লোভাছড়া পাথর কোয়ারির খাদক তমিজ উদ্দিন। আওয়ামী লীগ নেতা ও বর্তমান চেয়ারম্যান। একাধিক মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি। চোরাকারবারিদের শেল্টার দিয়ে এবং পাথর লুটে গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। তার নাম আছে দুদকের তালিকায়। গণ-অভ্যুত্থানের পর একাধিকবার আলোচনায় এসেছেন তমিজ। তবুও তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরে। সেই তমিজ ফের এসেছেন আলোচনায়। এবার নবাগত ইউএনও’র সঙ্গে দেখা গেল তাকে। তার পাশে দাঁড়িয়েই বক্তৃতা করছেন ইউএনও মেহেদী হাসান শাকিল। এমন ঘটনায় ইউএনও’র সঙ্গে মতবিনিময় সভা বর্জন করেছেন বিএনপি-জামায়াতসহ কয়েকটি দলের রাজনীতিকরা। তমিজ উদ্দিন কানাইঘাটের লক্ষ্মীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান।
উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা। লোভাছড়া পাথর কোয়ারি লুটের নায়ক। শত শত কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। গত ৩রা ডিসেম্বর কানাইঘাট থানায় যোগদান করেন নতুন ইউএনও মেহেদী হাসান। যোগদানের মাত্র দুইদিনের মাথায় শুক্রবার বিতর্কিত ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি পাথরখেকো হিসেবে পরিচিত হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলার আসামি তমিজ উদ্দিন চেয়ারম্যানকে সঙ্গে নিয়ে লোভাছড়ার একটি মসজিদে নামাজের সময় বয়ান করেন। মসজিদে বক্তৃতা দেয়ার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় রাজনীতিকদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। নবাগত ইউএনওকে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ আখ্যায়িত করে কানাইঘাট থেকে প্রত্যাহারের দাবি তোলেন কেউ কেউ। বিষয়টি রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মাঝেও ক্ষোভের সঞ্চার করে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন- তমিজ ইউনিয়ন অফিসেও আসেন না।
তিনি গ্রেপ্তার এড়াতে তার নিজস্ব বাহিনীকে নিয়ে বেষ্টিত অবস্থায় বাড়িতেই বসবাস করেন। মাঝেমধ্যে তিনি সীমান্ত এলাকায়ও চলে যান। সিলেট থেকে কয়েক দফা আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালিয়েও পাননি। এদিকে- নবাগত ইউএনও নিজের কার্যালয়ে গত রোববার দুপুরে কানাইঘাটের স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের আয়োজন করেন। তবে ইউএনও’র সঙ্গে মতবিনিময়ে যাননি কোনো রাজনৈতিক নেতা। তারা সভা বর্জন করেন। অনুষ্ঠান কভার করার জন্য স্থানীয় সাংবাদিকরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। একপর্যায়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন ইউএনও। পরবর্তীতে কয়েকজন সাধারণ নাগরিক যোগ দেন এই সভায়। সভা বর্জনকারী দলগুলোর মধ্যে রয়েছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মতবিনিময় সভা বিএনপি কর্তৃক বয়কটের সিদ্ধান্ত নিশ্চিত করেন কানাইঘাট উপজেলার বিএনপি সভাপতি এবং সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মামুনুর রশীদ মামুন। তিনি জানিয়েছেন- নবাগত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান শাকিল কানাইঘাটে এসেই পলাতক স্বৈরাচারী ইউপি চেয়ারম্যান তমিজ উদ্দিনের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। এর প্রতিবাদেই রাজনৈতিক দলের নেতারা সভা বর্জন করেছেন। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে নিশ্চিত করেন উপজেলা জামায়াতের আমীর কামাল উদ্দিন। তিনি জানিয়েছেন- কানাইঘাটের সুধীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় না করে ইউএনও আগে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ নেতা তমিজ উদ্দিনের এলাকায় গিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন। এটা মেনে নেয়া যায় না। এর প্রতিবাদেই আমরা সভা বর্জন করার সিদ্ধান্ত নেই এবং বর্জন করা হয়েছে। এদিকে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রসঙ্গটি তার নজরে আনা হলে ইউএনও বলেন- তমিজ চেয়ারম্যান যে ফ্যাসিবাদের দোসর ও পলাতক আসামি- সেটা তাকে কেউ অবগত করেনি। না জেনেই তিনি ওখানে গিয়েছেন।