বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত। তার চিকিৎসার জন্য গঠিত দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ড প্রতিদিন বৈঠক করে চিকিৎসায় পরিবর্তন আনছেন। উন্নতি হচ্ছে খুবই ধীরে। লিভারের জটিলতা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও কিডনি নিয়ে উদ্বিগ্ন মেডিকেল বোর্ড। ওদিকে, শারীরিক অবস্থার কাঙ্ক্ষিত উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত তাকে বিদেশ নিয়ে উন্নত চিকিৎসার কথা ভাবছে না মেডিকেল বোর্ড। ওদিকে লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পর বোর্ডে সশরীরে অংশ নেন খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমান। তিনি বৈঠক শেষ করে বাসায় ফেরেন। দিনের বেশির ভাগ সময় হাসপাতালে শাশুড়ির শয্যা পাশে কাটান। বাসায় থাকার সময়ও টেলিফোনে টাইম টু টাইম তিনি শাশুড়ির স্বাস্থ্যের খোঁজখবর রাখছেন। চিকিৎসার বিষয়গুলোর তিনি সমন্বয় করেন। ডা. জুবাইদা বেশ কয়েকদিন দেশেই থাকবেন।
মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, একটি জটিলতা কেটে গেলে নতুন করে আরেকটি জটিলতা দেখা দেয়। একটি রোগের প্যারামিটার নিয়ন্ত্রণে থাকলেও আরেকটি বেড়ে যায়। উন্নতি আছে, তবে সেটা আহামরি বলা যাবে না। বয়সজনিত কারণে সেরে উঠতে সময় লাগবে। উন্নতি হচ্ছে খুবই ধীরগতিতে। উনার মাল্টিপলডিজিজ (বহুমুখী জটিলতা) থাকায় একটি রোগ থেকে সেরে উঠলে আরেকটি দেখা দেয়। লিভার সমস্যা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও কিডনি জটিলতায় বেশ ভুগছেন। কিডনির ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বর্ডার লাইন (ঝুঁকিপূর্ণ সীমা) অতিক্রম করেছে বেশ আগেই। এটা নিয়ন্ত্রণে রাখাই কষ্ট হচ্ছে। এখানে বয়স একটা বড় ফ্যাক্টর। প্রতিনিয়ত ডায়ালাইসিস দিতে হচ্ছে। ডায়ালাইসিস বন্ধ করলেই কিডনির অবস্থা অবনতি হয়।
সূত্র জানায়, বিএনপি চেয়ারপারসনকে সিসিইউতে নেয়ার পর থেকে প্রতিদিন নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। প্যারামিটারগুলো খারাপ আসছে না। তবে একেবারে ঝুঁকিমুক্তও হচ্ছেন না। সিসিইউতে এডভান্স ট্রিটমেন্ট দেয়া হচ্ছে। মেডিকেল বোর্ড প্রতি রাতে বৈঠকে বসে। যেখানে প্রত্যেকটি চিকিৎসক আলাদা রোগ নিয়ে আলোচনা করেন। রিপোর্ট দেখে কিছু ওষুধ বন্ধ করেন, আবার চালু করেন। কিছু ওষুধের মাত্রা কমান কিংবা প্রয়োজনে বাড়িয়ে দেন।
জানা গেছে, চিকিৎসকদের পরামর্শে গুলশানের বাসা থেকে প্রতিদিন খাবার পাঠানো হচ্ছে। সার্বক্ষণিক খালেদা জিয়ার সঙ্গে আছেন পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা, সৈয়দা শর্মিলা রহমান, গৃহপরিচারিকা ফাতেমা এবং স্টাফ রূপা আক্তার। বিএনপি চেয়ারপারসনের ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার, ভাইয়ের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা সার্বক্ষণিক পাশে আছেন। তাদের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কথা বলার চেষ্টা করেন খালেদা জিয়া।
আজ আসছে না এয়ার এম্বুলেন্স: সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নিয়ে যাওয়ার এম্বুলেন্সটি আপাতত ঢাকায় আসছে না। জার্মানিভিত্তিক এফএআই এভিয়েশন গ্রুপ স্থানীয় সমন্বয়কারী সংস্থার মাধ্যমে পূর্বের স্লট অনুমোদন প্রত্যাহারের আনুষ্ঠানিক আবেদন করেছে। সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ আবেদনটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। এতে করে আজ এয়ার এম্বুলন্সেটি আসবে না এবং আপাতত খালেদা জিয়ার বিদেশযাত্রা হচ্ছে না। এর আগে ওই সংস্থার আবেদনের প্রেক্ষিতে কাতার সরকারের ব্যবস্থা করা এয়ার এম্বুলেন্স মঙ্গলবার সকাল ৮টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করার অনুমতি নিয়েছিল। সেটি মঙ্গলবার সকাল ৮টায় অবতরণ ও একইদিন রাত ৯টার দিকে উড্ডয়নের অনুমোদন নিয়েছিল। সিভিল এভিয়েশনের দায়িত্বশীল সূত্র তথ্যটি নিশ্চিত করেছে।
শাহজালাল বিমানবন্দর সূত্র জানিয়েছে, এয়ার এম্বুলেন্সটি কাতার সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় জার্মানিভিত্তিক এফএআই এভিয়েশন গ্রুপ থেকে ভাড়া নেয়া হয়েছিল। এটি বোমবার্ডিয়ার চ্যালেঞ্জার ৬০৪ মডেলের একটি বিজনেস জেট, যা দীর্ঘ দূরত্বের মেডিকেল ইভাকুয়েশনের জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। চ্যালেঞ্জার ৬০৪ তার শক্তিশালী ট্রান্সকন্টিনেন্টাল সক্ষমতার জন্য পরিচিত, যা ঢাকা-লন্ডন মেডিকেল ট্রান্সফারের জন্য উপযোগী।