জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জামায়াতে ইসলামী সমমনা দলগুলোকে নিয়ে আসন সমঝোতার আলোচনা প্রায় চূড়ান্ত করেছে । যোগ্যতা ও সম্ভাবনার বিচারে সমমনা দলগুলো থেকে প্রার্থীরা কোন কোন আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন , সে হিসাবনিকাশও একেবারে শেষ পর্যায়ে । সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি মাসে না হলেও আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহেই এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে বলে জানা গেছে ।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই আসন সমঝোতার প্রক্রিয়া শেষ করার প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ । সমঝোতার বিষয়ে এখনো কিছু আলোচনা বাকি আছে জানিয়ে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন , “ আমরা তো আগেই নিজেদের প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছি । এখন যেহেতু অন্য কয়েকটি দলের সঙ্গে সমঝোতা করতে হচ্ছে ... এখানে আলাপ আলোচনার অনেক বিষয় আছে । ” এখন পর্যন্ত জামায়াতসহ সমমনা আটটি দল এক হয়ে যুগপৎ আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছে । এর মধ্যে ছয়টিই ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল ।
জামায়াত ছাড়া অন্য দলগুলো হলো— ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ , বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস , খেলাফত মজলিস , বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন , নেজামে ইসলাম পার্টি , জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি ( জাগপা ) ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি । নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই আট দলের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে আরও অন্তত দুই থেকে তিনটি দল । সব মিলিয়ে ১০ অথবা ১১ টি দলের মধ্যে আসন সমঝোতা হবে বলে জানা গেছে । ডিসেম্বরের প্রথম ভাগে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে । জামায়াত ও সমমনা দলগুলোর সূত্র বলেছে , এর আগেই সমঝোতার ভিত্তিতে প্রতিটি আসনের চূড়ান্ত
প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করবে তারা । সমন্বিত কৌশলে ভোটযুদ্ধে লড়ার পরিকল্পনা করছেন দলগুলোর নেতারা । এ জন্য জনপ্রিয়তা , নেতৃত্বের সক্ষমতা ও সর্বোপরি নির্বাচনে জিতে আসার মতো ব্যক্তিরা প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা । ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন বলেন , ‘কোন দলের কোন প্রার্থী কোন জায়গায় ভালো অবস্থানে আছেন ; সে বিষয়ে আমাদের আলোচনা, জরিপ চলছে । যে দলের প্রার্থীই হোক না কেন , আমরা এবার জোটের সর্বোচ্চসংখ্যক প্রার্থীকে জিতিয়ে সংসদে যেতে চাই ।'
জাগপার সহসভাপতি রাশেদ প্রধান আজকের পত্রিকাকে জানান , আটটি দলের নিজস্ব সর্বোচ্চ ফোরামে আলোচনার মাধ্যমে দলীয় প্রার্থী তালিকা তৈরি করা হচ্ছে । এরপরে সব দলের প্রার্থী তালিকা এক জায়গায় করে বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে । আরও দুই - তিনটি দলের সঙ্গে আলোচনা চলছে জানিয়ে রাশেদ প্রধান বলেন , ‘ চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের আগেই আট দল ১০ অথবা ১১ দলে পরিণত হতে পারে । আমরা আশা করছি তফসিলের আগেই সব চূড়ান্ত হবে । ' একই ধরনের পরিস্থিতি ও প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব জালালুদ্দীন আহমদ ।
আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, 'আরও কিছু দলও যোগাযোগ করছে, তাদেরও আমরা শরিক করব । এখন প্রতিটি দল যার যার মতো করে কোন কোন আসন নিয়ে সমঝোতা করতে হতে পারে , তার তালিকা তৈরি করছে । এই তালিকা করা অনেকের হয়ে গেছে , অনেকে এখনো করছে । এটা নিয়ে আমরা খুব দ্রুত বসব । তফসিল ঘোষণার আগেই চূড়ান্ত করার চিন্তা আছে । তবে কে কত আসনে প্রার্থী দেবে , সে বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি ।
সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বছরখানেক আগেই ৩০০ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করেছিল জামায়াত । তবে পরবর্তী সময়ে আমির ডা . শফিকুর রহমানসহ দলটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, ওই তালিকা চূড়ান্ত নয় । দলটির নীতিনির্ধারকেরা সমমনা দলের সঙ্গে জোট কিংবা সমঝোতার ইঙ্গিতও আগেই দিয়েছেন । দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার গত ৩ অক্টোবর খুলনায় এক সমাবেশে শরিকদের জন্য ১০০ আসন ছাড়ের কথা বলেছিলেন । যদিও তাঁর ওই বক্তব্যকে এখন ‘ ব্যক্তিগত ' বলে দাবি করা হচ্ছে জামায়াতের পক্ষ থেকে ।
শরিকদের জন্য ১০০ আসন ছাড়ের বিষয়ে মিয়া গোলাম পরওয়ারের বক্তব্যের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন , ‘ সমাবেশে তিনি যা বলেছেন , এমন কোনো বিষয়ে দলীয়ভাবে কোনো আলোচনা হয়নি । ’ এই মুহূর্তে আসন নিয়ে দেনদরবার চালিয়ে যাচ্ছে জামায়াতের সমমনা দলগুলো । তবে দলগুলোর দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন , সমঝোতার খাতিরে সর্বোচ্চ ছাড় দেওয়ার জন্য তাঁরা প্রস্তুত ।
জাগপার সহসভাপতি রাশেদ প্রধান গতকাল বুধবার বলেন , ‘ আমাদের দলের পক্ষ থেকে একক নির্বাচন করলে এবার ১০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার কথা ছিল । কিন্তু যেহেতু আসন সমঝোতা করা হচ্ছে , সর্বোচ্চ ছাড় দেওয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি । আমরা চারটি আসন চাইব বলে আশা করছি । অবশ্য এটা এখনো চূড়ান্ত নয় । কাল ( বৃহস্পতিবার ) আমাদের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একটা বৈঠক আছে , সেখানে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হতে পারে ।
'বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির মহাসচিব কাজী নিজামুল হক নাঈম আজকের পত্রিকাকে জানান , দলগুলোর প্রাপ্য আসনসংখ্যার বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত আলোচনা হয়নি । তাঁর দল থেকে তিন থেকে চারটি আসনে লড়ার সম্ভাবনা রয়েছে । এদিকে জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে নির্বাচনী জোট বা আসন সমঝোতা হলেও তা শুধু এই নির্বাচনেই সীমাবদ্ধ থাকছে না বলে জানা গেছে । স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও এই সমঝোতা বহাল থাকবে বলে জানিয়েছেন দলগুলোর নেতারা ।
এ বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন বলেন, ‘আমাদের এই সমঝোতা শুধু জাতীয় নির্বাচনেই নয়, স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও বহাল থাকবে । যে আসনে এক দল এমপি পাবেন , ওই আসনে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচন করবে অন্য দল । এ রকম প্রক্রিয়া একদম ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত প্রয়োগ করা হবে । ”