Image description

ভাঙা আসবাবপত্র ছাড়াও বই, ব্যানার, লিফলেট সবই লণ্ডভণ্ড। ঢাকার তোপখানা রোডে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দৃশ্য এটি। গত ১২ নভেম্বর রাতে দ্বিতীয় দফায় হামলা-ভাঙচুর চালানো হয় এখানে। এর পর থেকেই পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে কার্যালয়টি।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও সুনসান নীরবতা। দলের কেন্দ্রীয় নেতা হাসানুল হক ইনুসহ অনেকেই কারাবন্দি। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর হামলা, মামলা কিংবা মবের শংকায় মাঠের রাজনীতিতে অনেকটাই নিষ্ক্রিয় দলটি।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের দপ্তর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, যদিও সারা দেশে আমাদের ১২টির অধিক অফিস বিভিন্ন গোষ্ঠীর দ্বারা দখল হয়েছে।

বেহাত হয়েছে। সারাদেশে আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বাড়িঘর, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে হামলা হয়েছে। ঘটনাগুলো আছে।
 
তার মধ্যেও আমরা আমাদের মতো করে নিজেদেরকে টিকিয়ে রেখে দলীয় কার্যক্রম চালু রেখেছে।

৫ আগস্টের পর থেকেই তালা ঝুলছে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন ও গণতন্ত্রী পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। অফিস খোলা থাকলেও দলীয় ব্যানার, পোস্টার সবই সরিয়ে রেখেছে জাতীয় পার্টি-জেপি। একই অবস্থা ১৪ দলের অন্য শরিকদের।

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য নুর আহমদ বকুল বলেন, আমাদের ১৪ দল এক্সিস্ট করে না।

ইন ফ্যাক্ট। ইন প্র্যাকটিস। তাহলে আমার অফিসটা কেন দখল করতে হলো? তা ছাড়া, আমরা তো এই সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে কোনো মিছিল-মিটিংয়ে যাইনি। দখলটা করল কে? ওই স্টেকহোল্ডার নামধারী।

প্রকাশ্যে তেমন তৎপরতা নেই বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল, কমিউনিস্ট কেন্দ্র, গণ আজাদী লীগ এবং গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টির মতো দলগুলোর। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে দলটির সঙ্গে যে রাজনৈতিক দলগুলো জোটবদ্ধ হয়ে এতদিন রাজনীতি করত, তারা বেশ সংকটে পড়েছে। কোনো দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় যেমন বেদখল, আবার অনেক দলের শীর্ষ নেতা বিভিন্ন মামলায় কারাগারে বন্দী। এমন প্রেক্ষাপটে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই দলগুলো অংশ নিতে পারবে কি না এই প্রশ্ন সামনে আসছে। সম্প্রতি ৪৭টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করেছে নির্বাচন কমিশন, যেখানে জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলীয় জোটে থাকা নিবন্ধিত ৬টি রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। কমিশনের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে যেমন আলোচনা হচ্ছে, তেমনই আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শরিক দলগুলোর অনেক নেতার বক্তব্য, প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে সমর্থন এবং জুলাই অভ্যুত্থানে দলগুলোর অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে৷ অতীত ভূমিকার কারণে ইসির সংলাপ বা আসন্ন নির্বাচনে এই দলগুলো যেন অংশ নিতে না পারে সেই দাবিও জানিয়েছে কয়েকটি রাজনৈতিক দল।

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেছেন, যারা এত মানুষ হত্যার প্রেক্ষাপট তৈরি করেছে, সেই দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশন কোনোভাবেই সংলাপে বসতে পারে না।

এমন প্রেক্ষাপটে কমিশনকে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলছেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য জেসমিন টুলি। তিনি বলছেন, অভ্যুত্থানের পরে গণতন্ত্রের পথে ফেরার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ আসন্ন নির্বাচন।

জেসমিন টুলি বলেন, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ, তাই আওয়ামী লীগ ইলেকশন আসতে পারবে না। সংলাপে তাকে ডাকার কোনো প্রয়োজন নেই৷ কিন্তু অন্য যে দলগুলো আছে, কিন্তু নিষিদ্ধ না, তাদের কার্যক্রম করার কোনো বাধা নেই। সেক্ষেত্রে তারা তো নির্বাচন করবে। যদি কেউ বলে যে, সে তো দোসর ছিল, কিন্তু দোসর হলেও তার কার্যক্রম থামায়নি কেউ। অতএব, সে তো এগুলো প্রাপ্য। আমার কাছে মনে হয় যে, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের জন্য সবার প্রতি সমআচরণ করাটা খুবই জরুরি।

এদিকে দলগুলোকে সংলাপে ডাকা হবে কি না বিষয়টি এখনও স্পষ্ট করেনি নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, নিবন্ধনের কাজটা এখনও শেষ হয়নি। শেষ পর্যায়ে। আমরা আশা রাখি, কিছুদিনের ভেতরে এটি হবে। কমিশন যদি মনে করে যে ওদেরসহ আবার ডাকার প্রয়োজন, সেক্ষেত্রে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে। এখনও এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। নিবন্ধিত দল হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়াটাই তো স্বাভাবিক।

বাংলাদেশে জুলাই অভ্যুত্থানের পর সংস্কার আলোচনায় একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বিষয়টি। আর সেটি নিশ্চিত করা নির্বাচন কমিশনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলেই মনে করা হচ্ছে।