Image description

বিএনপির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুগপৎ আন্দোলনে ছিল বাম ও প্রগতিশীল ছয় দলের মোর্চা গণতন্ত্র মঞ্চ। তবে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে আসন ভাগাভাগিতে সময়ক্ষেপণের কারণে সেই ‘বন্ধুত্বে’ ফাটল ধরছে বলে জানা গেছে। এ নিয়ে বিএনপির সঙ্গে মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব তৈরি হয়েছে বলে স্ট্রিমকে জানিয়েছেন মঞ্চের অন্যতম দল বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকও।

আগামী বছর সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গত ৯ অক্টোবর ১৩৮ প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করেছিল গণতন্ত্র মঞ্চ। মোর্চাটির ছয় দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বগুড়া-২ আসনে, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ঢাকা-৮ আসনে, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনে, জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রব লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে, সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন ফেনী-৩ আসনে, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী হাসনাত কাইয়ূম কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে এবং ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলুকে জামালপুর-৫ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়।

এরপর চলতি নভেম্বর মাসের শুরুতে ২৩৭ আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করে বিএনপি। বাকি ৬৩টি আসন ফাঁকা রাখা হয় মিত্রদের জন্য। এরমধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চের একাধিক শীর্ষ নেতাদের আসনও রয়েছে। এসব আসনে আলোচনা করে প্রার্থী ঘোষণা করা হবে বলে জানায় বিএনপি। তবে তিন সপ্তাহ পার হলেও দলটি এখনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি। এ নিয়ে মূলত পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে উঠছে।

এরমধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চে শোনা যাচ্ছে ভাঙনের সুর। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না আসলেও এনসিপির সঙ্গে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন আলাদা জোটে যাচ্ছে বলে জোর আলোচনা চলছে। বিএনপির সঙ্গে আসন ভাগাভাগিতে ভালো কিছু পাওয়া যাবে না জেনে দলটি বের হয়ে যাচ্ছে বলেও গুঞ্জন রয়েছে।

বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি স্ট্রিমকে বলেন, ‘এখনো কোনো ডিসিশন (আসন ভাগাভাগি নিয়ে) হয়নি। ওনারা একটু লম্বা সময় নিচ্ছেন বলা যেতে পারে। কিছুটা দীর্ঘসূত্রিতা দেখছি। এতে মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব তৈরি হচ্ছে গণতন্ত্র মঞ্চ এবং অন্যান্য শরীকদের সঙ্গে। এটা খুব অনাকাঙ্ক্ষিত। কিন্তু এটা তৈরি হচ্ছে। উনারা জানিয়েছিলেন, পাঁচ-সাত দিনের মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে। তবে সেই সময় পার হয়ে গেছে।’

মঞ্চের আরেক দল গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে জোট নিয়ে আমরা এখনো অনিশ্চয়তায় আছি। দুই-তিন দিনের মধ্যে এ বিষয়ে আমরা কথা বলতে পারব।’ এর বাইরে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি।

বিএনপির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, শরিকদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির বিষয়টি দেখভাল করছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশারফ হোসেন ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। ইতোমধ্যে প্রাথমিক আলোচনা শেষ হয়েছে। শরিকদের কেউ কেউ ইতিবাচক সংকেতও পেয়েছেন।

তারা আরও জানান, গণতন্ত্র মঞ্চসহ অন্যান্য শরীকদের জন্য ২০ থেকে ২৫টি আসন ছাড়তে পারে বিএনপি। মিত্রদের গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থীদের বিষয়ে এখনো বিচার-বিশ্লেষণ করছে বিএনপি। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা, রাজনৈতিক অবস্থান ও সরকার গঠনের ক্ষেত্রে গুরুত্ব– এসব বিষয় সামনে রেখে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে।

এ বিষয়ে সমমনা জোটের সঙ্গে লিয়াজোঁর দায়িত্বে থাকা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন স্ট্রিমকে বলেন, ‘তাদের সঙ্গে বিএনপির আলোচনা হচ্ছে। কোনো একক সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আমরা জানি না।’

দীর্ঘসূত্রিতার কারণে কোনো দূরত্ব তৈরি হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মানসিক দূরত্ব হইলে কীভাবে হচ্ছে সেটি তো তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এগুলো এখন একটু কঠিন হয়ে যাচ্ছে।’