর্ট থেকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পাওয়া সৈয়দ রেফাত আহমেদের অবসরের পর এ আসনে কে বসবেন, এখন সেই আলোচনাই চলছে আইন অঙ্গনে। এবার জ্যেষ্ঠতা রক্ষা হবে নাকি ভিন্ন কিছু ঘটবে, তা নিয়ে চলছে জল্পনাকল্পনা।
সংবিধানে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিষয়ে ‘প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন’ ছাড়া অন্য কোনো যোগ্যতা বা শর্তের কথা লেখা নেই। তবে জুলাই সনদ ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সুপারিশে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠ বিচারপতির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ থাকলে দ্বিতীয় জ্যেষ্ঠ বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের কথা বলা হয়েছে সুপারিশে। আইনজ্ঞদের মতে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতার পাশাপাশি দেশপ্রেম, বিচার বিভাগের প্রতি দায়বদ্ধতা ও সততার বিষয়গুলোও বিবেচনা করা উচিত। অন্তর্বর্তী সরকার পূর্বের রাজনৈতিক সরকারগুলোর মতো পিক অ্যান্ড চুজ করবে না বলেও প্রত্যাশা তাঁদের।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ছাড়া বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ছয়জন বিচারপতি রয়েছেন। জ্যেষ্ঠতা অনুসারে তাঁরা হলেন বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিচারপতি মো. রেজাউল হক, বিচারপতি এস এম ইমদাদুল হক, বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি ফারাহ মাহবুব। এ ছয় বিচারপতির মধ্যে পরবর্তী প্রধান বিচারপতি হিসেবে বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীর নাম সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বর্তমান প্রধান বিচারপতি হাই কোর্ট থেকে নিয়োগ হলেও তাঁর নিয়োগের প্রেক্ষাপট ছিল ভিন্ন। সে সময় আপিল বিভাগে একজন ছাড়া বাকি সবাই পদত্যাগ করেছিলেন। এ ছাড়া বর্তমান প্রধান বিচারপতি ছিলেন হাই কোর্টের বিচারপতিদের মধ্যে জ্যেষ্ঠতম। তাঁর নিয়োগের সময় দেখলে দেখা যাবে, তিনি তৎকালীন আপিল বিভাগের অনেকের চেয়েও জ্যেষ্ঠ ছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘এবার সেই ধরনের কোনো প্রেক্ষাপট নেই। তাই এবার আপিল বিভাগের বিচারপতিদের মধ্য থেকেই রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করবেন বলে মনে করি।’ একই সঙ্গে এ নিয়োগে জ্যেষ্ঠতা রক্ষা করার পাশাপাশি ভবিষ্যৎ প্রধান বিচারপতির দেশপ্রেম, বিচার বিভাগের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং সততার বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা হবে বলে প্রত্যাশা সুপ্রিম কোর্টের এই জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর।
জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘একসময় প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। অনেকে যোগ্য থাকার পরেও তাঁদের বাদ দেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। বর্তমান সরকার কোনো রাজনৈতিক সরকার নয়। তাই আশা করব, তারা প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে পূর্বের রাজনৈতিক সরকারগুলোর মতো কোনো পিক অ্যান্ড চুজ করবে না। এ নিয়োগের ক্ষেত্রে সংবিধান, জুলাই সনদ ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বিবেচনায় নেওয়া হবে বলেই আমি আশা করি।’
প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে সংবিধানে রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। রীতি অনুযায়ী আপিল বিভাগের বিচারপতিদের মধ্য থেকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। তবে একমাত্র দেশের ২৫তম প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঘটেছে ও নতুন নজির সৃষ্টি হয়েছে।
আজ বিদায়ি অভিভাষণ : আজ উচ্চ পর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বিদায়ি অভিভাষণ দেবেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বেলা ৩টায় সুপ্রিম কোর্ট অডিটোরিয়ামে দেশের জেলা আদালতগুলোতে কর্মরত উচ্চ পর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধিবেশনের আয়োজন করা হয়েছে। অধিবেশনে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ দেশের সব জেলা জজ, মহানগর দায়রা জজ, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটদের উদ্দেশে ‘বিদায়ি অভিভাষণ’ প্রদান করবেন। বিচার বিভাগের সংস্কার ও সার্বিক উন্নয়নে যে রোডম্যাপ ঘোষণা করেছিলেন প্রধান বিচারপতি, বিদায়ি অভিভাষণে তার বাস্তবায়নে গত দেড় বছরে গৃহীত সংস্কার কার্যক্রম এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার বিষয়ে আলোকপাত করবেন। এতে বিচারকদের উদ্দেশে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা প্রদান করবেন তিনি।