Image description

ফেব্রুয়ারিতে হতে যাচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। যে কোনো সময় ঘোষণা করা হবে তফসিল। তফসিল ঘোষণা না হলেও দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে। প্রার্থী দিয়েছেন জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি, গণসংহতি আন্দোলনসহ অন্যান্য দলের নেতারাও। ভোটের তারিখ চূড়ান্ত না হলেও রাজধানীতে প্রধান প্রধান সড়ক, অলিগলিসহ পাড়ামহল্লা ছেয়ে গেছে নির্বাচনি পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ডে। যে দিকেই চোখ যায় শুধু পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন আর বিলবোর্ড। ঢাকা যেন পোস্টারের পুঞ্জি। নির্বাচনের গ্যারান্টির তফসিল না এলেও ভোটের প্রচার শুরু। এতে শহরজুড়ে দৃষ্টিদূষণ বেড়েছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, রাজধানী ঢাকাজুড়েই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের পোস্টার-ব্যানার শোভা পাচ্ছে সড়কের মোড়, ফুটপাত, দেয়াল, বিদ্যুতের খুঁটি থেকে শুরু করে ফ্লাইওভার, মেট্রোরেলের পিলার। রেহাই পাচ্ছে না কোনো কিছুই। বলা যায়, ঢাকায় এখন মুখ ঢেকে যায় পোস্টার-ব্যানারে।

রাজধানীর শাহজাহানপুর, মতিঝিল, পল্টন, রমনা ও শাহবাগ নিয়ে গঠিত ঢাকা-৮ আসন। এ আসনের শান্তিবাগ পানির পাম্প থেকে মালিবাগ মোড় পর্যন্ত বাড়ি ও দোকানের দেয়ালে লাগানো হয়েছে কয়েক শ পোস্টার। আছে ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ডও। বেশির ভাগই ওই আসনে বিএনপির প্রার্থী মির্জা আব্বাসের। পোস্টারগুলোর নিচে লেখা ‘প্রচারে ঢাকা-৮ আসনের সর্বস্তরের জনগণ’। শুধু মির্জা আব্বাসই নন, এ আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ড. মো. হেলাল উদ্দিনের পোস্টারও সাঁটা দেয়ালে দেয়ালে। এ ছাড়া বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকের বিলবোর্ড, পোস্টার, ব্যানার চোখে পড়ার মতো। আছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থীরও। নির্বাচন ঘিরে এ রকম নির্বিচার প্রচারণায় নষ্ট হচ্ছে শহরের সৌন্দর্য। তৈরি হচ্ছে পরিবেশদূষণের ঝুঁকি। শুধু ঢাকা-৮ আসনই নয়, রাজধানীর সর্বত্রই এমন চিত্র চোখে পড়েছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, রামপুরা, নতুন বাজার, নর্দা, বাড্ডা, গুলশান, কুড়িল, বনানী, মহাখালী, পুরানা পল্টন, গুলিস্তান, নয়াপল্টন, মতিঝিল, ধানমন্ডি, ডেমরা, যাত্রাবাড়ী, কদমতলী, লালবাগ, বংশাল, দোলাইপাড় মোড়, তেজগাঁও, পলাশীবাজার, মোহাম্মদপুর, আদাবর, শেরেবাংলানগর, গাবতলী, মিরপুর, কালশী, উত্তরা, দক্ষিণখান, উত্তরখান, মগবাজার, ফার্মগেট, শাহবাগ, বাংলামোটর, নারিন্দা, ওয়ারী, হাতিরপুলসহ ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ উভয় সিটি করপোরেশনের প্রায় সব এলাকাতেই চলছে ব্যাপক প্রচারণা। ডিজিটাল প্রিন্টের বিলবোর্ড, ফেস্টুনে ভরে গেছে চারপাশ। পুরান ঢাকার আজিমপুর, পলাশী, লালবাগ থানা ভবনের সামনে বেড়িবাঁধ, কামরাঙ্গীর চর, লোহারপুল ঢাল, সোয়ারীঘাট, চকবাজার, ইসলামবাগ, নয়াবাজার, তাঁতীবাজার, বাবুবাজার, মিটফোর্ড, বাদামতলী, সদরঘাট, বেগমবাজার, হোসনী দালান, ফুলবাড়িয়া, নবাবপুর, কাপ্তানবাজার, ধোলাইখাল, রায়সাহেব বাজার-সব এলাকার দেয়াল ও মোড়েই ঝুলছে বিপুল প্রচারসামগ্রী। এমনকি দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নগর ভবনের গায়েও দেখা গেছে বিভিন্ন দল ও অঙ্গসংগঠনের ব্যানার।

ঢাকা-৪ আসন শ্যামপুর ও কদমতলী থানা নিয়ে গঠিত। এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন তানভীর আহমেদ রবিন। জামায়াতের মনোনয়ন পেয়েছেন সৈয়দ জয়নুল আবেদীন। নির্বাচনি এলাকা এ দুই নেতার পোস্টার-ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে। সূত্রাপুর, ওয়ারী, গেন্ডারিয়া, কোতোয়ালি আংশিক নিয়ে ঢাকা-৬ আসন। এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন ইশরাক হোসেন। জামায়াতের প্রার্থী ড. আবদুল মান্নান। নির্বাচনি এলাকার সর্বত্র দুই দলের দুই প্রার্থীসহ অন্য দলের প্রার্থীদের পোস্টার, বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন চোখে পড়ার মতো।

এদিকে আগাম প্রচার নিয়ে আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। ২ ডিসেম্বর জারি করা গণবিজ্ঞপ্তিতে ডিএসসিসি জানায়, অনুমতি ছাড়া ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার ও নির্বাচনি প্রচারপত্র স্থাপন করা হচ্ছে, যা ‘দেয়াল লিখন ও পোস্টার লাগানো (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১২’-এর পরিপন্থি। পরিচ্ছন্ন নগর গড়ার লক্ষ্যে এসব স্ব-উদ্যোগে অপসারণের নির্দেশ দিয়ে বলা হয়, ‘অমান্য করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’