Image description

দেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের চাহিদা পূরণে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির কোনো বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। বাংলাদেশ এনার্জি কনফারেন্স ২০২৫-এর শেষ দিনে সোমবার তিনি বলেন, "এলএনজি আমদানির বিষয়টি কোনো পছন্দের ভিত্তিতে করা হয়নি, উপায় না থাকায় এ পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। যদি উপায় থাকত, তবে এলএনজি আমদানিকে সম্পূর্ণ বন্ধ করা যেত। হঠাৎ এটি বন্ধ করলে দেশ অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে, শিল্প বন্ধ হবে এবং রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।"

তিন দিনব্যাপী সম্মেলন রাজধানীর বাংলাদেশ সামরিক জাদুঘরে অনুষ্ঠিত হয়েছে। শেষ অধিবেশনে ফাওজুল কবির জানান, দেশের গ্যাস চাহিদা মেটাতে চেষ্টা করা হচ্ছে, যতোটা সম্ভব কম খরচে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। পাশাপাশি দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনে জোর দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, জ্বালানি রূপান্তরের নীতিমালা প্রণয়নের মধ্য দিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের বিকাশকে ত্বরান্বিত করা হচ্ছে।

তবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি সম্প্রসারণে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রধান বাধা হিসেবে উল্লেখ করেন ফাওজুল কবির। তিনি বলেন, "সরকার জ্বালানি রূপান্তর চায়। কিন্তু দুর্নীতিযুক্ত একটি ব্যবস্থার পরিবর্তে দুর্নীতিমুক্ত প্রক্রিয়ায় যেতে কিছু বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। বিশেষ করে জীবাশ্ম জ্বালানি ছাড়া যাদের লেনদেন থাকবে না, তারা প্রধান অন্তরায়।"

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বলেন, "রাতারাতি নবায়নযোগ্য জ্বালানি বাড়ানো সম্ভব নয়। গ্রিডের স্থায়িত্ব বজায় রাখতে হবে। সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে রপ্তানিমুখী কারখানার সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। দেশের প্রায় চার হাজার কারখানার প্রতিটি যদি ৫ মেগাওয়াট উৎপাদন যোগ করে, তবে ২০ হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতা অর্জন সম্ভব।"

সম্মেলনে নীতিনির্ধারক, রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিনিয়োগকারী, নারী, আদিবাসী, শ্রমজীবী, তরুণ-তরুণী, শিক্ষার্থী ও জ্বালানি প্রকল্পের ভুক্তভোগীসহ প্রায় ২৫০ জন প্রতিনিধি অংশ নেন। ১৮টি বেসরকারি সংগঠনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত তৃতীয় বাংলাদেশ জ্বালানি সম্মেলনে ৩টি পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন ও ১০টি কৌশলগত অধিবেশনে আলোচনা করে একটি ঘোষণাপত্র তৈরি করা হয়। শেষ অধিবেশনে ২২ দফা ঘোষণাপত্র পাঠ করেন বেসরকারি সংস্থা ক্লিনের প্রধান নির্বাহী ও বিডব্লিউজিইডি সদস্যসচিব হাসান মেহেদী।

সম্মেলনের ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৪-২৫ সালে এলএনজি আমদানি ১৩ শতাংশ বেড়ে প্রায় ৬১ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে। এলএনজি খাতে ৫,৫০০ কোটি টাকার ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। এতে নতুনভাবে কোনো এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ না করার ও ধীরে ধীরে আমদানির ওপর নির্ভরতা কমানোর পরিকল্পনা প্রণয়নের আহ্বান জানানো হয়েছে। এছাড়া শিল্প ও বাণিজ্য খাতে ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ সবুজ জ্বালানি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করা হয়েছে। আগামী বাজেটে নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য বিদ্যুৎ খাতের কমপক্ষে ৪০ শতাংশ বরাদ্দের দাবি করা হয়েছে।

আজ সকালের অধিবেশনে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতে ১৩ দফা দাবিসংবলিত একটি নাগরিক ইশতেহার উপস্থাপন করা হয়। উপস্থিত ছিলেন বিএনপি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণসংহতি আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নেতারা। ইশতেহার পাঠ করেন বিডব্লিউজিইডির নির্বাহী সদস্য মনোয়ার মোস্তাফা।