Image description

জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বড় পরিসরে প্রচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এর অংশ হিসাবে সেক্টরভিত্তিক অঙ্গীকার নিয়ে শিগগিরই মাঠে নামছে দলটি। এজন্য কেন্দ্রীয় ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সমন্বয়ে আসনভিত্তিক টিম গঠন করা হচ্ছে। রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে কী বাস্তবায়ন করতে চায়, কী পরিবর্তন আনবে, দলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পৃথক লিফলেটের মাধ্যমে জনগণের সামনে তুলে ধরবে। সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন নীতিনির্ধারক যুগান্তরকে বলেন, আগামী দিনে রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে দেশ পুনর্গঠনে প্রতিটি সেক্টরে কর্মপরিকল্পনা দেশবাসীর সামনে তুলে ধরবে বিএনপি। মোটাদাগে লিফলেটে দেশের উন্নয়নে বিএনপির কর্মপরিকল্পনা, নাগরিকদের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কী কী পদক্ষেপ নেবে, রাষ্ট্র মেরামতে ৩১ দফাসহ নানা প্রতিশ্রুতি তুলে ধরা হবে যেমন শিক্ষা, কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্য খাত, কৃষি ও খাদ্য, শিল্প খাত, ব্যবসা-বাণিজ্য, ক্রীড়া, প্রশাসন, দুর্নীতি প্রতিরোধসহ প্রতিটি সেক্টরকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা তুলে ধরে আলাদা লিফলেটের মাধ্যমে প্রচার করবে বিএনপি। সূত্রমতে এর মধ্য দিয়েই কেন্দ্রীয়ভাবে প্রচার ও গণসংযোগে নামার পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির। এছাড়া প্রতিটি এলাকায় সুবিধা-অসুবিধা আর জনগণের চাওয়া-পাওয়াকে প্রাধান্য দেওয়া হবে লিফলেটে। তরুণ প্রজন্ম ও নারী ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ বাড়ানোর জন্য লিফলেটে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। এসব লিফলেট দেশের প্রতিটি ঘরে পৌঁছে দেওয়ার জন্যও নেতাকর্মীদের প্রতি বিশেষ নির্দেশ থাকবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, বিএনপির মূল লক্ষ্য একটি স্থিতিশীল, সমৃদ্ধ ও সুখী বাংলাদেশ গড়ে তোলা, যেখানে নাগরিকরা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে না। নিরাপদ জীবনযাপন করতে পারবে, ব্যক্তিগত মর্যাদা ও সম্মান বজায় থাকবে এবং প্রত্যেকে তার ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান স্বাধীনভাবে পালন করতে পারবেন। বিএনপি ইতোমধ্যে ভঙ্গুর অর্থনীতি পুনর্গঠন, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা, নাজুক সামাজিক শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার, বিপুলসংখ্যক বেকার যুবকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বিজ্ঞান-প্রযুক্তিনির্ভর কর্মমুখী শিক্ষা চালুর জন্য ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে।

আমির খসরু বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সারা দেশের মানুষের জন্য বিনামূল্যে প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা চালু করবে। এ লক্ষ্যে বিএনপি এখন থেকেই পরিকল্পনামাফিক কাজ শুরু করেছে। বিএনপি প্রস্তুতি নিচ্ছে। ডে ওয়ান থেকে আমাদের পারফর্ম করতে হবে। এক কোটি মানুষকে চাকরি দেব, এটা আমরা হোমওয়ার্ক করেই বলেছি। দেশকে নিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে এবং তা বাস্তবায়ন করতে হবে।

রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। এতে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে বিএনপির রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হয়েছে স্থায়ী কমিটিতে। এক নেতা জানান, শিক্ষা খাতে পরিবর্তন আনার লক্ষ্য এ খাতে বাজেট বাড়ানো, স্কুল থেকেই ব্যবহারিক ও কারিগরি শিক্ষা চালুর পরিকল্পনা করছে বিএনপি। যেমন স্কুল পর্যায়ে আইটি, খেলাধুলা, আর্ট কালচার, ডেন্টাল হাইজিন, মেডিকেল টেকনিশিয়ান ও অন্যান্য কারিগরি শিক্ষা চালু। প্রাইমারি থেকে ইংরেজি ভাষার পাশাপাশি তৃতীয় ভাষা এবং হাইস্কুল থেকে আরও একটি ভাষা চালুর পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির। আরবি, জার্মান, ফরাসি, জাপানি ও চীনা ভাষা শেখার সুযোগ পাবেন শিক্ষার্থীরা। এর ফলে বিদেশে গিয়েও কর্মক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারবেন বলে মনে করছে দলটি। ক্যাম্পাসে মেধাভিত্তিক ছাত্র রাজনীতির সংস্কৃতি চালু ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা, হলের আবাসন সঙ্কট নিরাসন ও বসবাসের উপযোগী করা এবং লাইব্রেরিগুলোকে অনলাইন এবং অফলাইনে আধুনিকায়ন করা প্রতিশ্রুতি ভোটারদের সামনে তুলে ধরা হবে। নারী শিক্ষার প্রসার, দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা, স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বিএনপি। আলিবাবা, অ্যামাজনসহ বিশ্বে ই-কমার্সে বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানির পরিকল্পনা তুলে ধরা হবে লিফলেটে।

ওই নেতা আরও বলেন, তরুণ প্রজন্মের জন্য প্রতিটি জেলায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প স্থাপনে অর্থনৈতিক সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি এবং তারা নিজেরাই যাতে উদ্যোক্তা হয়ে লাখকোটি জনগণের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে। ১০ লাখের বেশি আউটসোর্সিং ফ্রিল্যান্সারদের লেনদেন নিরাপদে করতে জরুরি নীতিমালা প্রণয়ন এবং লেনদেন দ্রুত করতে পেপাল ও ওয়াইল্ড চালুর প্রতিশ্রুতি থাকবে লিফলেটে। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ১৮ মাসের মধ্যে এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান, পরিবেশ রক্ষায় খাল ও নদী খননের কর্মসূচি পুনরায় চালু করা, ৫০ লাখ ফ্যামিলি কার্ড চালু, পাঁচ বছরে পাঁচ কোটি গাছ লাগানো, চাঁদাবাজি ও দুর্নীতি দমনে বিশেষ পরিকল্পনার কথা লিফলেটে তুলে ধরবে বিএনপি।

এছাড়াও স্বাস্থ্য, কৃষি ও খাদ্য, পুষ্টি ও মানব উন্নয়ন, কৃষিভিত্তিক অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন, পরিবেশ ও টেকসই উন্নয়নসহ প্রতিটি সেক্টরের কর্মপরিকল্পনা লিফলেটে তুলে ধরা হবে। সূত্রমতে, প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির বিপরীতে সব মত ও পথের সমন্বয়ে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, বৈষম্যহীন ও সম্প্রীতিমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা; বিগত ১৫ বছরের অর্থপাচার ও দুর্নীতির অনুসন্ধান করে শ্বেতপত্র প্রকাশ এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ; পাচার করা অর্থ দেশে ফেরত আনার প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা; দেশের সবস্তরে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ নির্যাতনের অবসান ঘটানো; ‘ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার’ এ মূলনীতির ভিত্তিতে প্রত্যেক ধর্মের মানুষের নিজ নিজ ধর্ম পালনের পূর্ণ অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং কূটনীতিক সম্পর্কের সর্বক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্বার্থ, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়া হবে- লিফলেটে সাধারণ ভোটারদের কাছে এমন প্রতিশ্রুতি তুলে ধরতে পারে বিএনপি।

প্রার্থী পুনর্বিচেনার ব্যাপারে আলোচনা : অন্তত ৪০টি আসনে মনোনয়নবঞ্চিতদের বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও মিছিলের বিষয়টি নিয়েও স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা হয়। তখন কোনো কোনো সদস্য বলেন, এত বড় দলে কিছু আসনে এটা হবে স্বাভাবিক। অধিকাংশ আসনেই প্রার্থীরা এলাকায় গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয়। তবে কয়েকটি আসনে পুনর্বিবেচনা করা যেতে পারে। প্রয়োজন হলে চূড়ান্ত প্রতীক রবাদ্দের সময় প্রার্থী পরিবর্তন করা যেতে পারে। এছাড়া দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার সময়ই বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পরিষ্কারভাবে বলেছেন, এটা দলের প্রাথমিক সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা। প্রয়োজনে এ তালিকায় পরিবর্তন আসতে পারে।