Image description
 

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর নানা দৌড়ঝাঁপ অব্যাহত রয়েছে। কার সঙ্গে গেলে কতটুকু সুবিধা পাওয়া যাবে? সেই হিসাব মাথায় রেখে জোট গঠনের কথা ভাবছে বিভিন্ন দল। মূলত আসন প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করতেই নির্বাচনের আগে এক মঞ্চ ছেড়ে আরেক মঞ্চে যোগ দেওয়ার ঘটনা ঘটে। গঠিত হয় নতুন রাজনৈতিক মোর্চা।  বিগত দিনের সেই ধারবাহিকতায় সম্প্রতি তিনটি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে নতুন প্ল্যাটফর্ম ‘গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট’।

রবিবার (৭ ডিসেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এই জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটে।

“জুলাইয়ের অঙ্গীকার রক্ষা ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বিনির্মাণে” নতুন এ জোটের ঘোষণা দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। জোটের অন্য দুই দল দলো- আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি ও বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। জোটের মুখপাত্র হিসেবে রয়েছেন নাহিদ ইসলাম।

আওয়ামী লীগ বিহীন রাজনৈতিক মাঠে এবার বিএনপির যুগপৎ ও জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ৮ দলের বাইরে অপেক্ষাকৃত নতুন এ তিন দলের জোট কতটা প্রাসঙ্গিক বা প্রভাব বিস্তার করতে পারে তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা ও বিশ্লেষণ।

কোনও কোনও রাজনৈতিক নেতা ও বিশ্লেষকদের মতে, এ জোট ভোটের মাঠে এককভাবে উত্তাপ ছড়াতে পারবে না। তবে তারা বড় কোনও দলের সঙ্গে যুক্ত হলে কিছু আসন পেতে পারে বলে মনে করেন অনেকে।

এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ-উর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, “এবারের নির্বাচনে এই জোট এককভাবে অংশগ্রহণ করলে সাফল্য পাবে না। তবে এতে বড় দল বিএনপি বা জামায়াতের সঙ্গে দরকষাকষিতে সুবিধা হবে।”

তিনি মনে করেন, জুলাই আন্দোলনের দল হিসেবে এনসিপি কিছুটা এগিয়ে থাকলেও ভোটের মাঠে তারা তেমন প্রাসঙ্গিকতা এখনও অর্জন করতে পারেনি। বাকি দুই দলগুলোর বেলায়ও একই কথা।

তবে এবার তেমন সাফল্য না পেলেও জোট ধরে রাখতে পারলে ভবিষ্যতে এটি ধীরে ধীরে বড় শক্তিতে রূপান্তরিত হতে পারে বলেও মনে করেন জাহেদ-উর রহমান।

এদিকে, ‘গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট’নেতারা বলছেন, বাজিমাত দেখাবেন তারা। আগামী কয়েক দিনের আরও কিছু দল এই জোটের সঙ্গী হবেন বলে জানিয়েছেন তারা।

রাজনীতিতে তিন দলের অভিষেক যেভাবে?

গণতান্ত্রিক সংস্কার জোটের তিনটি দলই রাজনীতিতে নতুন। তিনটি দলই নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পেয়েছে জুলাই আন্দোলনের পরে।

যদিও রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশের আগে প্রায় এক যুগ ধরে রাজনৈতিক সংস্কার নিয়ে কাজ করে আসছে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। ২০১২ সালের শুরুতে প্ল্যাটফর্মটির নাম ছিল রাষ্ট্রচিন্তা, প্রধান হিসেবে ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হাসনাত আবদুল কাইয়ূম। ২০২১ সালে এটি রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ২০২৫ সালে নামে কিছুটা সংযোজন এনে দলটির নাম হয় “বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন”।  দলের সভাপতি হিসেবে রয়েছেন হাসনাত আবদুল কাইয়ূম।

আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি) পার্টির গঠিত হয়েছে মূলত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নেতাদের উদ্যোগে। বিভিন্ন বিষয়ে মতবিরোধের কারেণে ধর্মভিত্তিক দলটি থেকে বহিষ্কার হন ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু।

পরে আরও কিছু নেতাকর্মী নিয়ে জনআকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ নামে রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলেন তিনি। ২০২০ সালের ২ মে নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবি পার্টি।

শুরুতে দলের আহ্বায়ক ছিলেন সাবেক সচিব সোলায়মান পাটোয়ারী ও সদস্য সচিব ছিলেন মজিবুর রহমান মঞ্জু। অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে কাউন্সিলে সভাপতি নির্বাচিত হন মঞ্জু ও সেক্রেটারি হন ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ। সম্প্রতি পদত্যাগ করে দল থেকে সরে গেছেন প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক সোলায়মান পাটোয়ারী।

অপরদিকে, সম্পূর্ণ নতুন হলেও শুরু থেকেই বেশ আলোচনায় রয়েছে এনসিপি। জুলাই আন্দোলন থেকে রাজনীতিতে উঠে আসা বেশ কয়েকজন নেতা রয়েছেন দলটিতে। জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সম্পৃক্তদের নিয়ে প্রথমে গঠিত হয় জাতীয় নাগরিক কমিটি। পরে ২০২৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নামে রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

কতটুকু আশাবাদী জোট নেতারা?

নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট নিয়ে আশাবাদী তিন দলের নেতারা। তাদের মতে, এবার মানুষ পরিবর্তনের পক্ষে রায় দেবে। সেক্ষেত্রে মানুস নতুন জোটকে বেছে নিতে পারেন। তারা মনে করেন, নির্বাচনে সাফল্য না পেলেও দীর্ঘমেয়াদে তাদের জোট দেশের রাজনীতিতে নিয়ামক শক্তি হিসেবে ভূমিকা রাখবে। আরও অনেক দল তাদের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে বলে তারা জানান।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি হাসনাত আবদুল কাইয়ূম বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, শুধু নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই তাদের জোট হয়নি।

তিনি বলেন, “আমরা মনে করি, নানা সমীকরণ বিবেচনায় জনগণ আমাদের বেছে নেবে। অচিরেই আরও কয়েকটি দল এ জোটে সম্পৃক্ত হবে। আমরা কয়টি আসন পাবো, সে বিবেচনার বাইরেও ভবিষ্যতে রাষ্ট্রের আমূল পরিবর্তনে আমরা সক্রিয় থাকবো।”

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)'র যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, “আমাদের জোট শুধু নির্বাচনকেন্দ্রিক নয়। আমরা দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা নিয়েই এগিয়ে যাবো। আশা করি, তরুণদের মধ্যে জাগরণ তৈরি করতে পারবো। ইতোমধ্যে আরও অনেক দল আমাদের সঙ্গে আসতে যোগাযোগ করছে। নির্বাচনে এনসিপির শাপলা কলিসহ জোটের প্রার্থীরা চমক দেখাবে। সেই আশা করতেই পারি।”

আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)'র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার জোবায়ের আহমেদ মনে করেন, আগামী নির্বাচন পুরোনো দলগুলো জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে না। তাই মানুষ নতুন কিছু খুঁজবে।

তিনি বলেন, “সে বিবেচনায় নতুন জোট তারুণ্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হতে পারে। আর ভোটে সাফল্য না এলেও নির্বাচন পরবর্তী সময়ে জোটের দলগুলো একসঙ্গে কাজ করবে।”

‘ভোটের মাঠে নিয়ন্ত্রক হবে না’

নতুন এই জোট ভোটের মাঠে নিয়ন্ত্রক হতে পারবে না বলে মনে করেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদ আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন।

তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, “এই তিন দলের এককভাবে জিতে আসার মতো কোনও আসন নেই। এক্ষেত্রে বড় কোনও দলের সঙ্গে সমঝোতা করলে হয়তো দু'একটি আসনের মুখ দেখতে পারে। ভোটের মাঠে নিয়ন্ত্রণক হবে না তারা।”

অবশ্য সেটি জামায়াতের সঙ্গে গেলে সম্ভব হবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, “জামায়াত নিজেরাও অতীতে নির্দিষ্ট কয়েকটি আসনের বাইরে তেমন সাফল্য দেখাতে পারেনি। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক কারা টানতে পারে সেটিও দেখার বিষয়।”